দুবরাজপুরে আদালতে ধৃত গোলাপ শেখ। —নিজস্ব চিত্র
ইন্ডিয়ান অয়েলের পাইপলাইন থেকে তেল চুরির কাণ্ডে ধৃত গোলাপ খানকে ন’ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিল পুলিশ।
বুধবার ধৃতকে দুবরাজপুর আদালতে তুলে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল পুলিশ। সরকারি আইনজীবী মণিলাল দে বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্তের স্বার্থে এবং তেলচুরির চক্রের খোঁজ পেতে ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট অর্ণব রায় চৌধুরী ধৃতের ৯ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন। আগামী ২৯ তারিখ ধৃতকে আদালতে হাজির করানো হবে।’’ তিনি জানান, প্রেট্রোলিয়াম অ্যাণ্ড মিনারেল পাইপলাইন আইনের ১৫/১৬ ধারা এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্টের ধারা দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত গত ১৬ জুলাই তাঁদের হলদিয়া-বারাউনি ক্রুড অয়েলের পাইপলাইন থেকে তেল চুরি হচ্ছে বলে জানতে পারে রাষ্ট্রায়ত্ব তেল সংস্থা, ইন্ডিয়ান ওয়েল। খোঁজ নিতে গিয়ে সংস্থার আধিকারিকরা জানতে পারেন পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কের উপর জয়দের মোড়ের কাছাকাছি থাকা একটি ধাবা থেকেই ধান জমির নীচে পাইপ লাগিয়ে ক্রুড ওয়েলের পাইপ লাইন থেকে তেল চুরির পাকাপাকি বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। মূল পাইপের সঙ্গে রীতিমতো ঝালাই করে ২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাগিয়ে এবং তাতে ভাল্ব ফিট করে ট্যাঙ্কার ট্যাঙ্কার তেল চুরি হচ্ছিল।
সংস্থার দায়ের করা আভিযোগের ভিত্তিতে দুবরাজপুর থানা মঙ্গলবার গাঁড়া গ্রাম থেকে ধাবা মালিকের ছেলে গোলাপ খানকে ধরে। ধাবা মালিক পালাতক। পুলিশের ধারনা শুধু ওই ধাবা মালিক বা তাঁর ছেলে নয় তেল সংস্থার পাইপ লাইন থেকে এ ভাবে তেল চুরির সুদক্ষ কৌশেলের পিছনে একটা বিরাট চক্র কাজ করছে। সেই কারণেই আদালতের কাছে ধৃতের পুলিশি হেফাজত চান ঘটনার তদন্তকারী অফিসার তথা দুবরাজপুর থানার ওসি শেখ মহম্মদ আলি। যদিও খুব আন্তরিক ভাবে পুলিশ তদন্ত না করলে কাজের কাজ কিছু হবে না জানিয়েছেন তেল সংস্থার এক আধিকারিক। অভিজ্ঞতাও সেকথাই বলছে।
তেল সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে বছর খানেক আগেও খয়রাশোল থানা এলাকায় ওই একই পাইপলাইন থেকে তেল চুরির তদন্ত শুরু করার দিন দুয়েকের মধ্যেই পুলিশের উপর ভরসা না রেখে ঘটনার তদন্তভার নেয় সিআইডি। গত ২০১৫ সালের ৪ জুন লোকপুর থানা এলাকায় তেল চুরির অভিযোগ জানিয়েছিলেন সুজিত কুমার কিস্কু নামে তেল সংস্থার এক আধিকারিক। তরপরেই সিআইডির এসওজি দায়িত্ব নেয়। আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু ঘোষ তদন্তভার নেওয়ার পর মোট পাঁচজন গ্রেফতার হয়। পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি কলকাতার একবালপুরে। একজন হাওড়ার, অন্যজন পড়শি ঝাড়খণ্ডের বাগডহরি থানা এলাকার। মামালটি এখনও সিউড়ি আদালতের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের এজলাসে বিচারাধীন। জাল কতদূর বিস্তৃত সেটা আগের তেলচুরির ঘটনায় ধৃতদের বাড়ির অবস্থান থেকেই স্পষ্ট— বলছেন সিআইডির এক আধিকারিক। দুবরাজপুরের ঘটনাও কি সিআইডির হাতে যেতে পারে?
পুলিশ কর্তারা বলছেন, তদন্তের গতিপ্রকৃতির উপর সবটা নির্ভর করছে।
ঘটনা হল, যে তেল নিয়ে এত কাণ্ড, সেই ‘ক্রুড অয়েল’ থেকে যতই গ্যাসোনিন পেট্রোল, ডিজেল কেরোসিন পিচ ও অন্যান্য পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য তৈরি হোক, অপরিশোধিত অবস্থায় তা কাজে লাগানো সম্ভব নয়। তাহলে চক্রের লোকজন ওই তেল ঠিক কোথায় পাচার করে সেই প্রশ্নের উত্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ। জেলাপুলিশের কর্তারা বলছেন, ‘‘সবে তো তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’’ শোনা যাচ্ছে, ঝাড়খণ্ডের তেল মাফিয়ারা এই তেল পাচার চক্রের মূল হোতা। তারাই বিভিন্ন সময় এই কাজে দক্ষদের কাজে লাগিয়ে তেল চুরি এবং সেই তেল যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ওই চক্রই ধাবা মালিকদের মতো ব্যক্তিদের খোঁজে। কারণ জালিয়াতির অঙ্ক যে কোটিতে!
লোকপুরে ও দুবরাজপুরের দুটি ক্ষেত্রেই খুব দক্ষ লোকজন এ কাজে যুক্ত তা মানছে পুলিশও।
গোলাপ খানের পরিবারের লোকরা অবশ্য তাঁকে দোষী মানতে নারাজ। পরিজনের দাবি, ‘‘বেশ কিছুদিন থেকে নাকি হোটেলটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। গোলাপ খুব ভাল ছেলে। কিছু জানে না। জানেন না ধাবা মালিক আরাফত খানও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy