Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Bankura Flood Like Situation

ডিভিসিই দায়ী, তোপ মন্ত্রী মলয়ের

মঙ্গলবার রাত প্রায় ৯টা নাগাদ ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯২৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে।

মলয় ঘটক।

মলয় ঘটক। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১৮
Share: Save:

পুজোর মুখে বাঁকুড়া জেলার একাংশের বানভাসি পরিস্থিতির জন্য দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনকেই (ডিভিসি) দায়ী করলেন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক। বুধবার বাঁকুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে এসে বুধবার মন্ত্রী মলয় ঘটক অভিযোগ করেন, “প্রতি বছর ডিভিসি রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ে দেয়! এর ফলে প্রতি বছরই দক্ষিণ দামোদর ছুঁয়ে যাওয়া বিভিন্ন জেলা বাঁকুড়া, হুগলি-সহ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষকে ত্রাণশিবিরে নিয়ে যেতে হয়। ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। কখন ডিভিসি জল ছাড়বে, তা কেউ জানতে পারে না। তারা লিখিত ভাবে কিছুই জানাচ্ছে না। প্রশাসনের কাছেও খবর থাকে না।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপির সুভাষ সরকার বলেন, “একেবারেই ভিত্তিহীন কথাবার্তা। কারণ ডিভিসি কতটা জল ছাড়বে তা ঠিক করার জন্য যৌথ কমিটি রয়েছে। সেখানে রাজ্যের প্রতিনিধিও রয়েছেন।”

মঙ্গলবার রেকর্ড মাত্রায় জল ছাড়া হয়েছে ডিভিসির মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে। মঙ্গলবার রাত প্রায় ৯টা নাগাদ ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯২৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে। এর ফলে শালতোড়া, বড়জোড়া, মেজিয়া, ইন্দাস, পাত্রসায়র ও সোনামুখীর মানাচর এলাকার বহু গ্রামে জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, বাঁকুড়া জেলায় ২০৯টি শিবির করে প্রায় ১২ হাজার ৭০৯ জন মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে কেউ অসুস্থ হলে যাতে দ্রুত পরিষেবা দেওয়া যায়, সে জন্য বিশেষ মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যায় জমি ডুবে যাওয়ায় চাষে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ঘরবাড়ির ক্ষতিও হয়েছে প্রচুর। এ দিন বাঁকুড়ায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে ঘরবাড়ির ক্ষতিপূরণ যাতে পুজোর আগেই করা হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা ফসল বিমার আওতায় ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী। এ দিন মন্ত্রী নিজে বড়জোড়া ব্লকের বিভিন্ন ত্রাণশিবির ঘুরে দেখেন। পরে তিনি বলেন, “ত্রাণ শিবিরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের যথাযথ পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোনও সমস্যা নেই।”

মেজিয়ার বানজোড়া ও জালালপুরে বন্যায় প্রচুর ধরবাড়ির ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে। বাসিন্দারা জানান, গ্রামে সদ্য মনসাপুজো উপলক্ষে অনেকের বাড়িতেই আত্মীয়েরা এসেছেন। এই পরিস্থিতিতে বন্যা হওয়ায় তাঁরাও আটকে পড়েছেন। এ দিন ওই দু’টি গ্রাম পরিদর্শনে যান জেলাশাসক সিয়াদ এন, জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি, বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী প্রমুখ। অরূপ বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।”

অন্যদিকে ত্রাণ শিবিরে যেতে না পেরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। সোনামুখীর মানাচর রাঙামাটির বধূ অলকা প্রামানিকের দাবি করেন, “প্রশাসনের কেউ আসেনি। ত্রাণ সামগ্রীও পাঠানো হয়নি। উনুন জলের তলায়। শুধু মুড়ি খেয়ে রয়েছি। বাড়ির একাংশও ভেঙে গিয়েছে।’’ ওই গ্রামের বাসিন্দা গোপাল মাঝি বলেন, “গ্রাম জল থই থই করছে। সাপ ঘুরছে। খাবার জল নেই। বাড়িতে রান্না বসানোর অবস্থা নেই। পঞ্চায়েতের লোকজন এসে ত্রাণ দেবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু কখন আসবে, জানি না।”

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) প্রসেনজিৎ ঘোষ দাবি করেন, “প্রশাসন উদ্ধার কাজে যায়নি এটা ভিত্তিহীন। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের কর্মীরা সোনামুখী ব্লকের প্রতিটি মানাচরের গ্রামে একাধিকবার গিয়েছেন। কিন্তু কয়েকটি গ্রামের কিছু মানুষ নিজেদের সম্পত্তি ছেড়ে ত্রাণশিবিরে যেতে রাজি হননি। তাদের জন্য গ্রামেই খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাকরা হয়েছে।”

সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাঙামাটি, মহেশপুর, রণপুর, বাঁধগড়া, বোঁদলহাটির বাউরিপাড়ায় প্রচুর মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। আরও ত্রিপলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

বড়জোড়ার রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা রতন হালদার, অনিমা রায়েরা বলেন, “আমরা নদীর পারে চাষ করেই সংসার চালাই। আনাজ, ধান খেত জলের তলায় চলে গিয়েছে। প্রশাসন আমাদের ক্ষতিপূরণ না করলে সমস্যায় পড়ব।”

তবে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “জল ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। জল ধীরে ধীরে গ্রাম থেকে নামছে। ত্রাণশিবির চলছে। তবে অনেকেই বাড়িও ফিরে গিয়েছেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

bankura Damodar Valley Corporation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy