মেঘলা আবহাওয়ার সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি। তাপপ্রবাহের পরেই শুক্রবার থেকে আচমকা আবহাওয়ার পরিবর্তনে স্বস্তি ফিরেছে বীরভূমে। রবিবার ফের রোদ উঠেছে। তবে এই বৃষ্টি যে শুধু জেলার বাসিন্দাদের স্বস্তি দিয়েছে তাই-ই নয়, আলু বাদ দিয়ে অন্য ফসলেরও উপকার করেছে। কৃষি ও উদ্যানপালন আধিকারিকদের মত, মুগ, তিলের মতো ফসলের সঙ্গে এমন হালকা বৃষ্টি আমের জন্যও ভীষণ ভাল।
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পেরিয়ে চতুর্থ সপ্তাহে এখন আমের মুকুল গুটিতে পরিণত হয়েছে। এই পর্যায়ে হালকা বৃষ্টি আশীর্বাদের মতো বলেই জানাচ্ছেন জেলা উদ্যানপালন দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) সুবিমল মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘গাছে যখন মুকুল থাকে বা গুটি ধরে তখন নিয়ম হল গাছের গোড়ায় হালকা সেচ দেওয়া ও গাছের উপরে জল ছিটিয়ে দেওয়া। রাঢ়বঙ্গের জেলা বীরভূমের চাষিরা আম গাছে সেচ দেওয়ার কাজটা সাধারণত করেন না, সেই কাজটাই বৃষ্টি করল।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এতে যে মুকুল বা গুটি ঝরে যাওয়ার যাবে, বাকি যে গুটিগুলি থাকল সেগুলি ঝরে না গিয়ে পরিণত হবে।’’
গত বছর আমের ‘অফ ইয়ার’ ছিল। ফলন ভাল হয়নি। এক বছর অন্তর ভাল ফলন হয় বলে প্রচলিত ধারণা রয়েছে। তবে এ বারও সব গাছে সমান ভাবে মুকুল ধরতে দেখা যায়নি। কিছু গাছে মুকুল এলেও আম্রপালি প্রজাতির আম গাছে এ বার মুকুল আসেনি বললেই চলে। দুবরাজপুরের সারিবাগানের কাছাকাছি ২৭৫টি আমগাছের বাগান রয়েছে কাজল মণ্ডলের। প্রায় সবই আম্রপালি প্রজাতির। কিন্তু অধিকাংশ গাছেই এ বার মুকুলের দেখা মেলেনি। কাজল বলছেন, ‘‘১০ বছর ধরে ফলন হচ্ছে। এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল।’’ সহমত পোষণ করেছেন জনগরের তালপুকুর গ্রামের আমচাষি মদন ঘোষ। তাঁর ১৩০০ আম গাছের বাগানে অবশ্য আম্রপালি ছাড়াও অন্য প্রজাতির আম রয়েছে। মদন বলছেন, ‘‘আম্রপালিতে এ বার আম ধরেনি। তবে বৃষ্টি অন্য প্রজাতির আম গাছে কাজে লাগবে তাতে সন্দেহ নেই।’’
জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহের মতো আমচাষে বিখ্যাত না হলেও বীরভূমেও আমের চাষ ভাল ভাবেই হয়। মানও বেশ ভাল। সরকারি ভাবে তো বটেই, জেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বেশ কিছু বাগান তৈরি হয়েছে। সেগুলি মূলত রাজনগর, মহম্মদবাজার ও দুবরাজপুরে। আম চাষের এলাকাও বাড়ছে। বাড়িতে বাড়িতেও আম গাছের সংখ্যা ও ফলন কম হয় না। গত বার ‘অফ ইয়ার’ যাওয়ার পরে এ বার আমের ফলন ভাল হবে সেটাই প্রত্যাশিত ছিল বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। তবে মার্চের শেষ ভাগে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে কতটা ফলন হবে। সুবিমল মণ্ডল বলছেন, ‘‘সব মুকুল থেকে গুটি ধরবে না। আবার সব গুটি পরিণত হবে না। তবে বৃষ্টি গুটির গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)