গঙ্গাধরের পরিবারকে আশ্বস্ত করছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র।
পরিচয়পত্র না দেখাতে পারায় কাজের খোঁজে গিয়ে প্রায় চার বছর অসমের ডিটেনশন শিবিরে বন্দি ছিলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রাধানগরের সারদাপল্লির যুবক গঙ্গাধর পরামানিক। সম্প্রতি তিনি বাড়ি ফিরতেই তাঁর পরিচয় তৈরি করে দেওয়া-সহ এলাকাতেই তাঁর কাজের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ারের নির্দেশে শুক্রবার গঙ্গাধরের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করলেন মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত, এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খান, বিডিও (বিষ্ণুপুর) শতদল দত্ত, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মথুর কাউড়ি, রাধানগর পঞ্চায়েতের প্রধান সুচিত্রা সমাদ্দার প্রমুখ। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বলেন, ‘‘গঙ্গাধর ও তাঁর পরিবারের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ভাবে আমরা সাহায্য করব। তিনি যাতে পরিচয়পত্র পান, প্রশাসন তা দেখছে।’’
কয়েক বছর আগে ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন গঙ্গাধরের মা ভারতী পরামানিক। এখন ঘরের অ্যাসবেস্টসের ছেঁদা দিয়ে জল পড়ে মেঝেতে। তবে প্রশাসনের তরফে এ দিন ত্রিপল পেয়েছেন। তাঁদের আর্থিক সহায়তা করা পাশাপাশি, দেওয়া হয় শুকনো খাদ্য সামগ্রী, পোশাক, মাস্ক, হাতশুদ্ধি প্রভৃতি। তাঁদের পরিবারের জমিজমা-সহ নানা ব্যাপারে খোঁজ-খবর করেন আধিকারিকেরা।
পরে মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) বলেন, “মূলত গঙ্গাধরের বাড়িতে বৈধ পরিচয়পত্র কী আছে, কী নেই, সেটাই সরেজমিনে দেখা হয়েছে। তাঁর নিজের ও মায়ের রেশন কার্ড রয়েছে। স্কুলে ভর্তির রেজিস্টার থেকে মিলেছে তাঁর জন্মের তারিখ। মা-বাবার ভোটের পরিচয়পত্রও পাওয়া গিয়েছে। তা দিয়েই গঙ্গাধরের ভোটের পরিচয়পত্র করার জন্য ফর্ম পূরণ করানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, গঙ্গাধরের মা ভারতীদেবীর বার্ধক্য ভাতা, স্বাস্থ্যসাথী ও আধার কার্ড তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই আধার কার্ড ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হলেই জব-কার্ডে কাজ পাবেন গঙ্গাধরও। সব শুনে ভারতীদেবী বলেন, ‘‘ছেলেকে পেয়েছি। এতেই খুশি। প্রশাসনও পাশে রয়েছে। ভরসা পেলাম।’’
রাধানগর বোর্ড প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপকুমার কুম্ভকার বলেন, “পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত গঙ্গাধর আমাদের স্কুলেই পড়াশোনা করেছে। ও বরাবরই শান্ত স্বভাবের। বরং, এখনই দেখছি, কিছু কথা বলছে। প্রশাসন তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোয় আমরা খুশি। আমরাও চাই না, ও আর বিপদে পড়ুক।” চুপচাপ স্বভাবের গঙ্গাধরকে এখন কাছে পেলেই ডিটেনশন শিবিরের অভিজ্ঞতা জানার জন্য ছেঁকে ধরছেন গ্রামের লোকজন।
প্রায় ১৬ বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হঠাৎ ট্রেনে চড়ে গঙ্গাধর হাজির হন অসমের গুয়াহাটি রেল স্টেশনে। এক ব্যক্তির সহায়তায় পাশের এক হোটেলে থাকা-খাওয়ার শর্তে থালা-বাসন ধোয়ার কাজ পান। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বৈধ পরিচয়পত্র না থাকার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। সেই থেকে তিনি অসমের গোয়ালপাড়া ডিটেনশন শিবিরে ‘বিদেশি’ হিসেবে বন্দি ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি নজরে পড়েন ‘সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ (সিজেপি) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। তাঁদের সহায়তায় শর্ত সাপেক্ষে জামিন নিয়ে মঙ্গলবার বাড়ি ফেরেন গঙ্গাধর। ইতিমধ্যেই বাবাকে হারিয়েছেন।
প্রশাসনিক কর্তাদের পাশে পেয়ে এ দিন গঙ্গাধর বলেন, “এক জন ভারতীয় তথা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হয়েও প্রমাণের অভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে কয়েকটা বছর আমার নষ্ট হয়েছে। তাই বৈধ প্রমাণ আমাকে জোগাড় করতেই হবে।” এ দিনই তাঁকে ভোটার কার্ডের আবেদনে সই করান দায়িত্বে থাকা কর্মী মালা মোদক। গঙ্গাধর তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন— ‘‘দিদি কার্ডটা পেলেই আমি পুরোপুরি ভারতীয় হয়ে যাব তো?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy