বিষ্ণুপুর কে জি পলিটেকনিক কলেজ থেকে ভোট কেন্দ্রের পথে , আইঞ্চিবাড়ী গ্রামের বুথ।
বামেদের ভোট ব্যাঙ্ক কি ফিরবে? গতবারের ফল কি ধরে রাখতে পারবে বিজেপি? অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত ঠেকিয়ে তৃণমূল কি সাফল্যের মুখ দেখবে? মাহাতো অধ্যুষিত এলাকায় কতটা প্রভাব ফেলবেন কুড়মি সমাজের সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা? এই চার প্রশ্নকে সামনে রেখেই আজ শনিবার, ভোটে যাচ্ছে পুরুলিয়া।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়া জেলায় ৩২.৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে চমক দেয় বিজেপি। গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯৪৪ আসনের মধ্যে ৬৪৫ আসন জেতে তারা। তৃণমূল পেয়েছিল তার থেকে ১৯৪টি বেশি আসন। জেলার রাজনেতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এ বার পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে।
গতবার পঞ্চায়েতে ১৫.৭৬ শতাংশ ভোট পাওয়া বামফ্রন্ট কয়েক বছর ধরে লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে নিজেদের ধারভার বাড়িয়ে এ বার শক্তি পরীক্ষায় নেমেছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের পর্ষবেক্ষণ, গতবার বামেদের ভোটের বড় অংশ গেরুয়া শিবিরের দিকে যাওয়ায় সুফল পেয়েছিল বিজেপি। এ বার সেই ভোট উল্টোমুখী হলে গতবারের হিসেব উল্টে যেতে পারে।
সিপিএমের এ বারের তাস ৩০ শতাংশ তরুণ প্রার্থী। দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ও সমিতিতে লাগাতার আন্দোলন করে এ বার নির্বাচনে লড়ছি আমরা। লুটেরাদের বদলে ‘মানুষের পঞ্চায়েত’ গড়তে চাইছি আমরা।’’
তবে বাম বা তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। তাদের দাবি, গতবার হিংসাদীর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের মধ্যেও তারা যথেষ্ঠ ভাল ফল করেছিল। এ বার সন্ত্রাস করার মতো ক্ষমতা হারিয়েছে তৃণমূল। ফলে বিজেপির ফল আরও ভাল হবে। দলের জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার দাবি, ‘‘বামেরা কোনও ‘ফ্যাক্টর’ হবে না। গতবারের পঞ্চায়েতের প্রাপ্ত ভোটও বিধানসভায় ধরে রাখতে পারেনি বামফ্রন্ট। মানুষ বুঝেছে পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সীমাহীন দুর্নীতি রুখতে একমাত্র বিজেপি পারবে।’’
অন্য দিকে, তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিরোধীদের আশায় জল ঢালতে চলেছে কুড়মি সমাজের সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। পঞ্চায়েতে প্রায় ৫০০ আসন, পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রায় ১০০ এবং জেলা পরিষদে ২৪টি আসনে প্রার্থী রয়েছে কুড়মি সমাজের। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই কুড়মি সম্প্রদায়ের বড় অংশের সমর্থন বিজেপির দিকে যাচ্ছে। যে কারণে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলকে দুই লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হারতে হয়েছিল। বিধানসভাতেও ছ’টি আসনে হেরেছি আমরা। এ বার কুড়মি সমাজ নিজেরাই প্রার্থী দেওয়ায় বিজেপিরই ভোট কমবে।’’
কুড়মি কাঁটায় ‘বিদ্ধ’ হয়ে পঞ্চায়েত ও সমিতির বহু আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি কংগ্রেস। বামেদের সঙ্গেও তাদের সার্বিক জোটও হয়নি। ফলে গতবারের প্রাপ্ত ৭.৬০ শতাংশ ভোট ও প্রাপ্ত আসন ধরে রাখাটা কংগ্রেসের পক্ষেও চ্যালেঞ্জ। তবে দলের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতি ও কেন্দ্রের স্বৈরাতান্ত্রিক শাসের বিরুদ্ধে কংগ্রেসই বিকল্প।’’
স্বস্তিতে কি তৃণমূল? টিকিট না পেয়ে তৃণমূলের অনেকে নির্দল হিসেবে ভোটে নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে ৬২ জনকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, প্রার্থী হতে না পারা নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে ‘সহবত’ শেখাতে গোপন প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তৃণমূলের গত দশ বছর ধরে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের ক্ষমতার থাকায় প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া। কুড়মি সমাজের তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার আহ্বানও ঘাস-ফুল শিবিরের উদ্বেগের অন্যতম কারণও বটে। তাতে আমল দিতে নারাজ জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক জনমুখী প্রকল্পের সুফল সবাই পাচ্ছেন। তাই গতবারের তুলনায় আরও ভাল ফল করবে তৃণমূল।’’
তবে বাসিন্দাদের প্রত্যাশা, যেই জিতুক, শুরু হোক বন্ধ থাকা একশো দিনের কাজ, মিলুক বকেয়া মজুরি। চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তিন-চার কিলোমিটার দূর থেকে পানীয় জল বয়ে আনার কষ্ট থেকে মুক্তি মিলুক।এই সমস্ত দাবি পূরণের প্রত্যাশা নিয়েই ভোটের লাইনে দাঁড়াচ্ছে পুরুলিয়ার গ্রামাঞ্চল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy