জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ভাবেই কাজ সেরে ফিরছেন কৃষি শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার মল্লারপুরে জাতীয় সড়কের ধারে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
বন্ধ ১০০ দিনের কাজ। এলাকায় অন্য কাজও নেই। তাই বোরো চাষের মরসুমে ধান পোঁতার জন্য গ্রামের অনেকে মাড়গ্রাম এলাকায় কাজে যান। আট ঘণ্টা কাজ করে মেলে ৪০০-৪৫০ টাকা। সঙ্গে খাওয়া। রামপুরহাট থানার চিতুড়ি গ্রামের দক্ষিণপাড়া ও ইস্কুলপাড়ার ১৫ জন মঙ্গলবার ভোরে এ কাজের জন্যই বেরিয়েছিলেন। কারণ, ভোর ভোর না গেলে কাজ মেলে না। যাওয়ার পথেই তাঁদের মোটরচালিত ভ্যানে পিক-আপ ভ্যানের ধাক্কায় রামপুরহাট থানার মনসুবা মোড়ে মৃত্যু হল ওই দলের চার খেতমজুর মহিলার।
এই মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। তাঁর দাবি, কেন্দ্র ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’ ১০০ দিনের বকেয়া এবং কাজ বন্ধ রেখেছে বলে টানাটানির সংসারে মহিলাদেরও বাইরে কাজ খুঁজতে যেতে হচ্ছে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি।
এ দিন চিতুড়ি গ্রামের তিন জন পুরুষ ও ১২ জন মহিলা মাড়গ্রাম এলাকার খরায় ধান পোঁতার জন্য বেরিয়েছিলেন। এই দলে থাকা মামনি লেট, মঞ্জু লেট, পরী লেটের স্বামীরা কাজ করতে পারেন না। মৃত রাখি সর্দারের সামনে মেয়ের বিয়ে। আর দিদি বাড়ি থেকে কাজে গিয়েছিলেন কাষ্ঠগড়া গ্রামের চুমকি ডোম। তাঁরও মৃত্যু হয়েছে।
চিতুড়ির বাসিন্দা সন্ন্যাসী লেট, সুনীতি লেটরা বলছিলেন, ‘‘গ্রামে এমনিতেই কাজ নেই। ১০০ দিনের কাজ থাকলে গ্রামেই দিনমজুরি করে সংসার চলে যেত। এখন সেটাও বন্ধ। তাই গ্রামের মহিলাদেরও সংসার চালাতে ধান পোঁতার কাজে যেতে হচ্ছে।’’
গ্রামবাসীরা জানান, মামনির স্বামী ছোটন বছর আটেক আগে অসুস্থ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। তাঁদের দুই মেয়ে। তাই মামনি কাজ না করলে সংসার চলবে না। মঞ্জুর স্বামী লক্ষ্মীকান্ত দৃষ্টিহীন। তাঁর পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। অন্য দিকে, ফাল্গুনে রাখির মেয়ের বিয়ে। তাই স্বামী সোমনাথের সঙ্গে ১২ দিন ধরে ধান পোঁতার কাজ করছিলেন। বেড়াতে এসেও দিদির বাড়িতে বসে না-থেকে দুই সন্তানকে রেখে মাড়গ্রামে কাজে গিয়েছিলেন চুমকি। আর ফিরলেন না।
জেলা সভাধিপতি কাজল শেখের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্র ১০০ দিনের মজুরি বাবদ প্রাপ্য টাকা থেকে রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে। বাংলার মানুষকে ভাতে মারার চেষ্টা করছে। ১০০ দিনের কাজ যদি চালু থাকত, তা হলে গরিবদের গ্রাম ছাড়িয়ে দূরে অন্য ব্লকে খাটতে যেতে হত না।’’ তাঁর দাবি, বাইরে কাজ করতে গিয়েই অকালে চারটে প্রাণ চলে গেল। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানাই। কিন্তু, এর সঙ্গে ১০০ দিনের কাজ বন্ধের সম্পর্ক নেই। আসলে ওরা ধান কাটা, ধান রোপণ করার কাজকেও ১০০ দিনের কাজের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে টাকা লুট করতে চাইছে। এ সব দুর্নীতির জন্যই তো ইডির অভিযান চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy