রাজগ্রামে বন্ধ পাথর খাদানের ছবি। মুরারই ১ ব্লকে ডেপুটেশনের ছবি।
পাথর বহনের খরচ ঘিরে খাদান ও ক্রাশার মালিকদের সঙ্গে ডাম্পার মালিকদের বিবাদের জেরে কুড়ি দিন ধরে বন্ধ রয়েছে রাজগ্রাম পাথর শিল্পাঞ্চল। তার ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক এবং ট্রাক ও ডাম্পার চালক, খালাসি। পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাবদ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সরকারেরও। এখনও পর্যন্ত শিল্পাঞ্চল খোলার বিষয়ে উদ্যোগ হয়নি বলেই অভিযোগ শ্রমিকদের।
এই পরিস্থিতিতে পাথর শিল্পের সঙ্গে যুক্ত চারটি সংগঠনের নেতা ও সদস্যেরা শুক্রবার মুরারই ১ ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান। পরে ব্লক প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দেন। উপস্থিত ছিলেন, আইএনটিউসি-র জেলা সভাপতি মৃণালকান্তি বসু, এসউসি-র জেলা সম্পাদক আয়েশা খাতুন, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দুকড়ি রাজবংশী ওএবং ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটির সদস্য দীপক চট্টোপাধ্যায়। মৃণালকান্তি বলেন, ‘‘ ক্রাশার মালিক ও ডাম্পার মালিকদের মধ্যে সমস্যার জন্য শ্রমিকেরা কেন রোজগারহীন হবেন? দ্রুত শিল্পাঞ্চল খোলার দাবি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পাথর শিল্পাঞ্চল না-খোলা হলে বড় আন্দোলন শুরু হবে।”
মুরারইয়ের বিধায়ক মোশারফ হোসেন বলেন, “জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুয়ারে সরকার হওয়ায় আধিকারিকেরা ব্যস্ত আছেন। শ্রমিকদের কথা ভেবে দ্রুত সমস্যা সমাধান করা হবে।” বিডিও (মুরারই ১) বীরেন্দ্র অধিকারী বলেন, “শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে খাদান ও ক্রাশার চালু করার দাবি জানানো হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশ মতো ক্রাশার ও ডাম্পার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সমাধান করা হবে।”
সমস্যা কোথায়?
ক্রাশার ও খাদান মালিকদের অভিযোগ, স্থানীয় ডাম্পার মালিক অ্যাসোসিয়েশন মালিকেরা খাদান থেকে ক্রাশার পর্যন্ত পাথর নিয়ে যাওয়ার খরচ বাড়াতে বলেছিল। ডাম্পার মালিকরা খাদান থেকে বোল্ডার তুলে ক্রাশারে ফেলার জন্য টন পিছু ৮০ টাকা ভাড়া নিতেন। সেই ভাড়া দ্বিগুণ (২০০ টাকা) করে দেওয়ায় সমস্যা হয়েছে বলে অভিযোগ। ক্রাশার মালিকেরা সেই টাকা দিতে রাজি না-হওয়ায় ডাম্পার অ্যাসোসিয়েশন কাজ বন্ধ করে দেয়। অন্য দিকে, ডাম্পার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ক্রাশার ও খাদান মালিকেরাই হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। দু’পক্ষই জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে।
দুই মালিক পক্ষের টানাটানিতে সমস্যায় পড়েছেন কয়েক পাথর শ্রমিক। অথচ এখানকার দিনমজুরির উপরে নির্ভর করে তাঁদের পরিবার চলে। কুড়ি দিন ধরে পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ হয়ে থাকায় খুবই সমস্যায় তাঁরা। পাথর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক আব্দুল রহমান, কুদ্দুস আলিরা বলেন, ‘‘এতদিন ধরে ক্রাশার ও খাদান বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। অনেক শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে চলে গেছেন। এই ভাবে বন্ধ থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে!’’
রাজগ্রাম ট্রাক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মফিজুল ইসলামের দাবি, “শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ ডাম্পার মালিকের গাড়ির কাগজ ঠিক নেই। তাঁদের যে টাকা দেওয়া হচ্ছে তা যথেষ্ট। এই ভাবে পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এলাকার বহু ট্রাক মালিক ও চালক-খালিস ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সঙ্গে শ্রমিকেরাও।’’ তিনি জানান, ট্রাক মালিকেরা বাধ্য হয়ে গাড়ি নলহাটি, রামুরহাট ও মহম্মদবাজার পাথর শিল্পাঞ্চলে পাথর বোঝাইয়ের জন্য পাঠাচ্ছেন। কারণ, গাড়ি বসিয়ে রাখলে ঋণের কিস্তির টাকা জমা পড়বে না।
রাজগ্রাম ক্রাশার ও খাদান মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসগর আলি গাজলুর অভিযোগ, এক শ্রেণির ডাম্পার মালিকের জন্যই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পাঞ্চল বন্ধ হওয়ার ফলে শ্রমিক থেকে মালিক সকলেই সমস্যায় পড়েছেন। লিখিত ভাবে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সমস্যার সমাধান করলে শিল্পাঞ্চল খুলতে কোনও সমস্যা হবে না।
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডাম্পার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আসরোপ শেখ। তাঁর দাবি, কয়েক জন জন ক্রাশার মালিক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন ডাম্পার মালিকদের টন পিছু ৮০ টাকার বেশি ভাড়া যদি কোনও ক্রাশার মালিক দেন, তা হলে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি তিন মাস সেই ক্রাশার বন্ধ করে দেওয়া হবে। সপ্তাহে একবার একটি ডাম্পার খাদান থেকে ক্রাশারে বোল্ডার ফেলার বরাত পায়।ক্রাশার মালিকেরা টন পিছু ১৬০ টাকার বেশি ভাড়া দিতেন। কিন্তু, এই বৈঠকের পরে ক্রাশার মালিকেরা বোল্ডার ভাড়া কমিয়ে দেন। ফলে ডাম্পার মালিকেরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন বলে আসরোপের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা খাদান বা ক্রাশার বন্ধ করিনি। শুধু ডাম্পার বন্ধ করে দিয়েছি। ডিজেলের দাম বেড়েছে। চাকা ও যন্ত্রাংশের খরচ বেড়েছে। ক্ষতি বাড়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy