বিষ্ণুপুর মেলার ভার্চুয়াল উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: শুভ্র মিত্র ।
কলকাতা থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বরাবরের মতো এ বারও উদ্বোধনের আগে বর্ণাঢ্য মিছিল ঘুরল শহরের পথে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন, প্রাচীন যুগ থেকেই বিষ্ণুপুরের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এই মেলায় রাজ্য পর্যটন দফতর থেকেও ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। বিষ্ণুপুর বরাবরই বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান। মন্দির, টেরাকোটার কারুকার্য, পোড়ামাটির ঘোড়া, বালুচরি শাড়ি যা জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্য এগুলো সব বিষ্ণুপুর মেলার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে।’’
মমতার সংযোজন, “বিষ্ণুপুর এবং তার আশপাশের আদিবাসী ভাইবোনদেরও হস্তশিল্পের মাধ্যমে আমরা এই মেলার সঙ্গে যুক্ত করছি। পর্যটনের দিক থেকে এই মেলার গুরুত্ব অনেকখানি। কেবল বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকেও এই মেলায় মানুষ আসেন।”
বরাবর বিষ্ণুপুর মেলা ২৩-২৭ ডিসেম্বর হয়ে আসছে। এ বারই ব্যতিক্রম, শুরু হল ২১ ডিসেম্বর। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন রাজ্যের অন্য কয়েকটি কর্মসূচির সঙ্গে বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধন করবেন বলে নির্দিষ্ট দিনের দু’দিন আগেই এ বছর মেলার সূচনা হল। জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই মেলার দিনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আখেরে লাভ হবে বলে দাবি করছেন।
যদিও হস্তশিল্পী থেকে শহরের হোটেল ব্যবসায়ীদের একাংশ হঠাৎ করে মেলা শুরুর দিন এগিয়ে আনায় কার লাভ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের দাবি, অন্যবার মেলা উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই জমে ওঠে। কিন্তু এ বার মেলা এগিয়ে আনার খবরের প্রচারে ঘাটতি থাকায় সেই ভিড় পাওয়া যায়নি। উদ্বোধনের সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আমন্ত্রণ পেয়ে ভিড় করলেও, সন্ধ্যার পরে তার অনেকটাই কেটে যায়।
উপযুক্ত প্রস্তুতি ছাড়া সাত তাড়াতাড়ি মেলা উদ্বোধন করা নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। মেলায় সব ক’টি স্টলের পরিকাঠামোও এদিন পর্যন্ত গড়া হয়নি। রামানন্দ মঞ্চ লাগোয়া মাঠে বেশ কিছু স্টলে এ দিন সন্ধ্যাতেও বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়নি। মোবাইল ফোনের আলো জ্বেলে জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে দোকানিদের।
একটি খাদির জিনসপত্র বিপণীর স্টলের বিক্রেতা লুতফা বেগম বলেন, “স্টলে এখনও আলো আসেনি। ক্রেতারা এসে ঘুরে যাচ্ছেন। আগেও এই মেলায় এসেছি। শুরু থেকেই যে জমাটি ভাব থাকত, এ বার সেটা নেই। হয়তো শুক্রবার থেকে ভিড় বাড়বে।”
বিষ্ণুপুর হোটেল-লজ মালিকদের সংগঠনের পক্ষে অসিত চন্দ্র বলেন, “পর্যটকদের বেশিরভাগের বুকিং ২৩ ডিসেম্বর থেকে নেওয়া হয়েছে। এতদিন ওই দিন থেকেই মেলা শুরু হয়েছে। হঠাৎ করে দু’দিন মেলা এগিয়ে এলেও আমাদের বিশেষ লাভ হল না।”
উদ্বোধন দেখতে আসা বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা বিজন ঘোষ, সুপ্রিয় পাঠকেরা বলেন, “প্রতি বছরই মেলার প্রথম দিন আমরা আসি। এ বার কেমন যেন একটা ছন্ন ছাড়া ভাব দেখছি।’’ যদিও তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ দাবি করেন, “মেলা দু’দিন আগে শুরু হওয়ায় কেনাবেচার বাড়তি সুযোগ পাচ্ছেন বিক্রেতারা। পর্যটকদের সমাগমও এর ফলে বাড়বে।” তবে মেলার সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত ব্যক্তিরা ঘনিষ্ঠ মহলে জানাচ্ছেন, মেলার দিন বাড়ায় বাজেটেও চাপ পড়তে পারে।
এ দিন মেলার উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি, জেলা সভাধিপতি অনুসূয়া রায়-সহ জেলার তৃণমূল বিধায়ক তন্ময় গোস্বামী, অলক মুখোপাধ্যায়, অরূপ চক্রবর্তী, মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু, হরকালী প্রতিহার, জেলা শাসক সিয়াদ এন, জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy