Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

স্বামীর প্রয়াণে ভেঙেছে জুটি, চতুর্থবার ভোটে নেই মাধুরী

হেতমপুরের টিনের চাল মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে প্রৌঢ়া মাধুরী বলছিলেন, ‘‘হারলেও মনে হতো জেতা হারা জীবনের অঙ্গ।

স্বামী অজয় বাগদির সঙ্গে মাধুরী। ফাইল চিত্র

স্বামী অজয় বাগদির সঙ্গে মাধুরী। ফাইল চিত্র senguptadayal@gmail.com

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩ ০৮:০০
Share: Save:

কখনও জয়ের মুখ দেখেননি তাঁরা। তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াটা নেশায় পেয়ে বসেছিল দুবরাজপুরের হেতমপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা অজয় বাগদি ও তাঁর স্ত্রী মাধুরীর। হারজিত নয়, প্রান্তিক ওই দম্পতির কাছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটাই ছিল সম্মানের। তাঁদের উৎসাহ দিতেন এক শিক্ষক। বছর দুই আগে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। সেই শিক্ষকও প্রয়াত হয়েছেন। তাই এ বারে আর ভোটে লড়ছেন না মাধুরী।

হেতমপুরের টিনের চাল মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে প্রৌঢ়া মাধুরী বলছিলেন, ‘‘হারলেও মনে হতো জেতা হারা জীবনের অঙ্গ। জিততে পারলে মানুষের হয়ে কাজ করব। এ বার দাঁড়াতে চেয়েছিলাম নিজের জন্যই। কিন্তু স্বামী নেই, কে প্রস্তাবক হবেন? তা ছাড়া লোকবল অর্থবল কিছুই যে নেই।’’ মাধুরী জানান, তাঁর শরীর অসুস্থ। সরকারি বাড়িও পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘মাসে ১ হাজার টাকা সরকারি ভাতা পাই। রাজ্য সরকারের যে রেশন কার্ড আছে সেটাও এপিএল। মাসে মাত্র ২ কিলো চাল পাই। শাক তুলে, মাছ ধরে পেট চালাতাম। জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় সেটাও গিয়েছে।’’ আক্ষেপ নিয়েই প্রৌঢ়া মাধুরী বললেন, ‘‘এ বার হেতমপুর পঞ্চায়েতের ১১ নম্বর আসনটি তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত। স্বামী বেঁচে থাকলে এ বারটা অন্য রকম হত।’’

হেতমপুরের ১১ নম্বর সংসদের বাসিন্দারা বলছেন, এর আগে দাঁড়িয়ে তিন বার হারতে হয়েছে ওঁদের। এমনকি প্রতি বারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রতি বার সিপিআইএমএল (লিবারেশন) সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে অজয় অথবা তাঁর স্ত্রী ভোটে লড়তেন। মহিলা সংরক্ষিত আসন হলে দাঁড়াতেন মাধুরী। না হলে নিজেই লড়তেন দিনমজুর অজয়। কিন্তু অজয়ের প্রয়াণে জুটি ভেঙে যাওয়ায় ভোটে লড়ার ইচ্ছেয় ছেদ টানতে হয়েছে বলে মনখারাপ মাধুরীর।

গত পঞ্চায়েত ভোটেও অবশ্য লড়া হয়নি ওঁদের। মনোনয়ন দিতে গিয়ে ব্লক অফিসের দরজা থেকে ফিরে এসেছিলেন। গত বার গোটা পঞ্চায়েতে একজন বিরোধীও প্রার্থী দিতে পারেনি আগের বার। বিরোধীদের দাবি, দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবেই বিরোধীরা কেউ মনোনয়ন দিতে পারেননি। এ বার অবশ্য শাসক বিরোধী মিলিয়ে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। মাধুরী ভোটে লড়লে চতুর্মুখী লড়াই হতে পারত।

বৃহস্পতিবার মনোনয়নের শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর সেই সুযোগ আর রইল না। এলাকাবাসী বলছেন, হেতমপুর কলেজের এক শিক্ষক ওই প্রান্তিক দম্পতিকে ভোটে লড়ার সাহস জুগিয়েছেন এতদিন। তিনিও প্রয়াত হয়েছেন। মাধুরী বলছেন, ‘‘মাস্টারমশাই বেঁচে থাকলে হয়তো ভোটে লড়া যেত।’’

এত দিন যে রাজনৈতিক দলের সমর্থনে তাঁরা প্রার্থী হতেন দম্পতি সেই সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর জেলা সম্পাদক শৈলেন মিশ্র বলেন, ‘‘অজয়, মাধুরীর সাহস ছিল। আমরা শুধু পাশে ছিলাম। মাঝে আমাদের দলের লোকজন গিয়ে ওঁদের হয়ে প্রচার করতেন। এ বার যোগাযোগ করা হয়ে উঠে নি। একটাই চাওয়া থাকবে পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় যারাই আসুক মাধুরীর মতো মানুষদের যেন তাঁরা দেখেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

WB Panchayat Election 2023 Hetampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy