প্রতীকী ছবি।
দু’দিন আগে সকাল ১০টা নাগাদ অপরিচিত নম্বর থেকে একটা ফোন পেয়ে খানিকটা থতমত খেয়ে দিয়েছিলেন দুবরাজপুর ব্লকের শীলা রায় ( নাম পরিবর্তিত)। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে ওই মহিলার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘দিদি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন?’ সামলে নিয়ে শীলাদেবী জানান, বাড়ি পেয়েছেন। এবং সেটা তৈরিও।
রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার পেয়েছেন কিনা জানতে চেয়ে দিন তিনেক আগে একই রকম ফোন পেয়েছেন খয়রাশোলের বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের বধূ রিমা দে (নাম পরিবর্তিত)। উত্তরে রিমা জানান, গ্যাস সংযোগ পেয়ে রান্নায় সুবিধা হয়েছে। তবে দূর থেকে গ্যাস সিলিন্ডার আনতে হয়।
শুধু শীলা বা রিমারা নন, আবাস যোজনায় ঘর, শৌচাগার, উজ্জ্বলা যোজনায় রান্নার গ্যাসের মতো নানা ‘কেন্দ্রীয়’ প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া দুবরাজপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বসবাসকারী এমন অনেকেই ফোন পেয়েছেন বিজেপির আইটি সেল থেকে। বিজেপি সূত্রে খবর, নানা কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তা তো বটেই, মিস্ড কল দিয়ে বিজেপি-র সদস্যপদ নিয়েছেন যাঁরা, এমন দেড় থেকে দু’হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলে ভোট প্রচারের অভিনব কৌশল নিয়েছে বিজেপি আইটি সেল। সিউড়ির নির্বাচনী কার্যালয় থেকে ১০ জন তরুণ কর্মীকে এই কাজে লাগিয়েছে দল। বিধানসভা ধরে ধরে নম্বরের তালিকা প্রস্তুত করাই আছে। ওই কর্মীদের কাজ, সকাল ১০ থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তালিকা ধরে সেই সব নম্বরে ফোন করে বিজেপি-র হয়ে ভোটের প্রচার চালানো।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জেলা বিজেপি নেতাদের দাবি, নির্বাচন ঘোষণার আগে আগে সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তারা মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাপত্র পেয়েছেন। কিন্তু এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে, যেগুলি আদতে কেন্দ্রীয় অথচ উপভোক্তারা জানলেন, তা রাজ্যের। সেই ভুল ভাঙিয়ে ‘সত্যিটা’ জানাতেই এমন উদ্যোগ। একই সঙ্গে দলের হয়ে ভোটের প্রচারও হয়ে যাবে ওই ফোনকলের মাধ্যমে।
কী বলা হবে ফোন করে, সেটাও ঠিক করা আছে। কোনও উপভোক্তাকে ফোন করে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন কিনা, এটা জানার পরে বিজেপি-র আইটি সেল থেকে বলা হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি , জেলা পরিষদ এবং রাজ্যে ক্ষমতায় না থেকেও নরেন্দ্র মোদী আপনাদের এত সুবিধা দিয়েছেন। ফের তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে ভোটটা যেন বিজেপি প্রার্থীকেই দেওয়া হয়। আরও কী প্রকল্পের সুবিধা ওই উপভোক্তা পেতে পারেন, সেটাও বলা হচ্ছে। শুধু কথা বলা নয়, নম্বরটি হোয়াটস অ্যাপ সংযুক্ত নম্বর হলে এর পর থেকে নিয়মিত দলের প্রচার ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ছবি ভিডিও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি আইটি সেলের দায়িত্ব থাকা কৃশাণু সিংহ, চন্দন মণ্ডল, সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রজিৎ দাসেরা বলছেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত মোবাইল নয়, দলের দেওয়া সিম ব্যবহার করেই বিরামহীন ‘কল’ করা হচ্ছে। এতে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে।’’ তাঁরা জানালেন, সিউড়ি থেকে প্রচার চলছে বীরভূম কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা এলাকার উপভোক্তা এবং মিস্ড কল দিয়ে দলের সদস্যপদ নেওয়া মানুষজনের মধ্যে। আপাতত দুবরাজপুর বিধানসভা এলাকায় এই ফোন-প্রচার শেষ হয়েছে। ধাপে ধাপে বাকি কেন্দ্রেও হবে। কিছু ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে বলেও দল সূত্রের খবর। শাসকদলের নেতা-কর্মীরা হলে কেউ কেউ দু’কথা শুনিয়েও দিচ্ছেন আইটি সেলের কর্মীদের। তবে মোটের উপরে ইতিবাচক সাড়া মনিলছে বলেই বিজেপি নেতাদের দাবি।
তৃণমূল অবশ্য এই প্রচার নিয়ে চিন্তিত নয়। জেলার এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘সারা বছর মানুষের পাশে না থেকে ফোন করেই যদি ভোট মিলত, তা হলে তো সকলেই তাই করত!’’ পক্ষান্তরে বিজেপি জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যে যা খুশি বলতেই পারেন। কিন্তু, ফোন করে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে সত্যি কথা জানানো আদৌ কাজ করছে কিনা, ফল প্রকাশের পরই বোঝা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy