প্রতীকী ছবি
দুধ অত্যাবশ্যক পণ্যের আওতায় পড়লেও, ‘লকডাউন’-এর আগের সে বাজার আর নেই বলে আক্ষেপ করছেন পুরপলুয়া ও বাঁকুড়া জেলার দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, অনেকে বাড়িতে দুধ নেওয়া বন্ধ করেছেন। মিষ্টির দোকানও সে ভাবে না খোলায় ছানা বিক্রি মার খাচ্ছে। এই অবস্থায় গরুর খাবারের খরচ জোগাড় করা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে তাঁদের দাবি। সমস্যার সমাধান চেয়ে পুরুলিয়া জেলার গোপালকদের জন্য গো-খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা চেয়ে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন ‘পুরুলিয়া জেলা যাদবসভা’।
রেশনের মাধ্যমে সরকারি অনুদানে গো-খাদ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী, প্রাণিসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী, জেলাশাসক ও জেলার জনপ্রতিনিধিদের কাছে আর্জি জানিয়েছে ‘বাঁকুড়া জেলা যাদবসভা’। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’
সংগঠনের দাবি, পুরুলিয়া জেলায় ৭০ হাজার মানুষ গোপালনের সঙ্গে যুক্ত। শুধু ওই সংগঠনেই দৈনিক ৪০ হাজার লিটারের বেশি দুধ উৎপাদন হয়। সংগঠনের জেলা সম্পাদক বাণীব্রত মণ্ডলের কথায়, ‘‘যাঁরা বাড়িতে দুধ কিনতেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের অনেকেই দুধ নিচ্ছেন না। মিষ্টির দোকানেও দুধ বিক্রি কার্যত বন্ধ। প্রচুর দুধ নষ্ট হচ্ছে। দাম কমিয়েও গোপালকেরা তাঁদের দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। পরিচিত মানুষজনদের অনুনয়-বিনয় করে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। দুধ থেকে খোয়া ক্ষীর, ছানা, দই ইত্যাদি তৈরি করে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন গোপালকেরা।’’ তিনি জানান, অসংখ্য চায়ের দোকান দুধ নিত। সে সব এখন বন্ধ। ঝাড়খণ্ডে দুধের বাজার থাকলেও সেখানে রফতানি বন্ধ রয়েছে।
বাঁকুড়া জেলা যাদবসভার সভাপতি সব্যসাচী মণ্ডলের দাবি, সারা জেলায় প্রতিদিন দু’লক্ষ লিটারেরও বেশি দুধ উৎপন্ন হয়। যার মধ্যে বাঁকুড়া সদর মহকুমায় প্রায় এক লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। খাতড়া ও বিষ্ণুপুর মহকুমা এলাকায় পঞ্চাশ হাজার লিটার করে দুধ হয়। কিন্তু বর্তমানে দুধ বিক্রি না হওয়ায় রুজিতে টান পড়েছে তাঁদের। অর্থাভাবে গো-খাদ্য কিনতে পারছেন না অনেকে। তিনি বলেন, ‘‘রেশনের মাধ্যমে সরকারি অনুদানে গো-খাদ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা সংগঠন ভাবে জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিকদের কাছে আর্জি জানিয়েছি।’’
পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের জোড়থোল গ্রামের গোপালক জলধর মণ্ডল দুধ থেকে মিষ্টি তৈরি করে জেলা সদর শহরের বাজার-সহ লাগোয়া কিছু দোকানে মিষ্টি সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন চার কুইন্টাল দুধ উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া, স্থানীয় গোপালকদের কাছ থেকে আরও পাঁচ কুইন্টাল দুধ নিতাম। এখন বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। স্থানীয় গোপালকদের দুধ নেওয়া আমি বন্ধ করে দিয়েছি।’’
মানবাজারের গোলকিডি গ্রামের গোপালক শত্রঘ্ন গোপ বলেন, ‘‘বাড়িতে ২২টি গরু ও ১২টি মোষ রযেছে। দুধ হয় ২০০ লিটার। প্রতিদিনের খরচ সামলাতে পারছি না। বাড়ি বাড়ি ঘুরে কম দামে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে।’’বাঁকুড়া জেলার গোপালকদেরও একই অবস্থা।
তবে ‘বাঁকুড়া জেলা কংসাবতী মিল্ক ইউনিয়ন’ বিভিন্ন জায়গা থেকে আগের মতোই দুধ কিনছে বলে দাবি করেছেন ওই দুগ্ধ সমবায়ের ডিরেক্টর বোর্ডের সদস্য মথুর কাউড়ি। তিনি দাবি করেন, ‘‘গোড়ার দিকে সাময়িক কিছু সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু যাঁরা কংসাবতী ইউনিয়নে দুধ বিক্রি করেন, তাঁদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’ বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, ‘‘গোপালকদের দাবি খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy