Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
বিএড নিয়ে চক্রের হদিস
Education

ডিগ্রি যাচাই করতে চিঠি কমিশনকে

উপাচার্যের সই জাল। জাল করা হয়েছে পরীক্ষা নিয়ামক এবং রেজিস্ট্রারের সই-ও। ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বি এড)-এর শংসাপত্র, মার্কশিট এবং রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে এমন জালিয়াতির একের পরে এক উদাহরণ পেয়ে রাজ্য স্কুল এবং কলেজ সার্ভিস কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়।

জাল: ভুয়ো ডিগ্রির তালিকা হাতে রেজিস্ট্রার। —নিজস্ব চিত্র।

জাল: ভুয়ো ডিগ্রির তালিকা হাতে রেজিস্ট্রার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ০১:৪১
Share: Save:

উপাচার্যের সই জাল। জাল করা হয়েছে পরীক্ষা নিয়ামক এবং রেজিস্ট্রারের সই-ও। ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বি এড)-এর শংসাপত্র, মার্কশিট এবং রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে এমন জালিয়াতির একের পরে এক উদাহরণ পেয়ে রাজ্য স্কুল এবং কলেজ সার্ভিস কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি পাঠানো সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড শংসাপত্রের ভিত্তিতে কাউকে চাকরি দেওয়ার আগে যেন যাচাই করিয়ে নেওয়া হয়, ডিগ্রিটি আদৌ বৈধ কি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কয়েক মাস আগে তথ্য জানার অধিকার আইনে শংসাপত্র, মার্কশিট এবং রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের প্রতিলিপি পাঠিয়ে কয়েকজন জানতে চান তাঁদের ডিগ্রি বৈধ কি না। দেখা যায়, সব ক’টিই ভুয়ো। তার পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ ধরনের এত চিঠি আসতে থাকে যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘ফাঁপরে’ পড়েন। দিন কয়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ওয়েবসাইটে নাম, রোল নম্বর এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করে ভুয়ো বিএড ডিগ্রি প্রাপ্তদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সংখ্যাটা এখনও পর্যন্ত ৭১।

নচিকেতাবাবু বলেন, ‘‘ব্যাপারটা নিয়ে তদন্ত করতে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।’’ পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি, কী হয়েছে।’’

এ পর্যন্ত মেলা জাল শংসাপত্রগুলিতে পুরুলিয়ার পাড়ার পাহাড়িগোড়া, মানবাজার ২ ব্লকের দিঘির দু’টি বেসরকারি বিএড কলেজ এবং পুরুলিয়ার সরকারি বিএড কলেজের নাম মিলেছে। রেজিস্ট্রার জানান, পাহাড়িগোড়া ও দিঘির বেসরকারি বিএড কলেজগুলি সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত। কলেজগুলি বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়েছে, তাদের রেজিস্ট্রেশন-তালিকা, হাজিরা খাতা বা অন্য কোনও নথিতে ওই পড়ুয়াদের নাম নেই।

তা হলে কী ভাবে হল জালিয়াতি?

বীরভূমের মুরারইয়ের বাসিন্দা এক ‘প্রতারিত’ যুবক জানান, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত শহরে একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।

সংস্থাটি তাঁকে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের বি এড পাঠ্যক্রমে পড়ানোর কথা বলে এবং সে জন্য কয়েক দফায় মোট ৭৯ হাজার টাকা নেয়। ক্লাস এবং পরীক্ষা নেওয়ার বন্দোবস্ত ছিল বারাসাতে। পুরুলিয়ায় গিয়ে মার্কশিটও হাতে পান তিনি। কিন্তু পরে পরিচিতদের সূত্রে তাঁর কানে আসে, এ ভাবে মার্কশিট পেলেও অনেকে ঠকেছে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নিজের রোল নম্বর দিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে নাম দেখতে না পেয়ে যুবকটি বোঝেন তাঁকে ঠকানো হয়েছে। তাঁর দাবি, কেন এমন হল, জানতে চাওয়া হলে বারাসতের সংস্থাটি তাঁকে সদুত্তর দিতে পারেনি। আপাতত ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মুরারইয়ের ওই যুবক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশের কাছে গেলে টাকা ফেরত পাওয়ার আশা নেই। তাই আদালতে গিয়েছি।’’ বারাসতের ওই সংস্থার তরফে জিয়াউল রহমান পরিচয় দিয়ে ফোনে এক ব্যক্তির দাবি, ‘‘আমরা বিএড পড়াই না। এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই। আমরা শুধু পঞ্চম-সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট টিউশন দিই। আপনারা ভুল করছেন।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপকরঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘‘যাচাই করে দেখা গিয়েছে, মার্কশিট, সার্টিফিকেটে পরীক্ষা নিয়ামক, রেজিস্ট্রার এবং আমার সই স্ক্যান করে বসানো হয়েছে। আমাদের ধারণা, শংসাপত্র জাল করার একটি চক্র এই কাণ্ড করেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Education Fake Degrees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy