Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Teacher's Day Special

অবসরের পরেও সাত বছর ধরে পড়াচ্ছেন কাবেরী

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েদের পড়াশোনার জন্য শহরের সবচেয়ে পুরনো এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। স্থায়ী ও পার্শ্ব শিক্ষিকা মিলিয়ে শিক্ষিকার সংখ্যা ১৭।

দুবরাজপুর গার্লসে ক্লাস নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা কাবেরী যশ।

দুবরাজপুর গার্লসে ক্লাস নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা কাবেরী যশ। —নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৯
Share: Save:

ছাত্রীদের তিনি ভালবাসেন। তাদের কাছে এলে মন ভাল হয়ে যায়। তাই ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে দুবরাজপুর গার্লস স্কুলে তাঁর অবসর রয়ে গিয়েছে শুধুই খাতায়-কলমে। সহ শিক্ষিকার পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরেও দুর্গাপুরের বাড়ি থেকে ৬৩ কিমি দূর স্কুলে এসে ক্লাস নিচ্ছেন কাবেরী যশ। বিনা পারিশ্রমিকে।

আজ, মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের আগে অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘যতদিন স্কুলে আসব ততদিন আমি মানসিক ভাবে ভাল থাকব। ভুগোলের শিক্ষিকা হিসেবে ১৯৭৯ সাল থেকে এই স্কুলে যোগ দিই। তারপর একটানা সাড়ে তিন দশক এই স্কুলে কাটিয়েছি। স্কুল, সহকর্মী ছাত্রী সকলের প্রতি টান অনুভব করি।”

সেই টানেই অবসরের পরও আর ঘরে বসে থাকতে পারেনিনি দিদিমণি। তাতে মুশকিল আসান হয়েছে স্কুলেরও। এই মূহূর্তে মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলে কোনও ভূগোলের দিদিমণি নেই। অবসরের পরে সেই অভাব স্বেচ্ছাশ্রমে ঢেকে দিয়েছেন কাবেরীদেবী। সহকর্মীরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। সম্মানও অটুট। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চাঁপা দে বলছেন, ‘‘ওঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। অবসরের পরও তিনি যে ভাবে ক্লাস নিচ্ছেন তাতে ভূগোল শিক্ষিকার অভাব অনেকটা দূর হয়েছে। এটা দৃষ্টান্ত।’’

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েদের পড়াশোনার জন্য শহরের সবচেয়ে পুরনো এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। স্থায়ী ও পার্শ্ব শিক্ষিকা মিলিয়ে শিক্ষিকার সংখ্যা ১৭। ছাত্রী শিক্ষিকার অনুপাতে যা খুবই কম। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির কাজ সামলে দূর্গাপুর থেকে এতটা আসেন ‘কাবেরী দিদিমণি’। নিয়মিত ক্লাস নেন। ব্যতিক্রম অসুস্থতা। অবসর তবে আগে সপ্তাহে চার দিন আসতেন। এখন দুই থেকে তিন দিন। ওঁর ধকল কমাতে সহ-শিক্ষিকারাই তাঁকে ওই অনুরোধ করেছেন। এখন অষ্টম থেকে দশম এই তিনটি শ্রেণির ক্লাসই মূলত তিনি নেন।

বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষিকা অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, শিক্ষাকর্মী দীপ্তি দে-রা বলছেন, ‘‘ওঁকে আমরা প্রাক্তন বলে মনেই করি না। ছাত্রীদের প্রতি স্নেহশীল তিনি। যখন অবসর নেননি, সময়ে অসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো, সাহায্য করা, এমনকি ছাত্রীদের প্রত্যেকের নামও তিনি মনে রাখতে পারতেন। এখনও তাই।’’

কাবেরীদেবীর একমাত্র সন্তান বেঙ্গালুরুতে থাকেন। অবসরের পর অখণ্ড অবসর হাতে। কিন্তু অবসরটাই চান না তিনি। স্কুলে আসতে হলে বাস ধরার জন্য সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। বিকেলে ফেরা। তিনি বললেন, ‘‘কোনও অসুবিধে নেই। স্কুলে ছাত্রীদের কাছে এলে মনে হয় কাজে আছি। দারুণ সময় কেটে যায়।’’ একই দাবি করেছে ছাত্রীরাও। দশম শ্রেণির ছাত্রী অনন্যা মণ্ডল, রুমা রেওয়ানি, প্রিয়াঙ্কা হাজরারা বলছে, ‘‘খুব ভাল পড়ান দিদিমণি। ভালও বাসেন। তিনি না থাকলে ভূগোল নিয়ে ভুগতে হত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy