কালিদাস দেবাংশী।
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি দুর্ঘটনায় শিরদাঁড়ায় প্রচণ্ড আঘাতের ফলে কোমরের নীচের অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছিল। টানা ১০ বছর কেটেছে বিছানায়। এখন কিছুটা সুস্থ হলেও নিম্নাঙ্গ অসাড়। সঙ্গী আর্থিক দৈন্যতা ও হুইল চেয়ার। এত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়েও যে নতুন করে লেখাপড়া শুরু করা যায় এবং পরীক্ষায় ভাল ফল করা যায়, তা প্রমাণ করলেন সিউড়ির কালিদাস দেবাংশী।
দুবরাজপুরের চিনপাই উচ্চ বিদ্যালয়ে চালু রবীন্দ্রমুক্ত বিদ্যালয় থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেন কালিদাস-সহ ৭০ জন পরীক্ষার্থী। ৭ অগস্ট ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই পরীক্ষায় ৭০০-র মধ্যে ৫২৩ নম্বর পেয়ে সেরা সিউড়ির কেন্দুয়ার বাসিন্দা, মধ্য তিরিশের কালিদাস। তাঁর কথায়, ‘‘বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ফের নতুন করে লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। এই ফল তাতে রসদ দিল।’’ বুধবার শুরু হয়েছে মার্কশিট দেওয়া। চিনপাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানিকচন্দ্র ঘোষ বলছেন, ‘‘এত প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়ে যে ফল করেছে কালিদাস, তা কুর্নিশ করার মতো। ও অন্যদের অনুপ্ররণা হতে পারে।’’
কালিদাসের এই লড়াই অবশ্য খুবই কঠিন ছিল। ২০০৪ সালে সিউড়ির বাণীমন্দির অমিতরঞ্জন শিক্ষানিকেতনের নবম শ্রেণিতে পড়তেন কালিদাস। বাড়ির নির্মীয়মাণ দোতলা থেকে নীচে পড়ে যান। তাঁর কোমরের উপরেই পড়েছিল কংক্রিটের স্ল্যাব। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ছেলের চিকিৎসার পিছনে পরিবার জলের মতো খরচ করেও লাভ বিশেষ কিছু হয়নি। দুর্ঘটনার কয়েক বছর আগেই গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মী কালিদাসের বাবা মারা যান। তিন দিদি, পাঁচ জনের সংসারে আয় বলতে মা লক্ষ্মীরানির সামান্য পেনশন এবং বড় দিদি কল্যাণীর গ্রামীণ ব্যাঙ্কে অস্থায়ী কাজ। পরে তিন দিদির বিয়ে হয়েছে। নিজেও কিছুটা সুস্থ।
কালিদাস বলছেন, ‘‘টানা দশটা বছর বিছানায় থাকার পরে এখনও হুইল চেয়ার ছাড়া নড়তে পারি না। মুক্ত বিদ্যালয়ের কথা শুনে মনকে শক্ত করে বোঝাই, আমাকে পড়াশোনা করতে হবে। বড়দি আমাকে মু্ক্ত বিদ্যালয় ভর্তি করেন গত বছর। দিদি-জামাইবাবু আমাকে কষ্ট করে শনি ও রবিবার স্কুলে নিয়ে যেতেন।’’ কল্যাণীর কথায়, ‘‘ভাইয়ের প্রবল ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করার। এত শারীরিক কষ্ট নিয়েও লেখাপড়া করে ভাল ফল করেছে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হবে। চেষ্টা করব ওর ইচ্ছে পূরণ করতে।’’ কল্যাণীর দাবি, প্রতি মাসে চিকিৎসার খরচ করার পরে কোনও রকমে চলে। বোনেরাও দেখেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy