Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
joypur

২৫টি ওষুধে বেহুঁশ করে খুন জুড়নকে

২০ মার্চ আচমকা উধাও হয়ে যান জয়পুরের রাঙ্গুনিটাঁড় গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় দিনমজুর জুড়ন। দিন দুয়েক পরে তাঁর স্ত্রী উত্তরা ও ছেলে অপূর্ব জয়পুর থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

ধৃত দুই। নিজস্ব চিত্র

ধৃত দুই। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:২৭
Share: Save:

গোয়ায় থাকা ‘বিবাহ-বহির্ভূত’ সম্পর্কে জড়িত যুবকের সঙ্গে ফোনে ফোনেই স্বামী জুড়ন মাহাতোকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল উত্তরা মাহাতো। শুধু তাই নয়, খুনের রাতে তার সঙ্গে সরাসরি ফোনে যোগাযোগ রেখেই ওই দুষ্কর্ম ঘটানো হয়েছিল। সেই যুবক, জয়পুরের শিলফোড় গ্রামের বাসিন্দা ক্ষেত্রপাল মাহাতোকে গ্রেফতারের পরে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই জানা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। আরও দাবি, খুনের পরে দেহ পোঁতার আগে কেটে নেওয়া হয় জুড়নের পুরুষাঙ্গও।

২০ মার্চ আচমকা উধাও হয়ে যান জয়পুরের রাঙ্গুনিটাঁড় গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় দিনমজুর জুড়ন। দিন দুয়েক পরে তাঁর স্ত্রী উত্তরা ও ছেলে অপূর্ব জয়পুর থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশের কাছে গিয়ে উত্তরা দাবি করেছিল, জুড়ন ঝালদার হাটে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ২৫ মার্চ অপূর্বের তরফে পুলিশ খবর পায়, তাঁদের বাড়ির ‘সোকপিট’ থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জায়গাটি ঘিরে ফেলে মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দি একটি দেহ উদ্ধার করে। পরে শনাক্ত করা হয়, দেহটি জুড়নেরই। অপূর্বের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করে উত্তরাকে।

গোটা ঘটনায় জুড়নের স্ত্রী উত্তরা তার গতিবিধির জন্য পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিল। জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, উত্তরা মাহাতোকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে সে স্বামীকে খুনের কথা স্বীকার করে। তার পরে, তাকে গ্রেফতার করা হয়। কী ভাবে জুড়নকে খুন করা হয়েছিল? জেলা পুলিশ সুপারের কথায়, “জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, ২৫টি ‘সিডেটিভ পিল’ (ঘুমের ওষুধ) ঘটনার রাতে ভাত ও ডিমের ঝোলের সঙ্গে জুড়নকে খাওয়ানো হয়েছিল। জুড়ন বেহুঁশ হয়ে পড়লে একটি বাটখারা দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। ওই অবস্থাতেই একটি ব্লেড ও ছুরির সাহায্যে তাঁর পুরুষাঙ্গটিও কেটে নেওয়া হয়। তার পরে সোকপিটের গর্তে নুন দিয়ে দেহটি পুঁতে ফেলা হয়।”

খুনের পিছনে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ছায়া দেখছে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বছর পাঁচেক আগে উত্তরার সঙ্গে ক্ষেত্রপালের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সরকারি প্রকল্পে বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের সময়ে ক্ষেত্রপালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ক্ষেত্রপাল ওই এলাকায় প্রকল্পের শৌচাগার নির্মাণের কাজকর্ম দেখভাল করত। জুড়নের বাড়ির যে ফোন নম্বর প্রকল্পের কাজের জন্য নির্মাণের দায়িত্বে থাকা লোকজনের কাছে ছিল, তা উত্তরার কাছেই থাকত। ফোন করা হলে উত্তরাই ফোন তুলত।

ঘটনার রাতে প্রায় সারারাত ক্ষেত্রপালের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখেছিল উত্তরা, তদন্তে জেনেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, “ফোনে কথাবার্তা থেকেই উত্তরার সঙ্গে ক্ষেত্রপালের আলাপ ও পরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। উত্তরার মোবাইল নম্বরের কললিস্ট খতিয়ে দেখা গিয়েছে, খুনের রাতে প্রায় রাতভর গোয়ায় থাকা ক্ষেত্রপালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তার আগে-পরেও ক্ষেত্রপালের সঙ্গে উত্তরার একাধিক বার কথা হয়েছে। ফোনে ক্ষেত্রপালের সঙ্গে খুনের পরিকল্পনা করাই শুধু নয়, অপরাধ ঘটানোর সময়েও উত্তরা সরাসরি ক্ষেত্রপালের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।” তাঁর আরও দাবি, ফোনেই ক্ষেত্রপাল উত্তরাকে অপরাধ ঘটাতে সহায়তা করেছিল। উত্তরার ফোনটি কানে মাফলারে জড়ানো ছিল।

পুলিশের দাবি, জুড়নের দেহ ‘সোকপিটে’ নুন দিয়ে পুঁতে দেওয়ার পরে তাঁর পুরুষাঙ্গটি প্লাস্টিকে মুড়ে আলাদা জায়গায় পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। চেষ্টা করেও তা উদ্ধার করা যায়নি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, সম্ভবত কুকুরে তা টেনে নিয়ে যেতে পারে। পুলিশ সুপার জানান, খুনে ব্যবহৃত বাটখারা, ছুরি ও ব্লেড উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও মৃতের পুরুষাঙ্গ কাটা ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, “খুনের বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওষুধের স্ট্রিপটি উদ্ধার করা গিয়েছে। উত্তরা যে মোবাইলটি ব্যবহার করতেন, তা ক্ষেত্রপালের দেওয়া। ওই ফোনের সিম ক্ষেত্রপালের নামেই রয়েছে।” খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাঁর দাবি, উত্তরা ও ক্ষেত্রপালের সম্পর্কের কথা জুড়ন জানতে পেরে যান। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে মাঝেমাঝেই অশান্তি হত। জুড়নকে পথ থেকে একেবারে সরিয়ে দিতে খুনের পরিকল্পনা করা হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

joypur Crime Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy