Advertisement
১২ জানুয়ারি ২০২৫
Jhuku Bauri

স্কুলের জন্য জমি দান, বাস ভাঙা ঘরেই

গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানাচ্ছিলেন, মিডডে মিলের ডাইনিং শেড না থাকায় খোলা জায়গায় নয় তো গাছের তলায় বসে খাবার খেতে হত শতাধিক পড়ুয়াকে।

ঝুকু বাউরি। নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি গ্রামে।

ঝুকু বাউরি। নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৩৩
Share: Save:

পৈতৃক সামান্য জমি ছিল সম্বল। গ্রামের স্কুলের পড়ুয়াদের স্বার্থে তা-ও দান করেছেন। অথচ স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে নিজে ভাঙা ঘরে কোনও মতে মাথা গুঁজে রয়েছেন নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি গ্রামের ঝুকু বাউরি। পেশায় দিনমজুর ঝুকুর দাবি, বাড়ির জন্য প্রশাসন থেকে শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন। কিন্তু ঘরের হাল ফেরেনি।

গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানাচ্ছিলেন, মিডডে মিলের ডাইনিং শেড না থাকায় খোলা জায়গায় নয় তো গাছের তলায় বসে খাবার খেতে হত শতাধিক পড়ুয়াকে। ঘটনাটি নজরে পড়েছিল ঝুকুর। বছর ছয়েক আগে এক দিন অফিসে এসে স্কুলের পেছনে থাকা তাঁর পৈতৃক সাড়ে তিন ডেসিমেল জমি দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানান। তবে শর্ত দিয়েছিলেন, ওই জমিতে পড়ুয়াদের খাবার খাওয়ার জন্য যেন ছাউনিই তৈরি করা হয়। সৌমেন্দ্রনাথ বলেন, “প্রস্তাব শুনে অবাকই হই। কী ভাবে দিনমজুরি করে সংসার চালানো এক দুঃস্থ ব্যক্তি নিজের সম্বলটুকু স্কুলকে দিতে চাইছেন। বিভিন্ন মহলে তদ্বিরের পরে অর্থের সংস্থান করে ঝুকুর দেওয়া জমিতেই ডাইনিং শেড তৈরি করা হয়েছে।”

ঝুকুর স্ত্রী পদ্মা জানাচ্ছিলেন, বৃষ্টি হলেই ফুটো ছাদ থেকে জল পড়ে। কোনও মতে একটা ত্রিপল জোগাড় করে ছাদের জল আটকানোর ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু শীতের কনকনে হাওয়া রোখার সাধ্যি যে ভাঙা জানলা-দরজার নেই। ঝুকুর কথায়, ”বহু দিন আগে কাঁচা বাড়িটা তৈরি করেছিলাম। এত দিনে একেবারে বেহাল হয়েছে। শরীরে কুলোয় না বলে কাজে বেরোতে পারি না। ছেলের সামান্য রোজগারে সংসার চলে। আর্থিক অনটনে বাড়ি সারাই করতে পারছি না।”

আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি? ঝুকু জানান, বাড়ির জন্য বিভিন্ন জায়গাতেই আবেদন করেছেন। কিন্তু অন্য অনেকে বাড়ি পেলেও তাঁর কপাল খোলেনি। এমনকি, আবাস যোজনার তালিকায় তাঁর নাম আছে কি না, তা-ও জানা নেই তাঁর।

গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য অভয় মণ্ডলের দাবি, ”ওই ব্যক্তির নাম আবাস যোজনার প্রথম তালিকায় নেই। পরের তালিকায় আছে কি না, খোঁজ নিতে হবে।” স্থানীয় দীঘা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সাবিত্রী গরাঁই বলেন, ”যে সময়ে আবাস যোজনার তালিকা তৈরি হয়, দায়িত্বে ছিলাম না। ওই ব্যক্তি এখনও বাড়ি কেন পাননি, বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদবও জানান, স্কুলের উন্নয়নে জমি দান করা ওই দুঃস্থ ব্যক্তির আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়া উচিত ছিল। যাতে উনি বাড়ি পান, তার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হবে।

নিতুড়িয়ার বিডিও প্রবীরকুমার সিংহ বলেন,”ওই ব্যক্তি যদি আবাস যোজনায় আবেদন করে থাকেন বা নতুন করে আবেদন করেন, তা হলে ভবিষ্যতে প্রকল্পের সুবিধা মতো বাড়ি পেতে পারেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

nituria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy