Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Crime Cases

ভাইকে ‘খুন’, রেললাইনে দাদার দেহও

বুধবার রবীনের বড় ছেলে সঞ্জয় পুলিশের কাছে কালিদাসের বিরুদ্ধে তাঁর বাবাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

মুহ্যমান: রবীন পরামানিকের স্ত্রী রেণুকা ও ছোট ছেলে ধনপতি। বুধবার ঝালদা থানার তোরাং গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

মুহ্যমান: রবীন পরামানিকের স্ত্রী রেণুকা ও ছোট ছেলে ধনপতি। বুধবার ঝালদা থানার তোরাং গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৬:০৩
Share: Save:

নেশা করে বাড়ি ফিরে দাদা রাতে গোলমাল করছিলেন। তার প্রতিবাদ করেছিলেন ভাই। সে রাগে মঙ্গলবার রাতে কুড়ুলের কোপ মেরে ভাইকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল দাদার বিরুদ্ধে। আর বুধবার বিকেলে রেললাইনে মিলল অভিযুক্ত দাদার দেহ। গ্রামেরই দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে পাথর পুরুলিয়ার ঝালদা থানার তোরাড় গ্রাম। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে কুড়ুলের কোপে খুন হন রবীন পরামানিক (৪৫)। বুধবার বিকেলে উদ্ধার হয় তাঁকে খুন করায় অভিযুক্ত দাদা কালিদাস পরামানিকের (৪৮) দেহ। পাশেই পড়েছিল সেই কুড়ুল।

এসডিপিও (ঝালদা) সুমন্ত কবিরাজ বলেন, ‘‘এ দিন সকালে রবীনকে খুনের অভিযোগে পুলিশ কালিদাসকে খুঁজছিল। বিকেলে রেললাইনে কালিদাসের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়।’’ পুলিশের অনুমান, মালগাড়ির ধাক্কায় কালিদাস মারা গিয়েছেন। তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, তিন ভাইয়ের মধ্যে কালিদাস বড়, মেজো রবীন আর সন্তোষ ছোট। তিন ভাই চাষবাস করেন। প্রায় দিনই কালিদাস নেশা করে রাতে বাড়ি ফিরে গালিগালাজ করতেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ কালিদাস গালিগালাজ করার সময় রবীন প্রতিবাদ করেন। তা নিয়ে প্রথমে দুই ভাইয়ের মধ্যে তুমুল বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, হঠাৎ বাড়ি থেকে ধারাল একটা কুড়ুল বার করে কালিদাস রবীনের মাথার পিছনে আঘাত করেন। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রবীন। পরিজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ঝালদা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। পরে বেশি রাতে তাঁকে ঝাড়খণ্ডের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। বুধবার রবীনের বড় ছেলে সঞ্জয় পুলিশের কাছে কালিদাসের বিরুদ্ধে তাঁর বাবাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

ঘটনার পর থেকেই কালিদাসকে এলাকায় দেখা যাচ্ছিল না। বুধবার দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কান্নার রোল পড়েছে। কিছুটা দূরে পড়শিদের জটলা। কিছুটা দূরেই বাড়ি পুস্তি পঞ্চায়েতের সদস্য অক্ষয় সিংহবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে গ্রামে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম। খবর পেয়ে এসে দেখি, রবীন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। কালিদাসকে গোলমাল করার জন্য অনেক বার সতর্ক করেছি। কিন্তু
কাজ হয়নি।’’

বাড়ির দাওয়ায় একটি খাটিয়ায় শুয়েছিলেন রবীনের স্ত্রী রেণুকাদেবী। তাঁর দাবি, ‘‘চোখের সামনে আমার স্বামীকে ভাসুর খুন করে দিল। আমরা তাঁকে বাঁচাতে পারলাম না।’’ নিহতের ছোট ছেলে ধনপতির কথায়, ‘‘বাবা বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। সব শেষ হয়ে গেল। জেঠু যে এমন কাজ করবে ভাবিনি। এ বার আমাদের দিন চলবে কী করে, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’ সেই সময় কালিদাসের স্ত্রী শান্তি আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘স্বামী নেশা করে আমাদেরও গালিগালাজ করে। কত বার বলেছি। কথা শোনেনি।’’ তখনও কালিদাসের মৃত্যুর খবর আসেনি।

খবর গ্রামে আসে বিকেলে। জানা যায়, কয়েক কিলোমিটার দূরে ভুসুডির কাছে রেললাইনে কালিদাসের দেহ পড়ে রয়েছে। পরিজনেরা গিয়ে দেহ শনাক্ত করেন। সন্ধ্যায় কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে কালিদাসের স্ত্রী শান্তি বলেন, ‘‘সব শেষ হয়ে গেল!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Cases Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy