স্বজনহারা: তাপস বাগদির স্ত্রী, সন্তান। লাভপুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
পুরুলিয়ার বলরামপুরের পরে বীরভূমের লাভপুর।
গাছ থেকে এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে ফের শুরু রাজনীতির টানাপড়েন। বিজেপির অভিযোগ, ওই যুবক তাদের সমর্থক। রাজনৈতিক আক্রোশে তাঁকে খুন করা হয়েছে। মৃতের পরিবারের দাবিও তেমন। পাঁচ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম তাপস বাগদি (৩৫)। বাড়ি লাভপুরের দাঁড়কা বাগদিপাড়ায়। পুলিশ আরও জানায়, পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না।
তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘‘খুন নয়, ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন।’’ ওই দাবি উড়িয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার ধাঁচেই লাভপুরে আমাদের এক সক্রিয় কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য জুড়ে আমাদের কর্মীদের উপর তৃণমূল হামলা চালাচ্ছে। এটা তার আরও একটা নমুনা। এটা একটা রাজনৈতিক হত্যা।’’ দলীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার লাভপুরে যাচ্ছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য দলের সহ সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরে ৩০ অক্টোবর তিনি লাভপুরে যেতে পারেন।
ওই ঘটনার বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘গত কাল লাভপুরে একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত করা হয়েছে। যে চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করেছেন তাঁর সঙ্গে পুলিশের কথা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, এটি আত্মহত্যা। আমরা সেই হিসেবেই তদন্ত করছি।’’
এ বছর ৩০ মে পুরুলিয়ার বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামে একটি গাছে ত্রিলোচন মাহাতো নামে বছর আঠেরোর এক তরুণের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তাঁর দেহে লাগানো পোস্টারে লেখা ছিল— ‘পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির হয়ে কাজ করার শাস্তি’। তা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। বিজেপি নিশানা করে তৃণমূলকে। ওই ঘটনার তিন দিন পরে ফের বলরামপুরেরই দাবহা গ্রামে একটি হাই-টেনশন বিদ্যুৎস্তম্ভে একটি ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। বিজেপি ফের অভিযোগ করে, দুলাল কুমার নামে তাদের দলের ওই সমর্থককে খুন করেছে তৃণমূল। প্রতি ক্ষেত্রেই অবশ্য তৃণমূল ওই অভিযোগ অস্বীকার করে। দুলালবাবুর মা-বাবাও দাবি করেন, তাঁদের পুরো পরিবারে তৃণমূলেরই সমর্থক।
লাভপুরের ঘটনাতেও অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ গ্রামলাগোয়া ময়ূরাক্ষী নদীতে স্নান করতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাপসবাবু। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ নদীর চরে একটি গাছে গলায় দড়ির ফাঁসে তাঁর দেহ ঝুলতে দেখা যায়। রাতেই পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরিজনেরা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক আক্রোশেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করেছে। তাপসবাবুর স্ত্রী সমাপ্তি বাগদির নালিশ, ‘‘আমার স্বামী বিজেপি করত। তৃণমূলের লোকেরা ওকে খুনের হুমকি দিত। ওরাই ওকে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। স্নান করতে যাওয়ার সময় ওর হাত খালি ছিল। ওই দড়িও আমাদের বাড়িতে ছিল না।’’ একই অভিযোগ মৃতের বাবা আনন্দ বাগদির। এলাকার পাঁচ তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আনন্দবাবুর অভিযোগ, ‘‘বছরখানেক আগে রাজনৈতিক কারণে ওই তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল আমার ছেলের। নবমীর দিনও আমাদের উপরে চড়াও হয়েছিল ওরা। হুমকি দিয়ে গিয়েছিল।’’
বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘তাপস আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ওঁর জন্যই ওই এলাকায় বিজেপির সংগঠন মজবুত হচ্ছিল। সেই আক্রোশে তৃণমুল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওকে খুন করেছে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের কেউ-ও তাতে জড়িত নয়। পুলিশের তদন্তেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’
উল্লেখ্য, দাঁড়কা পঞ্চায়েত এলাকায় এক সময় সিপিএমের সঙ্গে টক্কর ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের। সেই সময় দাঁড়কা পঞ্চায়েত এলাকার ফব উপপ্রধান ছিলেন তৃণমূলের বর্তমান বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। মূলত তাঁরই উদ্যোগে দাঁড়কায় সিপিএমকে রুখতে বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল, আরএসপি-কে নিয়ে অলিখিত জোট গড়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় বিজেপির নির্বাচিত সদস্যের সমর্থনে ফব নেতৃত্বাধীন পঞ্চায়েতের বোর্ড গড়ে ওঠে। তখন পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় বিজেপির ভাল সংগঠন ছিল। তার মধ্যে দাঁড়কা অন্যতম। পরবর্তী কালে মনিরুল ইসলাম সদলবলে তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরেই বিজেপি সহ অন্যান্য দলের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা মিটে যায়। তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy