Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ঘরে ঘরে খুচরো, নেবে কে

খুচরো-সঙ্কট মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে উঠেছে বাঁকুড়া জেলার ক্রেতা-বিক্রেতা সবার কাছেই। ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, তাদের ভাণ্ডারও কয়েনে ভরে গিয়েছে। 

বিপত্তি: এ ভাবেই ব্যবসায়ীর কাছে জমেছে খুচরো। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

বিপত্তি: এ ভাবেই ব্যবসায়ীর কাছে জমেছে খুচরো। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় 
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫১
Share: Save:

মাচানতলার দোকানে শ্যাম্পুর পাতা কিনতে গিয়ে দু’টাকার কয়েন এগিয়ে দিয়েছিলেন এক ক্রেতা। দোকানদার মুখের উপরে বলে দিলেন, ‘বড়’ নোট না দিলে শ্যাম্পু দেবেন না। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ বেধে গেল।

বাঁকুড়া স্টেশনের উল্টো দিকের তিনটি ‘লাল চা’ খেয়ে দু’টি পাঁচ টাকার এবং একটি দু’টাকার কয়েনে দাম মেটাতে যান কলকাতা থেকে আসা পর্যটক। দোকানদার খুচরো নিতে নারাজ।

খুচরো-সঙ্কট মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে উঠেছে বাঁকুড়া জেলার ক্রেতা-বিক্রেতা সবার কাছেই। ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, তাদের ভাণ্ডারও কয়েনে ভরে গিয়েছে।

কেন এই সমস্যা?

জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের দাবি, নোট-বন্দির পরে টাকার জোগান বাড়াতে প্রচুর কয়েন বাজারে ছাড়া হয়। তার জের চলছে। কিন্তু তা হলে সে সমস্যা শুধু বাঁকুড়ায় সীমাবদ্ধ থাকবে কেন? সদুত্তর মেলেনি।

পাঠকপাড়ার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘দোকানদারেরা যেনতেন ভাবে কয়েন দিতে চাপ দিচ্ছেন। তা হলে আমাদের কয়েন ওঁরা নেবেন না কেন?’’ ছোট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ব্যাঙ্ক কয়েন জমা নিচ্ছে না। তাই তাঁরা ক্রেতাদের কয়েন নিচ্ছেন না। অন্য দিকে, পাইকারি বিক্রেতারাও কয়েন নিতে নারাজ। অগত্যা তাঁরা কয়েনের বোঝা কমাতে বিক্রেতাদের জোরাজুরি করছেন। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলার চা বিক্রেতা শ্রীবেশ দাসমোদকের পাল্টা দাবি, “হাজার হাজার টাকার কয়েন বাড়িতে জমে রয়েছে। কাজে লাগাতে পারছি না।” একই কথা লালবাজারের মুদি ব্যবসায়ী রাজেশ বাজোরিয়া, ফাল্গুনী কুণ্ডুদের মুখেও।

‘বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ টাকার কয়েন বস্তাবন্দি হয়ে জমে রয়েছে বহু ব্যবসায়ীর বাড়িতে। এখন ১০০ টাকার কয়েন দিয়ে অনেকে বিনিময়ে ৮০ টাকার নোট নিচ্ছেন।’’ তিনি জানান, সমস্যাটি তাঁরা সম্প্রতি জেলা সফরে আসা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরেও এনেছেন।

সমাধান হবে কোন পথে?

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার জবাব, ‘‘ব্যাঙ্কই সঙ্কট মোচন করতে পারে।’’ আবার জেলার লিড ব্যাঙ্ক-এর ম্যানেজার সঞ্জিত নন্দী জানাচ্ছেন, বিভিন্ন ব্যাঙ্কে জমে থাকা টাকা জেলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পাঁচটি চেস্ট ব্রাঞ্চে জমা করা হয়। সেখান থেকে টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়। তাঁর দাবি, ‘‘চেস্ট ব্রাঞ্চগুলির ভল্ট কয়েনে ভরে গিয়েছে। কিন্তু, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কয়েন জমা নিচ্ছে না। ফলে, ব্যাঙ্কগুলি জমে থাকা রাশি রাশি কয়েন নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে।’’

‘অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় অ্যাসোসিয়েশন’-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক সাগর রায়ের দাবি, ‘‘কয়েন জমা করতে আসা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রায়ই ব্যাঙ্ককর্মীদের বচসা বাধছে। আমরাও চাই, দ্রুত এই সমস্যা মিটুক।’’ সঞ্জিতবাবু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। সে দিকে তাকিয়ে রয়েছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coins Small Currency
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy