Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

গোড়াতেই গলদ, জটে স্বাস্থ্যজেলা

জায়গা একটাই। তাতেই স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকের অফিস, আবার মেডিক্যাল কলেজের ভবন নির্মাণ করার জন্য দেখিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। আর এতেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। অথচ পুরভোটের মুখে শাসকদলের পক্ষ থেকে উন্নয়নের যে ঢক্কানিনাদ নেতামন্ত্রীরা রামপুরহাট পুরবাসীকে শোনাচ্ছেন, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত এই দুই প্রকল্পের কথাও বাদ যাচ্ছে না। কিন্তু বাস্তব অবস্থায় প্রকল্প দু’টি যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই পড়ে আছে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৯
Share: Save:

তাতেই স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকের অফিস, আবার মেডিক্যাল কলেজের ভবন নির্মাণ করার জন্য দেখিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। আর এতেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। অথচ পুরভোটের মুখে শাসকদলের পক্ষ থেকে উন্নয়নের যে ঢক্কানিনাদ নেতামন্ত্রীরা রামপুরহাট পুরবাসীকে শোনাচ্ছেন, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত এই দুই প্রকল্পের কথাও বাদ যাচ্ছে না। কিন্তু বাস্তব অবস্থায় প্রকল্প দু’টি যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই পড়ে আছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, একই জায়গায় দু’টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হল কি করে?

তিন বছর আগে ঝাড়গ্রাম, আসানসোল, বিষ্ণুপুর, নন্দীগ্রাম, বসিরহাট, ডায়মন্ডহারবার, রামপুরহাট—এই সাত মহকুমা হাসপাতালগুলিকে পৃথক স্বাস্থ্য জেলা হিসাবে ঘোষণা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকের ভবন নির্মাণের জন্য পরবর্তীতে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে রামপুরহাট হাসপাতালের পুরাতন ভবনের তিন বিঘার বেশি জায়গা দেখানো হয়। ওই জায়গা পরিমাপ করে স্বাস্থ্য ভবনেও পাঠানো হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, রামপুরহাট ভাঁড়শালাপাড়া মোড় সংলগ্ন হাসপাতালের পুরনো ভবনের জায়গায় স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকের জন্য ‘জি প্লাস থ্রি ক্যাটাগরির’ ভবন নির্মাণের অনুমোদনও স্বাস্থ্য ভবন থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু দু’বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচারে এসে রামপুরহাটে মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সে জন্য মেডিক্যাল কলেজের জায়গার জন্য রামপুরহাট হাসপাতালের পুরনো জায়গাকেও দেখানো হয়। ঘটা করে ওই জায়গা মেডিক্যাল কলেজের নামে বোর্ড টাঙিয়ে উদ্বোধনও করা হয়।

কিন্তু কেন এমনটা করা হল তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘‘জেলার জন্য মেডিক্যাল কলেজ যেমন দরকার তেমনি রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার জন্য ভবন নির্মাণের প্রয়োজন আছে। আশা করি জায়গা সমস্যা মিটে যাবে এবং দু’টিই নির্মাণ করা হবে।’’

এ দিকে, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিকের ভবন নির্মাণের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অধীন ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেড চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ ৪৯ হাজারের বেশি টাকা অনুমোদন করে। ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন থেকে সেই টাকা গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে বরাদ্দ হয় বলে স্বাস্থ্য দফতর থেকে সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু একই জমিতে মেডিক্যাল কলেজ এবং পৃথক রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকের ভবন নির্মাণ নিয়ে জটিলতায় প্রায় ৪ মাস ধরে স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকের ভবন নির্মাণের কাজ থমকে আছে। বরাদ্দ টাকা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উন্নয়ন সমিতির খাতে পড়ে আছে বলে জানা গিয়েছে।

অন্য দিকে, পরিকাঠামোর দিক থেকে রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার অবস্থা যেমন বেহাল তেমনি কর্মী অভাবে ধুঁকছে স্বাস্থ্য জেলা অফিস। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা অফিসে একজন সিএমওএইচ, ডেপুটি সিএমএইচ (১), ডেপুটি সিএমওএইচ (২), ডেপুটি সিএমএইচ (৩) পদগুলিতে নিয়োগের অনুমোদন হয়ে আছে। কিন্তু প্রথম থেকেই ওই তিনটি পদে কোনও লোক নেই। টিকাকরণের কাজ দেখভাল করার জন্য ডিএমসিএইচও পদে একজন কর্মীর অনুমোদন থাকলেও নিয়োগ হয়নি। ৩ জন করে ইউডিসি এবং এলডিসি, স্টোর কিপার পদেও একজন কর্মী নেই। শুধুমাত্র একজন হেড ক্লার্ক, মহকুমা সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দফতরের দু’জন কর্মীকে নিয়ে রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকের অফিস চলছে। রামপুরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক পদটিও মাঝে মাঝে শূণ্য হয়ে যায়। তখন সিউড়িতে থাকা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে রামপুরহাটে নিয়ে আসা হয়।

এত কিছু সমস্যার মধ্যে জায়গা সংক্রান্ত জটিলতায় সরকারের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রামপুরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, ‘‘আমি ৩০ মার্চ কাজে যোগ দিয়েছি। জায়গা সংক্রান্ত জটিলতার জন্য ‘জি প্লাস থ্রি’ ভবন নির্মাণ করতে নতুন করে জায়গা দেখা হচ্ছে। আগে যে জায়গায় অফিস হওয়ার কথা ছিল সেখানে মেডিক্যাল কলেজ হবে। তবে জায়গা সমস্যার চেয়ে অনুমোদিত পদগুলিতে কর্মী দেওয়া হলে কাজ করতে সুবিধে হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE