দুর্বিপাক: বৃষ্টির জলে ডুবেছে জমির পাকা ধান। অসহায় কৃষিজীবী। শুক্রবার নানুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে মাথায় হাত জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ধানচাষিদের। জমিতে পাকা আউস ধান নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জেলায় ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে আউস ও আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল। সাধারণত ১৫ জুলাই থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত ধান পোঁতার উপযুক্ত সময় হিসাবে বিবেচিত হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান পোঁতা হলে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আউস ধান উঠে যাওয়ার কথা। কিন্তু অনাবৃষ্টির জেরে এ বার জেলার অধিকাংশ চাষি নির্ধারিত সময়ে ধান পুঁততে পারেননি। ধান পুঁততে আরও ২০-২৫ দিন সময় বেশি লেগে যায়। এর ফলে ধান ওঠার সময়ও পিছিয়ে যায়। বেশিরভাগ জমিতে এখন সবে আউস ধান কাটার কাজ শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই টানা বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। অনেকের কাটা ধান জমিতে ভাসছে। আবার কাটা হয়নি এমন পাকা ধানও ঝরে যাচ্ছে।
লাভপুরের জামনার সুজিত দাস, নানুরের আলিগ্রামের বাচ্চু মণ্ডলের মতো অনেকে বিঘাখানেক করে জমিতে আউস ধানের চাষ করেছিলেন। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে তাঁরা ধান কেটে জমিতে শুকোতে দিয়েছিলেন। সেই ধান এখন জমিতে ভাসছে।
তাঁদের কথায়, ‘‘বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা খরচ করে ধান পুঁতেছিলাম। সব জলে গেল। এবার ধান থেকে চারাগাছ বেরিয়ে যাবে।’’ তাঁদের আক্ষেপ, ‘‘অনাবৃষ্টি না হলে এই পরিস্থিতি হতো না। এত দিনে ধান ঘরে ঢুকে যেত।’’
এমন বৃষ্টিতে স্বস্তিতে নেই আমন চাষিরাও। বিশেষত যাঁদের জমির ধান ফুলিয়ে এসেছে সে সব চাষিরা। কৃষি দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টিতে ওই সব ধান ‘চিটে’ বা ‘আগড়া’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ময়ূরেশ্বরের বাঁধের বাসুদেব বাগদি, সাঁইথিয়ার নেতুরের অনিল মণ্ডল বলেন, ‘‘জমির ধান ফুরিয়ে এসেছে। এই অবস্থায় বৃষ্টিতে চরম ক্ষতির আশঙ্কা। ফলন ভীষণ ভাবে মার খেতে পারে।’’
ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে আনাজ চাষেও। ময়ূরেশ্বরের দুনার রহমত শেখ, লাভপুরের মীরবাঁধের সালাম শেখ জানান, টানা বৃষ্টিতে করলা, ঝিঙে, পটল, শসা-সহ বিভিন্ন ধরণের আনাজের লতা-পাতা ভিজেছে। ফুল ঝরে যাওয়ায় কয়েকটি ফলনও মিলবে না। বৃষ্টি থামলেও জলে ভেজা গাছ বাঁচাতে যে পরিমাণ কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে তাতে কার্যত ‘ঢাকের দামে মনসা বিক্রি’র পরিস্থিতি হতে পারে।
জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা অমরকুমার মণ্ডল জানান, ৪০ শতাংশ জমির আউস ধান উঠে গিয়েছে। যে সব জমিতে ধান কাটা পড়ে রয়েছে, তাতে গাছ বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফুলিয়ে আসা ধানে চিটে বা আগড়া হওয়ারও আশঙ্কা থাকছে। এই বৃষ্টিতে রবিচাষও কিছুটা পিছিয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy