সম্মান: প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান অরূপ রাহাকে সাম্মানিক ডি-লিট দিলেন সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ছবি: সুজিত মাহাতো
ফেলে আসা দিনের শৈশব ছুঁয়ে গেল সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের মঞ্চকে। বৃহস্পতিবার এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের প্রাক্তনী অরূপ রাহাকে সাম্মানিক ডি-লিট দিল।
ইস্পাত কঠিন মানসিকতায় নিজেকে গড়ে তুলে দেশের বায়ুসেনার নেতৃত্ব দেওয়ার পরে এ দিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়ে তিনি পুরুলিয়াকে তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি বলেও মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুরুলিয়ায় আসা মানে আমার কাছে ঘরে ফেরার অনুভূতি। পুরুলিয়ার সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ। পুরুলিয়া আমার দ্বিতীয় বাড়ি।’’ বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকেই ঝিলিক দিয়েছে তাঁর পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের ছাত্রজীবন। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার সৈনিক স্কুলে আমার ছাত্রজীবন কেটেছে। আমি নিজেকে এই মাটিরই সন্তান বলে মনে করি।’’ তাঁর এই বক্তব্যকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানায় সভাঘর।
সৈনিক স্কুলের উল্টোদিকেই গড়ে উঠেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। স্মৃতিতে ডুব দিয়ে অরূপবাবু জানান, এখন যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, সেই মাঠে তাঁদের এনসিসি-র প্রশিক্ষণ হতো। এই মাঠেই তাঁদের কত সকাল-বিকেল কেটেছে। পাশ দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে স্টিম ইঞ্জিন ছুটে যেত। তিনি বলেন, ‘‘সৈনিক স্কুলের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠায় আমি খুশি। এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।’’
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠক্রমে কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ এ দিন যাঁদের স্বর্ণপদক দেওয়া হল, তাঁদের অভিনন্দন জানান অরূপবাবু। ছাত্রছাত্রীদের তিনি দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। তুলে ধরেন নিজের জীবনের কিছু চ্যালেঞ্জের উদাহরণও।
এ দিন ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিসারি সায়েন্সের বিজ্ঞানী নির্মলকুমার টুডুকেও ডক্টর অব সায়েন্স সম্মান দেওয়া হয়। প্রাণিবিদ্যার এই কৃতী মানুষটির জন্ম পুরুলিয়ারই বোরো থানার লেওয়াগোড়া গ্রামে। ২০১৫ সালে বিশ্বভারতী থেকে পিএইচডি পান। কাজ করেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও। সায়েন্টিফিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট থেকে ২০১৭ সালে এনভায়রনমেন্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। নির্মলবাবু ছাত্রাছাত্রীদের জানান, লক্ষ্য স্থির করে এগোতে হবে।
এই বিশ্ববিদ্যালয় কী ভাবে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছে, তা তথ্য সহকারে তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপকরঞ্জন মণ্ডল। এ দিন স্নাতক স্তরে আটটি বিভাগের ১১ জন ও স্নাতকোত্তর বিভাগের ১৭টি বিভাগের ১৮ জন ছাত্রছাত্রীকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্নাতকোত্তরে ভূগোল বিষয়ে দু’জন যুগ্মভাবে শীর্ষস্থান দখল করেছেন এবং স্নাতক স্তরে বাংলা বিষয়ে তিন জন শীর্ষস্থান দখল করেছেন।
স্নাতক বিভাগে কলা বিভাগের বিষয়গুলির মধ্যে সেরা ছাত্রী লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজের শিক্ষা বিভাগের মল্লিকা মাহাতোকে মৌমিতা ঘোষ পাল স্মৃতি পদক তুলে দেওয়া হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পদকপ্রাপ্ত ২৯ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১৮ জনই ছাত্রী। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘জেলায় যে নারী শিক্ষায় এগোচ্ছে, ছাত্রীদের এই সম্মান সে কথাই প্রমাণ করে।’’
তবে এ দিনের সমাবর্তনে আচার্য রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি আসেননি। তিনি সমাবর্তনে থাকছেন না বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আগেই জানানো হয়েছিল। তবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আসবেন বলে ঘোষণা করা হলেও তিনিও আসতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy