চলছে প্রস্তুতি —নিজস্ব চিত্র।
বোমা ছোড়া হচ্ছে শুশুনিয়া পাহাড়ে। না, কোনও দুষ্কৃতী তাণ্ডব নয়, বন দফতর শয়ে শয়ে বোমা ছুড়ছে পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে। তা-ও আবার বন মহোৎসবের মাঝেই। আর এই কাজে বন দফতরকে সাহায্য করছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে স্বেচ্ছাসেবী ও প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনের কর্মীরা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শুশুনিয়া পাহাড়ে মোট এক হাজার বোমা ছোড়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
বাঁকুড়া জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র শুশুনিয়া পাহাড়। জীববৈচিত্রের দিক থেকেও বাঁকুড়া-সহ দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে হাজার হাজার প্রজাতির গাছ রয়েছে। কীট-পতঙ্গ, সরীসৃপ, শাখাচারী এবং অরণ্যচারী প্রাণীর অবাধ বিচরণক্ষেত্র শুশুনিয়া পাহাড়। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন কারণে ক্রমশ ফাঁকা হচ্ছিল সবুজে ঢাকা পাহাড়। এক সময় স্থানীয় পাথর খোদাই শিল্পীরা পাহাড়ের গা থেকে সংগ্রহ করতেন বিশেষ এক রকমের পাথর। দশকের পর দশক ধরে সেই পাথর সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয় বড় বড় গর্ত।
গত কয়েক বছর ধরে বন দফতরের লাগাতার নজরদারিতে পাহাড়ের গা থেকে সেই পাথর সংগ্রহের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের গায়ে তৈরি হওয়া গর্তের চারদিকে নতুন করে গাছ জন্মায়নি। ফলে পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ এখন ন্যাড়া। তার পর প্রতি বছরই আগুন লাগছে শুশুনিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে। পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার গাছ। সম্প্রতি পাহাড়ের জঙ্গলে আগুন নিয়ন্ত্রণে বন দফতর একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এক দিকে পাথর সংগ্রহ ঠেকানো অন্য দিকে, পাহাড়ের জঙ্গলে আগুন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পাহাড়কে আবার সবুজে ঢেকে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে বন দফতর। ওই উদ্দেশ্যে গত বছর থেকে পাহাড়ের ন্যাড়া অংশে শুরু হয় বীজ বোমা নিক্ষেপ। বন দফতরের ছাতনা রেঞ্জের আধিকারিক এশা বসু বলেন, “গত বছর আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে পাহাড়ের ন্যাড়া অংশে বীজ বোমা ছুড়েছিলাম। পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে, সেই বীজ বোমা থেকে বের হওয়া গাছ বেশ দ্রুত গতিতে বড় হচ্ছে। এ বার আরও বেশি সংখ্যক বীজ বোমা তৈরি করে তা নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই এক হাজার বীজ বোমা তৈরি করে তা পাহাড়ে ছোড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বট, অশ্বত্থ— এই রকমের গাছগুলি আসলে নিজেরাই এক-একটি বাস্তুতন্ত্রের জন্ম দেয়। তা ছাড়া এই গাছগুলির ধর্মীয় গুরুত্ব থাকায় কেউ সহজে গাছগুলি নষ্ট করে না। এই দুটি কারণে এ বার বীজ বোমা তৈরির ক্ষেত্রে ওই দুটি গাছের বীজকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
অনেক সময় বীজ অঙ্কুরোদগমের পরেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিকড় মাটিতে প্রবেশ করাতে না পারলে অঙ্কুর নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই কারণে পাথর ও কাঁকরে ঢাকা মাটিতে সহজে চারা গাছ জন্ম নেয় না। সে ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা নেয় বীজ বোমা। নির্দিষ্ট অনুপাতে গোবর, জৈব সার এবং মাটি মিশিয়ে প্রথমে মণ্ড তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ সেই মণ্ড নিয়ে তা গোল বোমার আকার দেওয়া হয়। এক-একটি বোমার মধ্যে রেখে দেওয়া হয় এক বা একাধিক গাছের সুস্থ সবল বীজ। সেই বোমাগুলিকেই এককথায় বীজ বোমা বলে। রুক্ষ পাথর ও কাঁকরে ঢাকা মাটিতে এই বোমা পড়লে বৃষ্টির জলে প্রথমে বোমা ফেটে গিয়ে পাথরের খাঁজে সার সমৃদ্ধ মাটির একটি স্তর তৈরি করে। বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পর সেই মাটির স্তরে সহজেই প্রবেশ করে যায় শিকড়। ফলে খুব সহজেই চারাগাছ তৈরি হয়। পরবর্তীকালে চারাগাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের শিকড় মাটির উপরে থাকা টুকরো পাথরের আস্তরণ ভেদ করে মাটিতে চলে যায়। ফলে সবুজে ঢাকা পড়ে যায় রুক্ষ এলাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy