Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Sonarpur Incident

জামালের জমিদারি: ৫০টি সিসি ক্যামেরার পাহারা, সুইমিং পুলে কচ্ছপ, পেশা কী সোনারপুরের সর্দারের?

জামালউদ্দিনের বিশাল বাড়ির পাশে আরও একটি বাড়ি রয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, ওটাই ‘জামালের আদালত’। এখানে বসত সালিশি সভা। গ্রামের গন্ডগোল, অশান্তির ‘মীমাংসা’ করতেন জামাল।

House of Jalal Uddin Sardar

‘পলাতক’ জামালউদ্দিন সর্দারের বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
সোনারপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:৩২
Share: Save:

পাঁচিলে ঘেরা বিশাল জমি। গেট পেরিয়ে ঢুকলেই মার্বেল বসানো ঝাঁ-চকচকে রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে একটু এগোলেই চোখে পড়বে নীল-সাদা রঙের বিরাট বাড়ি। তার ধার ঘেঁষেই আরও একটি বাড়ি। বাড়ির প্রবেশপথ থেকে শুরু করে পুরো এলাকা মোড়া সিসি ক্যামেরায়। কোনও অফিস নয়, সরকারি বাংলোও নয়। এটাই সোনারপুরকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত জামালউদ্দিন সর্দারের বসতবাড়ি! সেই বাড়ির ভিতরে রয়েছে সুইমিং পুল। পাশের জলাভূমিতে ঘুরে বেড়ায় কচ্ছপ। শখ করে মাসখানেক আগেই নাকি প্রাণীটিকে নিয়ে এসেছিলেন জামাল।

সালিশি সভার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শিকলে বেঁধে মহিলাদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে ‘তৃণমূল কর্মী’ জামালের বিরুদ্ধে। ‘পলাতক’ জামালের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীরা একের পর এক অভিযোগ তুলছেন। তার মধ্যে তৃণমূল তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছে। শিকলে বেঁধে মারধরের ঘটনায় মুজিদ খাঁ এবং অরবিন্দ সর্দার নামে দু’জনকে মঙ্গলবার পাকড়াও করেছে পুলিশ। বুধবার ধৃতদের বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হচ্ছে। তার মধ্যেই সামনে এসেছে জামালের সুবিশাল বাড়ির ছবি। সেই বাড়ির পাশে আরও একটি বাড়ি রয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, ওটাই ‘জামালের আদালত’। এখানেই বসত সালিশি সভা। গ্রামের ছোটখাটো গন্ডগোল, অশান্তির মীমাংসায় ‘নিদান’ দিতেন জামাল।

অন্যের জমি হাতিয়ে সুবিশাল বাড়ি তৈরি করা, নীতিপুলিশি-সহ বিস্তর অভিযোগ উঠেছে জামালের বিরুদ্ধে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হত না বলে দাবি করেছেন স্থানীয়েরা। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে জামাল দাবি করেছিলেন, ঘোড়া আর গরুর জন্য বাড়িতে শিকল রেখেছেন। কিন্তু অভিযোগের পাহাড় জমতেই গা-ঢাকা দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এক সময় মুহুরির কাজ করতেন জামাল। বরাবরই বলিয়ে-কইয়ে লোক। কাজের সূত্রে প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে খাতির ভালই তাঁর। এখন আর মুহুরির কাজ করেন না জামাল। তবে জমির দালালি করেন। পাশাপাশি স্থানীয় রাস্তাঘাট তৈরি-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ শুরু হলে জামাল তা ‘পরিচালনা’ করতেন। কে তাঁকে সেই দায়িত্ব দিতেন, কেউ জানেন না। তবে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, টাকাপয়সা, প্রভাব-প্রতিপত্তি এতটাই যে, এলাকায় সবাই জামালকে সমীহ করে চলেন। তাই ‘অন্যায়’ দেখেও অনেকে মুখ খোলেননি বলে দাবি স্থানীয়দের। শিকলকাণ্ড সামনে আসার পরে অনেকেই সাহস করে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে এক জন রুবিজান বিবি। তাঁর অভিযোগ, একটি গন্ডগোলের জন্য তাঁর স্বামীকে সারা রাত উল্টো করে ঝুলিয়ে মারধর করা হয়েছে। তিনি গিয়ে জামালের হাতে-পায়ে পড়েছেন। স্বামী ছাড়া পাননি। উল্টে তাঁকেও মারধর করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে খবব, একাধিক বিয়ে জামালের। এক পুত্র এবং এক কন্যা তাঁর। পরিবারে আর কে কে রয়েছেন, সেই খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। জামালের সুবিশাল বাড়িতে রয়েছে বিলাসব্যসনের নানা উপকরণ। এখন তাঁর নতুন শখ নাকি কচ্ছপের। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘মাসখানেক আগে একটা কচ্ছপ এনে সুইমিং পুলে ছেড়ে দিয়েছিলেন। ওখানেই আছে কচ্ছপটা।” কিন্তু কচ্ছপ বাড়িতে রাখা তো বেআইনি! শুনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন স্থানীয়েরা। যেন জামালের কাছে বেআইনি বলে কিছু নেই।

পুলিশ সূত্রে খবর, জামালের খোঁজ চলছে। অন্য দিকে, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক লাভলি মৈত্রের দাবি, জামাল তৃণমূলের কেউ নন। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত জামালকে গ্রেফতার করা হবে। আইন আইনের পথে চলবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Sonarpur Jamal Uddin Sardar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE