বছর তিনেক আগে মুরারই থানার কলুতোড় গ্রামের ঘটনা। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের এক দুপুর। বাড়ির লোকেরা মাঠের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মহিলারা ঘরের কাজকর্ম করছিলেন। তারই মধ্যে গমের কাঁচকি নিয়ে রান্নাশালার উনুনে বাচ্চারা রান্না করতেই অসতর্কে সেই আগুনে ছড়িয়ে খড়ের চালে। ক্রমে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায় এলাকার ৩৪টি বাড়ি। রামপুরহাট থেকে দু’টি রেলগেট, ভাঙাচোরা জাতীয় সড়ক এবং নলহাটি-রাজগ্রাম রাস্তা পেরিয়ে ৫০ কিলোমিটার দূরের ওই গ্রামে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন পৌঁছনোর আগেই সব শেষ।
এমন ঘটনায় অবাক হননি বাসিন্দারা। কারণ যে মহকুমার আটটি ব্লকের জন্য দমকলের মাত্র দু’টি ইঞ্জিন বরাদ্দ, সেই এলাকায় প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই অগ্নিকাণ্ডের ভবিষ্যৎ একই হয়— সময়মতো পৌঁছতে পারে না দমকলের গাড়ি। ঘটনা হল, রামপুরহাট মহকুমার একমাত্র দমকল কেন্দ্রটি অবস্থিত রামপুরহাট শহরে। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত সেখানে পরের বাড়িতে অনেকটা ক্যাম্পের মতো করে থাকতে হয়েছে। বছর দশেক আগেও রামপুরহাটের ছ’ফুঁকো রেলসেতুর তলা দিয়ে ইঞ্জিন নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে যানজটে আটকে থাকতে হতো দমকল কর্মীদের। ওই রেলসেতু সংস্কারের পরে আর তেমন যানজট হয় না। রামপুরহাট মহকুমায় দমকল কর্মীরাও বছরখানেক আগে তাঁদের স্থায়ী অফিসঘর এবং কোয়ার্টার পেয়েছেন। বর্তমানে সেখান থেকেই দমকল বিভাগকে নজর রাখতে হয় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস করা এই গোটা মহকুমার।
অরক্ষিত এলাকা
এই মহকুমায় ছ’টি থানা, ৮টি ব্লক। অথচ একটি মাত্র দমকল কেন্দ্র। তার উপরে রয়েছে রামপুরহাটে তিনটি, মল্লারপুরে দু’টি, মুরারইয়ে ৩টি এবং নলহাটি এলাকায় ৫টি রেলগেট। এই সমস্ত রেলগেট পেরিয়ে আগুন নেভাতে কোথাও ৫৫ কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এলাকায়, কোথাওবা ৪৫ কিলোমিটার দূরে মুর্শিদাবাদ সীমান্ত এলাকায় দমকল কর্মীদের ছুটে যেতে হয়। এর পরেও আছে দমকল কর্মীদের ছোট গাড়ির (২২০০ লিটার) অভাব। দমকল কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, রামপুরহাট কেন্দ্রে ৫০০০ লিটার জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি গাড়ি আছে। তার মধ্যে একটির হাল ভাল নয়। হাতে ছোট গাড়ি না থাকায় শহরের অলিগলি পেরিয়ে গ্রামের ছোট রাস্তায় পৌঁছতে সময় লাগে কর্মীদের। আবার অল্প কর্মী নিয়েই রাতদিন কাজ করতে হচ্ছে। নলহাটিতে একটি দমকল কেন্দ্রের প্রস্তাব রাজ্য সরকার অনুমোদন করলেও জমি না মেলায় তার কাজ শুরু হয়নি। অথচ নলহাটিতে দমকল কেন্দ্র থাকলে নলহাটি ও মুরারই থানার মধ্যে চারটি ব্লকের মানুষ উপকৃত হবেন।
অসহায় অপেক্ষা
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। রাজগ্রাম বাজার এলাকার একটি কাপড়ের দোকানের গুদামঘরে আগুন লাগে। এলাকাবাসী দোকানের দোতলা থেকে ধোঁয়া বেরতে দেখে দমকলে খবর দেওয়ার জন্য সংবাদমাধ্যমকে প্রথমে জানান।রামপুরহাট থেকে রাজগ্রাম প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ। সময় লাগবে প্রায় দু’ঘণ্টা। এলাকার বাসিন্দাদের অসহায় অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। এ দিকে আগুন বাড়লেই বাজারের সমস্ত দোকান শেষ হয়ে যাবে। শেষমেশ ১০০ মিটার দূরে পুকুরের হাঁটুসমান জল দিয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে আগুন নেভানো হয়। আবার দিন কয়েক আগে রামপুরহাটের জয়কৃষ্ণপুর এলাকায় ছাই ফেলার আগুন থেকে একটি গোয়াল ও খড়ের পালুই পুড়ে যায়। সেখানেও সময়মতো পৌঁছতে পারেনি দমকল। কারণ, তার ঠিক আগেই মাড়গ্রাম থানার দুনিগ্রাম এলাকায় আগুন নেভাতে গিয়েছিলেন দমকল কর্মীরা। জৃয়কৃষ্ণপুরে পৌঁছতেই প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় কর্মীদের।
জলের সঙ্কট
রাজগ্রাম, মাসড়া পঞ্চায়েত এলাকাগুলি খরাপ্রবণ। সেখানে বৃষ্টিই ভরসা। গরমে এলাকার খালবিল, পুকুর শুকিয়ে যায়। ফলে ওই সমস্ত এলাকায় তীব্র জলসঙ্কট নিয়েই কাজ করতে হয় দমকলকে। রামপুরহাট দমকল কেন্দ্রের ওসি বামদেব চৌধুরী জানান, রামপুরহাট ১ ব্লকের নারায়ণপুর, মাসড়া এই দুই পঞ্চায়েত ছাড়াও দক্ষিণে মহম্মদবাজার এলাকার কিছু অংশে জলসঙ্কট তীব্র। দু’দিন আগেও মুরারই থানা এলাকায় একটি গ্রামে কাজ করতে গিয়ে ছোট মেশিন না থাকায় শহরের অলিগলি ভেঙে গ্রামের সরু পথে ঢুকতে অসুবিধা হয়েছিল দমকল কর্মীদের। তার আগে অবশ্য গ্রামবাসী একটি বড় পুকুরে যন্ত্র ফেলে পাইপের মাধ্যমে জল নিয়ে এসে আগুন নেভাতে সক্ষম হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy