নানুরে আমন ধানের বীজতলার জন্য তৈরি করা হচ্ছে জমি। নিজস্ব চিত্র।
বোরো ধান ঘরে উঠেছে। কিন্তু বোরো নয়, সরকারি সহায়ক মূল্যে আমন ধান বিক্রি করার জন্য বুধবার সকালে দুবরাজপুরের কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্রের সামনে (সিপিসি) অপেক্ষা করছিলেন রূপলাল মণ্ডল ও মহম্মদ পিয়ার জান। প্রথম জনের বাড়ি মেটেলা, দ্বিতীয় জনের বাড়ি কান্তর গ্রামে। দুই চাষিরই বক্তব্য, খরিফের ফসল বিক্রির জন্য নভেম্বরে নাম নথিভুক্ত করার পরে এ দিন ধান কেনার জন্য ডাকা হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘১৫ কুইন্টাল করে ধান নেবে বলেছে। আমন ধান ওঠার পরে তা বিক্রি করতেই যদি আট-নয় মাস অপেক্ষা করতে হয়, তা হলে বোরো চাষিদের কী হবে? এত দিন আমরা আমন ধান রাখবই বা কোথায়?’’
এই সমস্যা জেলার বহু প্রান্তিক চাষিরই। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার ধান কেনা শুরু হয়েছে গত ২ নভেম্বর থেকে। চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সরকারি সহায়ক মূল্য ১৮৬৮ টাকা। চাষিরা নিজেরা সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ধান বিক্রি করলে কুইন্টাল পিছু আরও ২০ টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বার ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টনের মধ্যে সীমিত থাকে। এ বার লক্ষ্যমাত্রা ২ লক্ষ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন।
খাদ্য ও সরবরাহ দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ধান কেনা হয়েছে। কেনা হচ্ছে বোরো ধানও। মঙ্গলবার পর্যন্ত কেনা হয়েছে ২লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৮ মেট্রিক টন ধান। তাতে বোরোর পরিমাণ ৯ হাজার মেট্রিক টন। যা জেলা জুড়ে মোট উৎপাদিত ধানের একটা ছোট্ট অংশ মাত্র বলে দাবি ধানচাষিদের। ধানচাষিদের একাংশের ক্ষোভ, যে উদ্দেশ্যে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার ব্যবস্থা, তার লাভ নিচ্ছেন মুষ্টিমেয় চাষি। সীমিত পরিমাণ ধান নিয়ে কোনও প্রান্তিক চাষির বাড়ি থেকে বহু দূরের ক্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ঝামেলা, কুইন্টাল প্রতি ৫- ৬ কিলোগ্রাম করে বাটা নেওয়া, টাকা অ্যাকাউন্টে পেতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করা তো আছেই। সবচেয়ে সমস্যা বাড়িয়েছে, নাম রেজিস্ট্রেশন করিয়েও ধান বেচার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকা। এতটা সময় দেওয়ার উপায় নেই প্রান্তিক চাষিদের পক্ষে। অগত্যা ভরসা মধ্যসত্ত্বভোগীরা। সে ক্ষেত্রে সরকারি সহায়ক মূল্যের চেয়ে বেশ কিছুটা কম দামেই ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্চেন অনেক চাষি।
জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য ‘অভাবি’ বিক্রির কথা মানছেন না। জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯টি কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্র (সিপিসি) , ৫টি সেকেন্ড সিপিসি এবং ১টি অ্যাডিশনাল সিপিসি মিলিয়ে জেলায় ১৯টি ব্লকে মোট ক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২৫। বেশ কিছু কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি থেকেও ধান চলছে। ধান কেনার তালিকায় রাজ্য সরকার মনোনীত নাফেড, বেনফেড, ইসিএসসি এবং এফসিআই-ও আছে। শিবির করছে তারাও। তার পরেও এত সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের মত।
তবে, আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কতগুলি সমবায় ধান কিনছে, তার প্রতিদনের তথ্য সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা পড়ছে না। জেলায় ৫৩ জন চালকল মালিকের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হলেও, অতিমারি, মন্দা ইত্যাদি নানা কারণে তাঁদের একাংশ ধান কেনায় তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy