থানা চত্বরে সমীর লেটের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এ বার সাঁইথিয়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলে জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। বুধবার সিউড়িতে, জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ‘দোষী’ পুলিশকর্মীদের যথাযথ শাস্তির দাবিতে লিখিত অভিযোগ করা হয় পরিবারের পক্ষে। তদন্ত চলছে, জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
সোমবার সকালে সাঁইথিয়া থানা চত্বরেই উদ্ধার হয় রামপুরহাট শহরের বামনিগ্রামের বাসিন্দা সমীরের ঝুলন্ত দেহ। সিউড়ি হাসপাতালে মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের পরে দেহ বামনিগ্রামের কাছে জাতীয় সড়কে রেখে মঙ্গলবার রাতে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান পরিবারের লোকজন। এ দিনও পুলিশ সুপারের অফিস চত্বরে মৃতের আত্মীয়দের দাবি, তাঁরা যখন সমীরের দেহ দেখতে যান তখন পরনে যে জামাকাপড় ছিল, তা পরে সমীর সোমবার বাড়ি থেকে বের হয়নি।
সমীরের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল বলেও দাবি করেছেন তাঁর জামাইবাবু তথা পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চের জেলা সহ-সম্পাদক শিবদাস লেট। পুলিশ ‘তড়িঘড়ি’ দেহের ময়না তদন্ত করে দেহ দাহ করতে ‘বাধ্য’ করেছে বলেও শিবদাস এবং সমীরের দিদি সুমতি লেটের অভিযোগ। তাঁরা এ দিন বলেন, ‘‘পরিবারের অমতে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার ভয় দেখিয়ে সমীরের মৃতদেহ দাহ করার ব্যবস্থা করে পুলিশ।’’
এই বিষয়ে সাঁইথিয়া থানার ওসি কিছু মন্তব্য করতে চাননি। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, "আমি এখনও অভিযোগপত্র
দেখিনি। তবে, ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। যদি কেউ দোষী হন, তা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সাঁইথিয়া থানার এই ঘটনা নানা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে জেলা পুলিশকে। সূত্রের খবর, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে একাধিক পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশ সুপার জানান, প্রতিটি থানা চত্বরে ২৪ ঘণ্টা নজর ক্যামেরার ফুটেজের উপরে নজরদারি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কোনও থানা এলাকার কোনও অংশ যদি নজর ক্যামেরার বাইরে থাকে, তা হলে দ্রুত সেখানে নজর ক্যামেরা লাগানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে থানাগুলিকে। পাশাপাশি কোন থানায় কে, কখন, কী প্রয়োজনে আসছে, তাও নথিভুক্ত করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও ব্যক্তি যদি অপ্রয়োজনে থানা বা থানার আশেপাশে ঘোরাফেরা করেন সে ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, “নিরাপত্তা আঁটোসাটো করা এবং নজর ক্যামেরা ফুটেজের উপর নজরদারি রাখার উপরেই প্রাথমিকভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)