ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে বিষ্ণুপুর শহরের আনাচেকানাচে। সে সব ইতিহাসের টুকরো মুহূর্ত এ বার শহরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে সুদৃশ্য ফলকে তুলে ধরছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে বহিরাগত পর্যটক, সবাইকে বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্য জানানোই এর লক্ষ্য।
বিষ্ণুপুর শহরের সাতটি জায়গায় বসছে এই ফলক—গুমঘর, সিন্ধুবালা প্রাথমিক স্কুলের সামনে, বিষ্ণুপুর হাই স্কুল মোড়, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে লাইটহাউস মোড়, মিশ্রিশোল চেকপোস্টে, হাতিপুল ও বিড়াই নদীর কাছে। তিনটি শহরের মধ্যে, চারটি শহরের প্রবেশপথে।
বেশ কয়েক বছর আগে বিষ্ণুপুর পুরসভার উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন প্রবেশপথে এই ধরনের দিগনির্দেশক ফলক বসানো হয়েছিল। এখন সেগুলিকেই নতুন সাজে সাজানো হচ্ছে। কোনও ফলকে লেখা থাকছে, মল্লরাজ আমলের নিরাপত্তা বলয়, বহিঃশত্রুর মোকাবিলায় জলপূর্ণ পরিখার ভূমিকা, সেনাবেষ্টিত পাথর দরজার গুরুত্ব। কোথাও লেখা শ্রী রামকৃষ্ণদেবের আগমন ও তাঁর অনুভূতির কথা। থাকছে বিষ্ণুপুর ঘরানার শিল্পী যদুভট্ট, গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের কীর্তিকথাও। প্রত্নগবেষক মানিকলাল সিংহ, চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত, ইতিহাসবিদ ফকিরনারায়ণ কর্মকার প্রমুখের চোখে বিষ্ণুপুরের কথাও লেখা হচ্ছে। বিদেশি পর্যটকদের অনুভূতিও লেখা থাকবে ফলকে।
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “এ সব ফলকের অধিকাংশ আগে বসানো হয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছিল। সেগুলি নতুন ভাবে সাজানো হচ্ছে। এ সব ফলক দেখে পর্যটকেরা প্রাচীন বিষ্ণুপুর সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পারবেন।’’ অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ প্রাচীন মন্দিরের কাছে অবৈধ নির্মাণের চেষ্টা করেন। মহকুমাশাসকের আশা, এ সব ইতিহাস জানলে তাঁরাও প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট হবেন।
সম্প্রতি বর্ধমান থেকে কয়েকজন শিক্ষক বেড়াতে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরে। রাজদরবারের বড় পাথর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আশিস ঘোষ, নেপাল চক্রবর্তী, উদয়ভানু রায়, মৌসুমী ক্ষেত্রপালেরা বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুরের বিশ্বখ্যাত মন্দির, পৌরাণিক কাহিনী, কারুকার্য সত্যি বিরল। তবে মন্দির লাগোয়া পরিবেশ আরও ভাল হওয়া উচিত। পাথর দরজার রেলিং যেন স্থানীয়দের কাপড় শুকোতে দেওয়ার জায়গা হয়ে উঠেছে। সে দিকেও নজর দেওয়া দরকার।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)