বেগুন চাষিরা বাইরের বাজারে ফসল বিক্রি করতে না পেরে সমস্যায় পড়েছেন। —নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় বাজারের চেয়ে তাদের এত দিন ভরসা ছিল বাইরের বাজারে। বাইরের বাজার বলতে বোলপুর, গুসকরা, বর্ধমান, শিয়ালদহ তো ছিলই, সেই সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ, বিহারের গয়া, ভাগলপুর— এই সমস্ত বাজারে তাঁদের এলাকার উৎপাদিত বেগুন, কচুর ভালো কদর ছিল। স্থানীয় বাজারের চেয়ে ওই সমস্ত বাজারে বিক্রি করে দ্বিগুন লাভের মুখও দেখত ওরা। কিন্তু ন’ মাস ধরে ট্রেনের পার্সেল বুকিং বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন মুরারই থানার রাজগ্রাম, গোঁড়সা, মহুরাপুর অঞ্চল সহ বিস্তীর্ণ এলাকার সব্জি চাষিরা।
চাষিদের দাবি, এ ব্যাপারে রাজগ্রাম ব্যবসায়ী সংগঠন পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের সঙ্গে একাধিক বার লিখিত এবং মৌখিক ভাবে কথা বললেও সমাধান সূত্র মেলেনি। এলাকার বেগুন চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল অর্ধেকের কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। রেলের পার্সেল বুকিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য এলাকার সব্জির আড়তদাররাও ব্যবসা করতে পারছেন না। চাষিরা বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি এমনই বেগুন চাষিরা বাইরের বাজারে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে না পেরে যেমন সমস্যায় পড়েছেন। এমনটা চললে এলাকার কচু চাষিরাও সমস্যার মধ্যে পড়বেন।’’
রাজগ্রাম এলাকার বেগুন চাষি সাবির খান তিন বিঘে জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘চৈত্র মাস থেকে বেগুন গাছের চারা লাগিয়ে সার, চাপান সার, সেচের জল দিয়ে বেগুন গাছে ফলন এসেছে। আর এখন এই সমস্যা। বাজারে পাঠাতে পারছি না।’’ বিঘে প্রতি খরচ ও বর্তমান বাজার দর প্রসঙ্গে গোঁড়শা অঞ্চলের চাষি হেমন্ত মণ্ডল বলেন, “এক বিঘে জমিতে বেগুন চাষ করতে প্রায় আঠার থেকে কুড়ি হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘে জমিতে প্রতিদিন পঞ্চাশ থেকে ষাট কেজি বেগুন হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে সেই বেগুন পাঁচ থেকে সাত টাকা পাইকারি বাজার দরে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এর ফলে বেগুন চাষে যে খরচ তার থেকে লাভ হচ্ছে না বললেই চলে।”
এলাকার অধিকাংশ বেগুন চাষির দাবি, গত মরসুম পর্যন্ত বেগুন বাইরের বাজারে বিশেষ করে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ, বিহারের গয়া, ভাগলপুর— এই সমস্ত এলাকায় ১৩০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা কুইন্ট্যাল দরে বিক্রি করেছেন চাষিরা। কিন্তু ছ’মাস আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের পার্সেল বুকিং বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এ বছর তাঁরা বিক্রি করতে পারছে না।
রেল কর্তৃপক্ষ বন্ধ করলেও কেন তাঁরা জেনে শুনে বেগুন চাষের ঝুঁকি নিয়েছিলেন?
চাষিরা বলছেন, বেশির ভাগই ভেবেছিলেন রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বললে হয়তো ফের বুকিং চালু হবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামার কথা ভাবছেন তাঁরা।
রাজগ্রাম ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে গোবিন্দলাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এলাকার চাষিদের দুর্দশার কথা ভেবে একাধিক বার বুকিং পার্সেল চালু করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। মাঝে মাঝেই হাওড়া ডিভিশনের কমার্শিয়াল ম্যানেজারের সঙ্গে কথাও বলেছি। কিন্তু তাঁরা বিষয়টা এখনও বিবেচনার মধ্যে রাখা আছে বলে জানাচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে এলাকার চাষিদের ক্ষোভ আরও বাড়বে।’’ এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি হাওড়া ডিভিশনের সিনিয়র কর্মাশিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy