Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2020

নিয়ম বিসর্জনের নালিশ

বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দশমীর দিন পুলিশের উপস্থিতিতে বহু পুজো কমিটির বিসর্জনেও বড় মিছিল দেখা গিয়েছে।

বান্দোয়ানের চিলায় বিসর্জনের এই শোভাযাত্রা বিতর্ক তৈরি করেছে।

বান্দোয়ানের চিলায় বিসর্জনের এই শোভাযাত্রা বিতর্ক তৈরি করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০ ০০:২৫
Share: Save:

মণ্ডপের বাইরের ভিড় সামলানোই চ্যালেঞ্জ ছিল। অষ্টমীর রাত থেকে ভিড় যেন পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল।

পুরুলিয়া শহর, নিতুড়িয়া, মানবাজার, ঝালদা ও কাশীপুর রাজবাড়ির পুজো থেকে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শহরের ভিড় দেখে বোঝাই মুশকিল ছিল যে করোনা এখনও বিদায় নেয়নি। স্বাস্থ্য-বিধি ভাঙার সে খেলা দেখা গেল বিসর্জনেও। শহরে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও কিছু গ্রামাঞ্চলে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রার ভিড় দেখে অনেকেই চিন্তিত। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পুজো শেষে বাঁকুড়ার স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকদের একাংশের অভিযোগ, ঠাকুর দেখার আবেগে দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি অনেক জায়গাতেই। মাস্ক না পরে বের হওয়া মানুষের সংখ্যাও ছিল প্রচুর। অনেকেরই অভিযোগ, দর্শনার্থীদের জমায়েত নিয়ন্ত্রণ বা মাস্ক না পরে বেরোনো মানুষজনকে সচেতন করার ক্ষেত্রে পুলিশি সক্রিয়তাও তেমন চোখে পড়েনি।

যদিও বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “আমি নিজে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের কাছে গিয়েছি। সব জায়গাতেই মণ্ডপের ব্যারিকেডের বাইরে থেকে দর্শনার্থীরা ঠাকুর দেখেছেন। ভিড় সে ভাবে ছিল না। পুলিশকর্মী ও পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেছেন।”

যদিও পুজোয় ঠাকুর দেখতে বার হওয়া মানুষজন অবশ্য অন্য কথাই বলছেন। বাঁকুড়া শহরের দশেরবাঁধের বাসিন্দা শ্রীবাস দে মোদক বলেন, “অষ্টমী ও নবমীতে প্রচুর মানুষ বেরিয়েছিলেন। ভিড়ের চাপে দাঁড়ানো মুশকিল হচ্ছিল। বহু মানুষ মাস্ক না পরে ঘুরেছেন দেখে আঁৎকে উঠেছি। পুলিশের তরফে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে বা মানুষজনকে মাস্ক পরাতে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।”

বাঁকুড়া শহরের একটি পুজো কমিটির কর্তা বলেছেন, “আমরা দফায়-দফায় সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থীকে মণ্ডপের সামনে আনার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যায়নি।”

বিসর্জন ঘিরেও অভিযোগ কম নয়। বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দশমীর দিন পুলিশের উপস্থিতিতে বহু পুজো কমিটির বিসর্জনেও বড় মিছিল দেখা গিয়েছে। বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপারের অবশ্য দাবি, “এ বারের বিসর্জনে কোথাও বড় মিছিল হয়নি।”

পুরুলিয়া শহর, নিতুড়িয়ায় পুজোয় নবমীর দিন ভিড় চোখে পড়ে। তবে তা অন্য বারের তুলনায় কম ছিল। রাস্তায় নেমে পুলিশকে সামাল দিতে দেখা যায়। তবে ভিড়ের মধ্যে এখানেও অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। হুড়া থেকে একটি গাড়িতে দর্শনার্থীরা কাশীপুর রাজবাড়িতে পুজো দেখতে এসেছিলেন। প্রায় কারও মুখেই মাস্ক না থাকায় পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। শেষমেশ মাস্ক জোগাড় করে রাজবাড়ির প্রতিমা দর্শনের ছাড় পান তাঁরা। বিজয়াতে অনেক মণ্ডপে সিঁদুরখেলা নিষিদ্ধ করা হলেও পুরুলিয়া শহরের হুচুকপাড়া সর্বজনীনের মণ্ডপে মাস্ক পরে সিঁদুর খেলায় মাতেন মহিলারা। এক মহিলা বলেন, ‘‘দূরত্ব মেনে আমরা সিঁদুরখেলায় যোগ দিই।’’

তবে বিসর্জন নিয়ে দু’-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে নিয়ম ভাঙার বিশেষ অভিযোগ পুরুলিয়ায় শোনা যায়নি। দশমীর দুপুরে রঘুনাথপুরের মুনসেফডাঙা সর্বজনীনের বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ভিড় থাকলেও মাইক বাজানো হয়নি। শুধু ঢাক বেজেছে। তবে বান্দোয়ানের চিলা গ্রাম সর্বজনীনের পুজোয় মাইক বাজিয়ে দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে শতাধিক লোক শোভাযাত্রায় শামিল হন বলে অভিযোগ। ওই পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা উজ্জ্বল দে বলেন, ‘‘পুলিশের নির্দেশ যতটা সম্ভব মানা হয়েছে। এ বার গ্রামের প্রথম দুর্গাপুজো হওয়ায় লোকজন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শোভাযাত্রায় এসেছিলেন।’’

আদ্রায় একাদশী পর্যন্ত ৪০ শতাংশ পুজোর বির্সজন হয়েছে। তবে বড়পুজোগুলির সব ক’টির বির্সজন বাকি। পুলিশ সূত্রের খবর, ছ’টি বড় পুজোর বির্সজন হবে আজ, বুধবার।

পুরুলিয়া শহরে দশমী পর্যন্ত বির্সজন হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ পুজোর। তবে মাইক বাজানো হয়নি। ভিড়ও তেমন ছিল না। রথতলা সর্বজনীনের কর্মকর্তা শ্রীমন সরকার বলেন, ‘‘গাড়িতে প্রতিমা নিয়ে মণ্ডপের পাশেই বুচা বাঁধে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।” ইউনিয়ন ক্লাবের কর্মকর্তা হীরক সাউ জানান, দশমীতে তাঁরা প্রতিমা বির্সজন দিয়েছেন। এ বার পুলিশ আগেই জানিয়েছিল, শোভাযাত্রা করে দূরের জলাশয়ে বির্সজন দেওয়া যাবে না। পুরুলিয়া শহরের অধিকাংশ পুজো উদ্যোক্তা তা মেনেছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy