‘সিনেপ্রেমী দিবস’-এর কার্যকারিতা নিয়ে মুখ খুললে অতনু ঘোষ, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রানা সরকার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বাংলা, হিন্দি নির্বিশেষে সিনেমার পাশে দাঁড়ান— ১৭ জানুয়ারি দিনটি এমনই বার্তা ছড়িয়ে দিতে চলেছে সিনেপ্রেমীদের মধ্যে। ওই দিন ‘সিনেমা লাভার্স ডে’ বা ‘সিনেপ্রেমী দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত। যাঁরা সারা বছর ছবি দেখেন বা দেখতে ভালবাসেন, তাঁদের কাছেও দিনটি বিশেষ। এ দিন টিকিটের মূল্য এতটাই কম যে, সিঙ্গল স্ক্রিনের দর্শকও হইহই করে মাল্টিপ্লেক্সে বসে আরাম করে ছবি দেখতে পারেন। যদিও মুম্বই এবং কলকাতার মধ্যে টিকিটের মূল্যের ফারাক রয়েছে। মুম্বইয়ে যে কোনও হিন্দি ছবির টিকিট এ দিন মাত্র ৯৯ টাকায় পাওয়া যাবে। কলকাতায় সেই মূল্য সামান্য বেশি, ১১২ টাকা। এই দুই মূল্য নতুন এবং পুরনো সব ধরনের ছবির জন্যই বরাদ্দ। বাকি কথায় যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন ছবি এই দামে দেখতে পাবেন দর্শক।
একাধিক সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ইমার্জেন্সি’ আর ‘আজ়াদ’ মুম্বইয়ে ৯৯ টাকায় দেখা যাবে। এ ছাড়াও তালিকায় থাকছে ‘ফতেহ্’, ‘গেম চেঞ্জার’, ‘মুফাসা: দ্য লায়ন কিং’, ‘নসফেরাতু’ ইত্যাদি। ২০ মিনিটের অতিরিক্ত দৃশ্য-সহ ‘পুষ্পা ২’ দেখতে পাবেন দর্শক। থাকছে দু’টি হলিউডি ছবি ‘উলফ ম্যান’ এবং সম্ভাব্য অস্কার প্রতিযোগী ছবি ‘আ রিয়েল পেন’। রামগোপাল বর্মার ‘সত্য’ও রয়েছে তালিকায়। দর্শকের এখন হাপিত্যেশ প্রতীক্ষা, অয়ন মুখোপাধ্যায়ের ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবির টিকিটের দামও যদি এই সুযোগে কমে। এই মুহূর্তে ছবির টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ১৫০ টাকা। উল্লেখ্য, কর্ণ জোহর প্রযোজিত এই ছবি পুনর্মুক্তির পরেও প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানছে!
কলকাতার সিনেপ্রেমীদের জন্য ১৭ জানুয়ারি পরিবেশকেরা কী উপহার দিচ্ছেন? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল পরিবেশক বাবলু দামানি-সহ একাধিক পরিবেশকের সঙ্গে। তাঁরা জানিয়েছেন, ৯৯ টাকা নয়, বিশেষ দিনে টিকিটের দাম থাকবে ১১২ টাকা। ‘ইমার্জেন্সি’ আর ‘আজ়াদ’-এর সঙ্গে বাংলা ছবি ‘খাদান’, ‘সন্তান’, ‘চালচিত্র’ এই তালিকায় থাকছে। সিনেমার জন্য উৎসর্গীকৃত এই দিনে দর্শকদের ভিড় কেমন? প্রশ্ন ছিল প্রথম সারির এক মাল্টিপ্লেক্স কর্তার কাছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেই পরিবেশকের কথায়, “কম দামে মাল্টিপ্লেক্সে বসে পছন্দের ছবি দেখার আকর্ষণ মোটেই ছাড়েন না কলকাতার দর্শকেরা। ফলে, এই দিন ব্যবসা বেড়ে দ্বিগুণ।”
এ বার প্রশ্ন, ছায়াছবির জন্য একটি প্রতীকী দিন ‘সিনেপ্রেমী দিবস’ কতখানি কার্যকর? দর্শকদের মনে এই দিন সিনেমা সম্পর্কে কতটা বাড়তি আগ্রহ তৈরি করে? না কি, ‘নারী দিবস’, ‘পিতৃ দিবস’, ‘শিশু দিবস’-এর মতো ‘সিনেপ্রেমী দিবস’ও স্রেফ একটি ‘দিন’? এই প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল পরিচালক অতনু ঘোষ, অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রযোজক রানা সরকারের সঙ্গে। “এমন দিনের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই”, সাফ দাবি রাহুলের। ব্যস্ততার ফাঁকে তাঁর মত, “সারা বছর সিনেমা দেখি। সিনেমা ভালবাসি বলে। অভিনয় পেশা বলে।” তাই এই দিনটি থাকলেও তিনি ছায়াছবিতে নিবেদিতপ্রাণ, না থাকলেও।
এই বক্তব্যে মতামত দিয়েছেন অতনুও। তাঁরও প্রথম কথা, “আমার তো সিনেমা দেখার বিশেষ কোনও দিন নেই!” পরিচালক আরও জানিয়েছেন, ধরা হয়, ১৮৯৫-এ সিনেমার জন্ম। ১৯৯৫-এ বিখ্যাত ফরাসি এবং চেক লেখক মিলান কুন্দেরাকে একটি ফরাসি পত্রিকা সিনেমার ১০০ বছরের উপরে একটি প্রবন্ধ লেখার অনুরোধ জানিয়েছিল। জবাবে লেখক জানিয়েছিলেন, তিনি লিখবেন না। স্বপক্ষে যুক্তি, সিনেমার প্রতি দর্শকের টান বা ভালবাসা ১০০ বছরে মরে গিয়েছে। ইদানীং, আরও এক খ্যাতনামী চলচ্চিত্রকার মার্টিন স্করসেসিও বলছেন, “যে ছবি দেখে ছোটবেলায় আমরা উদ্বুদ্ধ হতাম, সেই ধরনের ছবি আর হয় না। ফলে, ছবির প্রতি সেই আকর্ষণ, সেই ভালবাসা আর নেই।” এই জায়গা থেকে অতনুর মনে হয়েছে, ‘‘‘সিনেপ্রেমী দিবস’ যদি দর্শকমনে ছায়াছবির প্রতি হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা নতুন করে বুনে দিতে পারে, তা হলেই বিশেষ দিনের সার্থকতা। তবেই সিনেমা থাকবে চিরকাল।”
প্রযোজক রানাও কি একই মতে বিশ্বাসী? তাঁর যুক্তি, “টিকিটের দাম কমালে অবশ্যই দর্শক বাড়ে, বাজার অর্থনীতি তা-ই বলে। একটি দিন প্রতীকী দিবস হতেই পারে। তাতে সিনেমা সম্বন্ধে কতটা সচেতনতা বাড়বে, সেটাই প্রশ্ন।” সেই সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন, শুধুমাত্র একটি দিন টিকিটের দাম কমিয়ে দর্শক টানার পক্ষে তিনি কোনও দিন-ই নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy