Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
আঁরোয়ার পরে রসুলপুর

বোমা, গুলির লড়াইয়ে জখম ৫

তবে এ নিয়ে অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘রসুলপুরে বিয়েবাড়ি থেকে বেলবোমা ছিটকে মণ্ডপে পড়েছে।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৯ ০২:০০
Share: Save:

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান মাত্র। দুবরাজপুরের আঁরোয়া গ্রামে বোমাগুলির লড়াই শেষ হতে না হতেই ফের বোমাগুলির লড়াইয়ে কেঁপে উঠল এই ব্লকেরই রসুলপুর। জখম হলেন মহিলা সহ পাঁচ জন। বুধবার রাত সাড়ে দশটার ঘটনা। বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আঁরায়ো গ্রামের মতো যুযুধান বিজেপি-তৃণমূলের সংঘাত নয়। জেলা তৃণমূলের নেতারা বরং আড়ালে মেনে নিয়েছেন, সবই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। আহতদের সকলে এক পক্ষের। প্রত্যেকের শরীরে ছড়রা গুলি লেগেছে বলেও অভিযোগ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আহতদের শরীরে আঘাত গুলির কিনা, এখনই সেটা বলা না গেলেও প্রত্যেকের শরীরে স্‌প্লিন্টার জাতীয় ‘ফরেন এলিমেন্ট’ রয়েছে। আহতদের প্রথমে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, সেখান থেকে সিউড়ি জেলা হাসপাতাল পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহের কথায়, ‘‘দু’পক্ষের অভিযোগ হয়েছে কি না জানা নেই। তবে তদন্ত করে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তল্লাশি চলছে।’’ তবে এ নিয়ে অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘রসুলপুরে বিয়েবাড়ি থেকে বেলবোমা ছিটকে মণ্ডপে পড়েছে।’’ তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবরাজপুরের হেতমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রসুলপুর গ্রামে শাসকদলের দুটি গোষ্ঠী রয়েছে। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন শেখ বাবলু, অন্যটির আলিম মোল্লা। সরকারের বিভিন্ন কাজ করানো থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে দু’পক্ষই সক্রিয়। দলের পদাধিকারী না হলেও দুই নেতারই বেশ কিছু অনুগামী রয়েছেন গ্রামে। রাশ কোন পক্ষের হাতে থাকবে, এই নিয়ে চাপানউতোর ছিলই। বুধবার রাতে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে অনেকের মত।

আলিম মোল্লার অনুগামীদের অভিযোগ, বুধবার শেখ বাবলুর আত্মীয়ের বিয়ে ছিল। সেই অনুষ্ঠানে রাস্তায় বোমা ফাটানোর প্রতিবাদ করায় আচমকা তার লোকেরা বোমা-বন্দুক নিয়ে হামলা চালায়। প্রথমে গ্রামের মূল রাস্তার ধারে তপন বাউড়ি, নির্মল বাউড়ি, বাবলু বাউড়ির বাড়িতে বোমা ফাটায়। সেখান থেকে ছুটে গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় গুলি চালালে শেখ জহির, শেখ নবি হোসেন, শেখ সফিউল্লা, শেখ নসিবউদ্দিন এবং জরিনা বিবি নামে এক প্রৌঢ়া আহত হন। আলিম মোল্লার দাবি, ‘‘আমি এলাকায় শান্তি চাই। কিন্তু, বিনা প্ররোচনায় আমার লোকেদের বাড়িতে হামলা করা হল।’’

শেখ বাবলুর অনুগামীদের অভিযোগ, বিয়েবাড়ির সামনে তাঁদের সমর্থক দু’জনকে মারধর করে ঝামেলার সূত্রপাত করে আলিম মোল্লার অনুগামীরাই। তার পরই দু’পক্ষের সংঘাত শুরু হয়। বৃন্দা বাউড়ি, ঝুমা বাউড়িদের অভিযোগ, ‘‘বাবলুর অনুগামী হওয়ায় তাঁদের বাড়ির সামনে দেদার বোমা ফেটেছে।’’ বাবলুর অনুগামীদের দাবি, দু’পক্ষের সংঘতের মধ্যে এক পক্ষেরই কয়েক জন আহত হওয়ায় অভিযোগ তুলতে সুবিধা হচ্ছে। যদিও ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন শেখ বাবলু। তিনি বলছেন, ‘‘ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এ বিষয়ে কিচ্ছু জানি না। আমার সঙ্গে আলিম মোল্লার সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। বিজেপির উস্কানিতে কারা এমন কাণ্ড করল পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেখুক।’’ বিজেপি অবশ্য অভিযোগ উড়িয়েছে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, বুধবার রাতে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দু’পক্ষের ঝামেলায় এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। বোমাগুলির লড়াই ছাড়াও প্রচুর ইট-পাটকেল ছোঁড়া হচ্ছিল। আতঙ্কে সিঁটিয়ে গিয়েছিলেন অনেকে। ঢিলে মাথা ফেটেছে এক কিশোরের। এ দিন ১০০ দিনের জব কার্ড রিভিউ করাতে পঞ্চায়েতে যাওয়ার কথা ছিল অনেকের। গোলমালে সেটাও পণ্ড হয়েছে। এঁদের সকলেই বলছেন, ‘‘এলাকায় আমরা শান্তি চাই।’’

তৃণমূলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র জানিয়েছেন, যা ঘটেছে কাম্য নয়। দোষ যে পক্ষেরই হোক, পুলিশ আইন মেনে ব্যবস্থা নিক।

অন্য বিষয়গুলি:

Dubrajpur Bombing TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy