প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ভবনে চ্যাম্পিয়নরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
খেলাধুলোর সঙ্গে আঁকার কি কোনও সম্পর্ক রয়েছে? আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে নেই। কিন্তু, খেলাধুলোয় জেলার সেরা ২৮ জন প্রাথমিক স্কুল পড়ুয়াকে উৎসাহিত ও সংবর্ধিত করতে আঁকাকেই অস্ত্র করল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।
প্রাথমিক স্কুল সমূহের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যে সব পড়ুয়া জেলাস্তরে বিভিন্ন ইভেন্টে প্রথম হয়েছে এবং রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে, এমন ২৮ জন পড়ুয়ার আঁকা ছবি দিয়ে তৈরি হবে ইংরাজি নববর্ষের গ্রিটিংস কার্ড— এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেকের আঁকা ছবি থেকে তৈরি ছাপানো কার্ডে ওই ছাত্র বা ছাত্রীর নাম, স্কুল, শ্রেণি, চক্রের সঙ্গে লেখা থাকবে কোন ইভেন্টে সে জেলায় সেরা হয়েছে।
ঘটনা হল, গত ছ’বছর ধরে জেলার প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের আঁকা বাছাই কিছু ছবি নিয়ে গ্রিটিংস কার্ড তৈরি করছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। এই পরিকল্পনা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষের। এর আগে পুজোর ছুটির পরই জেলার ৩২টি চক্র থেকে পড়ুয়াদের আঁকা সেরা ছবিগুলি সংসদে এসে জমা হতো। সেখান থেকে বাছাই গোটা দশেক ছবি থেকে তৈরি হতো হাজারতিনেক কার্ড। নতুন বছরের শুরুতেই জেলার ২ হাজার ৪০০ প্রাথমিক স্কুল, জেলা ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক, পুলিশকর্তা, রাজ্যের মন্ত্রী, আমলা এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরেও পৌঁছে যায় খুদে পড়ুয়াদের আঁকা ছবিতে ছাপানো কার্ড। এ বারই সেই ধারা কিছুটা বদলাল।
রাজাবাবুর কথায়, ‘‘ওরা কত ভাল এঁকেছে সেটা আসল নয়। ওদের সাফল্য ছড়িয়ে দেওয়ায় তারা অনুপ্রাণিত হতে পারে। ছাপানো অক্ষরে তাদের নাম দেখে বাকিরাও খেলাধুলোয়। আরও বেশি করে সামিল হতে পারে।’’ তাঁর আফশোস, ‘‘এখন তো ছোটদের মধ্যে খেলাধুলোয় সামিল হওয়ার উৎসাহ হরিয়ে যাচ্ছে।’’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতার আগে প্রতি বছরের মতো এ বারও জেলায় ‘কন্ডিশনিং ক্যাম্প’ বা ‘স্টেট মিট ক্যাম্প’ হচ্ছে। আগামী কাল প্রতিযোগীরা কলকাতা রওনা দেবে। বুধবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বসবে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতার আসর। সে জন্য ১৪-১৮ ডিসেম্বর সিউড়ির শিবিরে যোগ দিয়েছিল জেলাস্তরের ২৮টি ইভেন্টের সেরারা। শিবির শেষ হওয়ার আগে সকলের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল আর্ট পেপার, প্যাস্টেল। বলা হয়েছিল, যেমন খুশি তেমন আঁকো। শিবিরের প্রশিক্ষক খোকন সেন, অনামিকা দালাল জানান, রাজ্যস্তরের মিটে অংশ নেওয়ার আগে নিয়মানুবর্তিতা, অনুশীলনের পাশাপাশি কী ভাবে বাইরে গিয়ে ‘টিম বীরভূম’ হিসেবে থাকতে হবে, তা-ই শেখানো হয় বাচ্চাদের। ছবি আঁকতেও ভাল লেগেছে সকলের।
শিবিরে উপস্থিত হাঁড়ি ভাঙা ও লংজাম্পের দুই প্রতিযোগী মহম্মদবাজার চক্রের একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অনিকেত ভাণ্ডারী ও সাঁইথিয়া চক্রের সিনা মণ্ডল বলল— ‘‘খেলতে তো ভালই লাগে। কিন্তু আমাদের আঁকা দিয়েও কার্ড সাজানো হবে শুনে দারুণ লাগছে।’’ খেলার পাশাপাশি ছবি আঁকায় একই রকম ভালবাসা রয়েছে রামপুরহাট চক্রের মল্লারপুরের দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্বজিৎ বাগদি ও বোলপুর চক্রের একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী বৃষ্টি লোহারের। বিশ্বজিৎ এ বার রাজ্যস্তরে দু’টি ইভেন্টে নামবে লংজাম্প ও ৭৫ মিটার দৌড়ে। আলু দৌড়ে নামবে বৃষ্টি। ওরা বলল— ‘‘নতুন বছরের কার্ডে আমাদের নাম থাকলে খুব মজা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy