বড়জোড়ার কলেজ রোডের একটি বাড়িতে জল থেকে বাঁচাতে আসবাব তুলে রাখা হয়েছে খাটের উপরে। —অভিজিৎ সিংহ
রাতভর বৃষ্টি। আর তাতেই রাস্তাঘাট উপচে বাড়ির অন্দরমহল পর্যন্ত পৌঁছে গেল নর্দমার জল। বৃহস্পতিবার বড়জোড়ার কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ এই ঘটনায় পথ অবরোধে নামেন। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার বেহাল নিকাশি নিয়ে কোনও হেলদোল নেই প্রশাসনের। ঘণ্টা তিনেক অবরোধের পরে প্রশাসনের আশ্বাসে রাস্তা মুক্ত হয়।
সম্প্রতি স্টেট হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট অথারিটি বড়জোড়া দুর্লভপুর রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ করেছে। সেই নির্মাণ প্রকল্পে বেশ কিছু এলাকায় রাস্তার দু’পাশে নালাও গড়া হয়েছে। বড়জোড়ার কাদাশোল মোড় থেকে কলেজরোড হয়ে বড়জোড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় আধ কিলোমিটার এলাকায় যে নালাটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার গভীরতা খুব একটা বেশি নয়। এলাকার বাসিন্দারা জানান, কলেজরোড এলাকাটি অপেক্ষাকৃত নীচু হওযায় বড়জোড়ার সাহারজোড়ার জঙ্গল ও জঙ্গল সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকার জল সেখানে নেমে চলে আসে। ফলে মাঝারি বৃষ্টিতে ওই এলাকায় জল জমে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁরা ওই নালার গভীরতা বাড়ানোর দাবি তুলেছিলেন। কয়েক দিন আগেই বড়জোড়া গ্রামপঞ্চায়েত এবং বিডিও দফতরে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। বড়জোড়া গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান অর্চিতা বিদের দাবি, নালাটির গভীরতা বাড়ানোর কাজ শুরু করার জন্য স্টেট হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার আগেই টানা বৃষ্টিতে বিপত্তি বেধেছে।
নিম্নচাপের জেরে বুধবার সারারাত জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকলাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বাঁকুড়া শহরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৯.৩ মিলিমিটার। গভীর রাত থেকেই নালা উপচে কলেজ রোড এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করে। ভোরে সেই জল বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা মৃণাল চৌধুরী, অরূপ চট্টোপাধ্যায়, বাদল ঘোড়ুই, গৌতম কর্মকার, গুরুপদ দাসরা জানান, জলে ঢুকে তাঁদের বাড়ির আসবাব-সহ বেশ কিছু জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। জরুরি নথিপত্রও ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন। ভোর থেকেই ক্ষোভ ছড়াতে শুরু করে এলাকায়।
খবর পেয়ে এলাকায় যান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদ, বিডিও (বড়জোড়া) পঙ্কজকুমার আচার্য, বড়জোড়া গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য অলক মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁদের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন অবরোধকারীরা। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। তবে অবরোধের পরে, দুপুর থেকেই নালা ভেঙে এলাকার জল বের করার কাজ শুরু করেন গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লক দফতরের কর্মীরা।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, এলাকার রাস্তা জলমগ্ন। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মৃণালকান্তি চৌধুরীর বাড়ির ভিতরে প্রায় কোমর জল। তার মধ্যেই ভাসছে জামাকাপড়-সহ বিভিন্ন টুকিটাকি জিনিসপত্র। মৃণালবাবুর স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমরা গরীব মানুষ। বহু কষ্টে একটু একুট করে সংসারটা গুছিয়েছিলাম। বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।’’ মৃণালবাবুর পড়শি অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির ছবিটাও প্রায় একই রকম। কিছু জিনিস খাটের উপরে তুলে রেখে বাঁচিয়েছেন। বাকি অধিকাংশই জলে ভিজছে। অরূপবাবুর স্ত্রী রিম্পাদেবী বলেন, “ভোরে হঠাৎ টের পেলাম ঘরের ভিতরে জল ঢুকে পড়েছে। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আর কিছু করার ছিল না। বহু জিনিস নষ্ট হয়েছে। হাঁড়ি চড়ানোরও উপায় নেই।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে এ দিন পথ অবরোধে সামিল হয়েছিলেন এলাকার সিপিএম নেতৃত্বও। এই ঘটনার জন্য প্রশাসনের পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করেছেন বড়জোড়ার সিপিএম নেতা তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী। সুজয়বাবু বলেন, “নীচু এলাকায় নালার বেশি গভীরতা না হলে যা হয় তাই হয়েছে। কোনও রকম পরিকল্পনা না করেই দায়সারা ভাবে নালা গড়ে হাত গুটিয়েছে রাজ্য হাইওয়ে সংস্থা। স্থানীয় প্রশাসন বা পঞ্চায়েতের লোকজন কাজের কোনও দেখভালই করেননি।”
ঘটনাচক্রে ওই নালা সংস্কারের কাজ কী ভাবে হবে সেই সংক্রান্ত একটি বৈঠক বৃহস্পতিবারই হওয়ার কথা ছিল। বড়জোড়ার বিডিওর দফতরে সেই বৈঠকটি হয়েছে। বিডিও বলেন, “ওই নালার জল যাতে এলাকায় না ঢোকে তার জন্য আপাতত অস্থায়ী ব্যবস্থা করছি। হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট অথরিটি শীঘ্রই নালাটি সংস্কারের কাজে নামবে”। বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালা বলেন, “বিডিওকে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy