হাসপাতালের ঝাঁ চকচকে এসএনসিইউ। —ফাইল চিত্র
দু’বছরের পরিশ্রমের ফল মিলল। সর্বভারতীয় ডিএনবি-র (ডিপ্লোমেট অফ ন্যাশনাল বোর্ড) পাঠ্যক্রম চালু হল সিউড়ি জেলা হাসপাতালে। ছ’টি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট আসন পেয়েছে হাসপাতাল। মঙ্গলবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই মর্মে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের সংস্থা এনবিই (ন্যাশনাল বোর্ড অফ এগজামিনেশন্স)।
বৃহস্পতিবার জেলা হাসপাতালের সুপার শোভন দে বলেন, ‘‘বীরভূমের পক্ষে অত্যন্ত ভাল খবর। এক সঙ্গে এত জন হবু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পাওয়া গেলে শুধুমাত্র জেলা হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল সন্তানসম্ভবা ও প্রসূতিরাই উপকৃত হবেন না, হবে গোটা জেলাই। ভবিষ্যতে আরও পরিষেবার সুযোগের দরজা খুলে গেল বলা যায়।’’ একই মত জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়িরও। তাঁর দাবি, ‘‘বিশাল সাফল্য। ডিএনবি-র ছ’টি আসন মানে হাসপাতালের পুরো পরিষেবাটাই বদলে যাবে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যে সমস্ত এমবিবিএস চিকিৎসক এনবিই-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হয়ে মেধা তালিকায় স্থান পাবেন, তাঁদের মধ্যেই ছ’জন সিউড়ি হাসপাতালে থেকে পড়াশোনা করে নিজেদের ডিগ্রি পূরণ করবেন। তার জন্য হাসপাতাল গত দু’বছর ধরে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করেছে। তৈরি হয়ে গিয়েছে হস্টেল, ক্লাসরুম, লাইব্রেরি (ই-লাইব্রেরি) ইত্যাদি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক অধ্যাপক এবং সহকারি অধ্যাপকেরা এসে এখানে থিওরি ক্লাস নেবেন। হাতেকলমে শিক্ষার জন্য হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার, প্রসূতি বিভাগ ও অন্যান্য পরিকাঠামো ব্যবহার করা হবে।
ঘটনা হল, আসানসোল জেলা হাসপাতালে চারটি এবং পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালে চারটি করে ডিএনবি-র আসন থাকলেও খুব সহজে এই ছয় আসনের অনুমোদন পায়নি সিউড়ি জেলা হাসপাতাল। ২০১৪ সালে এর প্রথম আবেদন করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার পরেই জোর দেওয়া হয় পরিকাঠামো তৈরিতে। প্রথম বছর হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেনি সংস্থা। গত অক্টোবর থেকে সংস্থা কয়েক দফা নানা নথি চেয়ে পরিকাঠামো গড়ার কাজ কতদূর, তার খোঁজ নেয়। গত জানুয়ারিতে হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন বোর্ড মেম্বার চিকিৎসক সুধা সালান। পরে আরও কয়েক দফা নথি চালাচালির পরে মঙ্গলবার ঘটে প্রতীক্ষার অবসান। খুশির বিষয় হল, আবেদনে চারটি আসন চাইলেও অতিরিক্ত দু’টি আসন মঞ্জুর করেছে সর্বভারতীয় বোর্ড।
স্বাভাবিক ভাবেই এই সুখবরে উচ্ছ্বসিত হাসপাতাল। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় সাড়ে ছ’শো শয্যার এই হাসপাতালে এক তৃতীয়াংশই প্রসূতি ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য। গত বছর ‘ইন্সিটিউশনাল ডেলিভারি’র সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি। বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার রোগী। চিকিৎসকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এত চাপ থাকলেও এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। সেখানে বছরে ছ’জন করে চিকিৎসক এখানে পড়তে এলে রোগীরা উপকৃতই হবেন। যেহেতু তিন বছরের কোর্স, তাই তার মধ্যে মোট ১৮ জন হবু স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এখানে থাকবেন। পরের দিকে ‘ফার্টিলিটি ক্লিনিক’ বা ‘ক্যান্সার ক্লিনিকে’র মতো পরিষেবা চালু হতে পারে। ‘‘মোট কথা স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে বীরভূমের মহিলাদের আর অন্য কোথাও যেতে হবে না,’’—দাবি করছেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক।
বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীও বলছেন, ‘‘অবশ্যই ভাল খবর। এখানে যে সব চিকিৎসক উন্নততর ডিগ্রি অর্জনের জন্য আসবেন, তাঁরা সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন। তাঁদের সঙ্গে পেয়ে উপকৃতই হবে আমাদের এই হাসপাতাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy