প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র।
নানাবিধ প্রতিকূলতা টপকে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা। তাঁদের অনেকের হাত ধরে শিক্ষার আলো পৌঁছেছে প্রত্যন্ত এলাকায়। বরাবাজারের ফুলঝোর বা লটপদার মতো গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড়তলির বাড়েরিয়া বা ভূপতিপল্লির মতো জনপদ থেকে পুরুলিয়া বইমেলার মাঠে হাজির হলেন তাঁরা। সেই লুপ্তপ্রায় বীরহোড় বা শবর পড়ুয়াদের সঙ্গে আড্ডা জমালেন পুরুলিয়ার জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। সমাজ সম্পর্কে এই ছেলেমেয়েরা কী ভাবছেন, আড্ডার মোড়কে সে কথাই তাঁদের কাছ থেকে শুনলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মুফতি শামিম সওকত, জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক মার্শাল টুডুরা।
রবিবার বিকেলে পুরুলিয়া শহরে বইমেলার মাঠে আসেন উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে পা রাখা ওই তরুণ-তরুণীরা। বাঘমুণ্ডির ভূপতিপল্লির রথনি শিকারি ও জানকী শিকারি— দুই বোনের হাত ধরে নারীশিক্ষার সোনালি আলোর রেখা পৌঁছেছে বীরহোড় পল্লিতে। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে এখন তাঁরা কলেজে। ভূপতিপল্লি থেকে দুই বোনের সঙ্গে এসেছিলেন গুলবতী শিকারি ও জবা শিকারি, যাঁরা মাধ্যমিক পাস করে এ বার একাদশে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কাঞ্চন শিকারি ও সীতারাম শিকারি নামে দুই যুবকও এসেছিলেন। তাঁরা ছেলেদের মধ্যে প্রথম উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছিলেন। এখন গ্রামের কচিকাঁচাদের পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। কাঞ্চন জানান, নামমাত্র পারিশ্রমিকে এই কাজ করছেন।
জেলাশাসক তাঁদের কাছে জানতে চান, গ্রামে কী সমস্যা রয়েছে? দু’জনেই জানান, রাস্তা খারাপ, সেচের জলের সমস্যা রয়েছে। গ্রামের সকলের আধার কার্ড বা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হয়েছে কি না, উপস্থিত পড়ুয়াদের প্রশ্ন করেন তিনি। অধিকাংশেরই জবাব, তা জানা নেই। জেলাশাসকের আরও জিজ্ঞাসা, তাঁরা কম্পিউটার জানেন কি না। প্রায় সমস্বরে জবাব আসে, জানা নেই। গ্রামে কম্পিউটার কোথায় শিখবেন, প্রশ্ন এক জনের। জেলাশাসকের আশ্বাস, ব্যবস্থা হবে।
সদ্য স্নাতক হয়েছেন বরাবাজারের লটপদা গ্রামের রত্নাবলী শবর ও ফুলঝোরের শকুন্তলা শবর। জেলাশাসক তাঁদের কাছে জানতে চান, লেখাপড়ার বাইরে তাঁরা আর কী জানেন। উত্তরে সেলাই, ঘাসের জিনিস তৈরি করতে পারেন বলে জানান তাঁরা। কারা গান গাইতে পারেন, করা হয় সে প্রশ্নও। জানকী-রথনি, দুই বোন গান শোনান। তা শুনে জেলাশাসক জানতে চান, এই গানের কথা কী? আড্ডায় শামিল লোক গবেষক জলধর কর্মকার জানালেন, এই গান ওঁদের নিজস্ব ভাষার। মুন্ডারি ভাষার সঙ্গে বীরহোড়দের ভাষার অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। গানে নিজেদের সমাজ জীবনের কথা বলেছেন ওঁরা।
পরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘সমাজ নিয়ে এই ছাত্রছাত্রীদের ভাবনা কী, তা বোঝার চেষ্টা করেছি। প্রতিবন্ধকতা পেরোতে তাঁরা সক্ষম হয়েছেন। আমরা চাই, পরবর্তী প্রজন্ম যাতে তাঁদের মতো সমস্যার মুখোমুখি না হয়, সে জন্য তাঁরা পাশে দাঁড়ান। আমরা ‘পরিবর্তনের দূত’ হিসেবে তাঁদের দেখতে চাইছি।’’ তিনি জানান, গ্রামে কী ধরনের সমস্যা রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন বা যে সব সরকারি সুবিধা মানুষজনের প্রাপ্য, তা এলাকার লোকজন পেয়েছেন কি না, সে নিয়ে ওই পড়ুয়াদের সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে। তাতে যা উঠে আসবে, দুয়ারে সরকারের শিবিরে সেগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy