Advertisement
E-Paper

‘জুটি’ ভাঙছে বাংলার বিজেপিতে, ভোটমুখী রাজ্যে নয়া কেন্দ্রীয় নেতা? না কি পুরনো ‘টিমমেট’-এর উত্থান?

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজেপি নেতৃত্ব বিহারের নেতা মঙ্গলকে ‘রাজনৈতিক’ পর্যবেক্ষক করে বাংলায় পাঠিয়েছিলেন। বিহারে তখন বিজেপি বা এনডিএ ছিল বিরোধী আসনে।

বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের ‘জুটি’ ভাঙলে সুনীল বনসলের সঙ্গে কে থাকবেন দায়িত্বে?

বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের ‘জুটি’ ভাঙলে সুনীল বনসলের সঙ্গে কে থাকবেন দায়িত্বে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ১০:২২
Share
Save

রাজ্যের ‘সেট টিম’-এ কতটা রদবদল হবে, এখনও তা নিয়ে ধোঁয়াশা বিজেপিতে। কিন্তু রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ‘টিম’ যে ভেঙে যাচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় কম। গোটা ‘টিম’ না বদলালেও ‘জুটি’ ভেঙে যাওয়া কার্যত নিশ্চিত। প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে ভোট শিয়রে। বঙ্গেও বিজেপি ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চাইছে। তাই বাংলার ‘জুটি’ ভাঙা ছাড়া এখন অন্য উপায় দিল্লির হাতে নেই।

এখন বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বে দু’জন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। সুনীল বনসল দেখেন ‘সাংগঠনিক’ কাজ। মঙ্গল পাণ্ডে দেখেন ‘রাজনৈতিক’ বিষয়। তাঁদের মধ্যে মঙ্গল বাংলার জন্য সময় দিতে পারছেন না। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজেপি নেতৃত্ব বিহারের নেতা মঙ্গলকে ‘রাজনৈতিক’ পর্যবেক্ষক করে বাংলায় পাঠিয়েছিলেন। বিহারে তখন বিজেপি বা এনডিএ ছিল বিরোধী আসনে। ফলে বাংলার দায়িত্ব নিতে মঙ্গলের অসুবিধা হয়নি। কিন্তু নীতীশ কুমার ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এনডিএ-তে ফিরতেই মঙ্গলের ব্যস্ততা বেড়েছে। কারণ তিনি বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন।

২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে মঙ্গল বাংলায় সে ভাবে সময় দিতে পারছেন না। তাঁর অন্যতম সহকারী অমিত মালবীয়ই মূলত বঙ্গ বিজেপির ‘রাজনৈতিক’ গতিবিধির দেখভাল করছেন। আর এক সহ-পর্যবেক্ষক আশা লাকড়া তাঁকে সাহায্য করছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, এ বার পাকাপাকি ভাবেই মঙ্গলকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। কারণ, চলতি বছরের শেষে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তাই মঙ্গলের পক্ষে বিহার ছেড়ে বাংলার দিকে নজর দেওয়া কঠিন। উপরন্তু বাংলাতেও বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ফলে ‘পার্ট টাইম’ পর্যবেক্ষক দিয়ে কাজ চলবে না। অতএব বনসল থাকছেন এবং মঙ্গল যাচ্ছেন, এটি প্রায় নিশ্চিত বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। কিন্তু তার ফলাফল নিয়ে কেউ নিশ্চিত নন। বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে নতুন কেউ এসে কত দ্রুত রাজ্যের পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারবেন, তা নিয়ে দলে অনেকে সন্দিহান।

২০১৫ থেকে রাজ্যে রাজ্যে ‘সাংগঠনিক’ এবং ‘রাজনৈতিক’ কাজের জন্য বিজেপি আলাদা আলাদা পর্যবেক্ষক নিয়োগ করছে। এই ব্যবস্থা আগেও ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে কয়েক বছরের জন্য তাতে ছেদ পড়ে। ২০১৫ থেকে আবার সেই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যে লোকসভা নির্বাচনে জিতে নরেন্দ্র মোদী প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হন, সেই ২০১৪ সালে বঙ্গ বিজেপির ‘রাজনৈতিক’ পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল বরুণ গান্ধীকে। তাঁর সহকারী ছিলেন সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। আলাদা করে কোনও ‘সাংগঠনিক’ পর্যবেক্ষক তখন ছিলেন না। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর আসনে বরুণের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হতে তিনি আর বাংলামুখো হননি। তখন থেকে সিদ্ধার্থনাথ একাই বঙ্গে ‘সর্বেসর্বা’ ছিলেন।

এর পরে আবার ‘জুটি’ ফেরে বিজেপিতে। ‘রাজনৈতিক’ পর্যবেক্ষক হিসাবে আসেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ‘সাংগঠনিক’ পর্যবেক্ষক শিব প্রকাশ। তাঁদের জমানায় দিলীপ ঘোষ সভাপতি হন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে প্রায় ১১ শতাংশ ভোট এবং তিনটি বিধানসভা আসন পায়। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতেও গ্রামবাংলার অনেক এলাকায় ‘পদ্মফুল’ ফোটে। আর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি লোকসভা আসনে জেতে।

তখন পর্যন্ত সাফল্যের লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হলেও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কৈলাস-শিব প্রকাশ ‘জুটি’ বড়সড় ধাক্কা খায়। বিজেপি থেমে যায় ৭৭ আসনে। বছরখানেকের মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয় দু’জনকে। শিব প্রকাশের দায়িত্ব বর্তায় বনসলের উপরে। কৈলাসের দায়িত্ব পান মঙ্গল। বনসল-মঙ্গল ইতিমধ্যেই বাংলায় দু’টি বড় নির্বাচনের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত এবং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট। বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ইতিহাসে বিজেপির ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ আসন পেলেও ২০২৪ সালের লোকসভায় তারা ১২টি আসনে নেমে গিয়েছে।

ফলে বনসল-মঙ্গল ‘জুটি’র জমানাকে ‘সাফল্য’ হিসেবে বিজেপি দেখছে না। কিন্তু একে আদ্যোপান্ত ‘ব্যর্থতা’ বলতেও বিজেপি নেতৃত্বের অনেকে রাজি নন। কারণ, যে সন্ধিক্ষণে বনসল-মঙ্গল দায়িত্বে এসেছিলেন, সেই সময়ের নিরিখে তাঁদের কাজ ফেলে দেওয়ার মতো নয় বলেই রাজ্য বিজেপির নেতাদের একাংশের দাবি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও সেই দাবির সঙ্গে পুরোপুরি ভিন্নমত নন বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। তাই ‘জুটি’ ভেঙে দিয়েও তার কিছুটা বহাল রাখা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।

বিজেপি মনে করছে, নতুন কাউকে বাংলায় পাঠাতে হলে এমন কাউকে চাই, যিনি এ রাজ্যের রাজনীতি ভাল বোঝেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তেমন কোনও নাম (যিনি অন্য কোনও গুরুদায়িত্বে নেই) খুঁজে পাওয়া সহজ হচ্ছে না। সেই সূত্রেই চলতি ‘টিম’ থেকে কাউকে বেছে নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে নাড়াচাড়া হচ্ছে। ‘রাজনৈতিক’ গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য যে কেন্দ্রীয় ‘টিম’ এখন বাংলায় কাজ করছে, তার মধ্যে এক জনের সক্রিয়তা দৃশ্যতই বেড়েছে। রাজ্যের বিষয় নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে যাওয়া হোক বা রাজ্য নেতৃত্বকে নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে যাওয়ার মতো বিষয়ে তাঁর ভূমিকা চোখে পড়ছে।

অনেকে বলছেন, ‘সহ-পর্যবেক্ষক’ থেকে ‘পর্যবেক্ষক’ হয়ে ওঠার দৃষ্টান্ত বিজেপিতে রয়েছে। যেমন বরুণের প্রস্থানে সিদ্ধার্থনাথের উত্থান হয়েছিল। এ বার সেই পথেই বনসলের ‘জুড়িদার’ খোঁজা হয় কি না, তা নিয়েই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে।

BJP Bengal Sunil Bansal Mangal Pandey Amit Malviya Kailash Vijayvargiya Shiv Prakash

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।