সিউড়ির স্বর্ণবিপণি। নিজস্ব চিত্র
আজ, ‘ধনতেরস’। শব্দটির সঙ্গে এক দশক আগেও বাঙালির তেমন পরিচয় ছিল না। অথচ বর্তমানে দীপাবলি উৎসব পালনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ‘ধনতেরস’ বা ‘ধন ত্রয়োদশী’। বলা ভাল, রাজ্যের অবাঙালিদের পাশাপাশি ধনতেরস নিয়ে উৎসব প্রিয় বাঙালি এখন সমান আবেগপ্রবণ। রাজ্যের বড় বড় শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে সেই উৎসবের আঁচ এখন জেলা সদর ও মফস্সলেও।
দীপাবলির ঠিক দু’দিন আগে অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের তেরোতম দিনের বিশেষ তিথিটি দেশ জুড়ে পালিত হয় এই ধনতেরস। ধনতেরস পাঁচ দিন ধরে চলা ‘দিওয়ালি’ উৎসবের প্রথম দিন। একদা উত্তর ভারত এবং পশ্চিম ভারতে মূলত মার্কেনটাইন সম্প্রদায়ের উৎসব হিসেবেই পালিত হত ধনতেরস। এখন উৎসবে সামিল হয় প্রায় সারা দেশ। ধনতেরসের দিন পুজো হয় সম্পদের দেবী ধনলক্ষ্মীর।
প্রচলিত বিশ্বাস, এ দিন সোনা, রুপো বা অন্য কোনও মূল্যবান ধাতুর এক টুকরো অলঙ্কার কিনলে সৌভাগ্য ফেরে গৃহস্থের। এ বার জিএসটি শঙ্কা উড়িয়ে সেই কেনাকাটা ভালই জমেছে, মত জেলার একটা বড় অংশের ব্যবসায়ীর। রামপুরহাট, বোলপুর জেলা সদর, সিউড়ির অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বারের থেকেও বাজার ভাল।
সোমবার ধনতেরস উপলক্ষে দুবরাজপুরের একটি অলঙ্কারের দোকানে লক্ষ্মী-গণেশ খোদাই করা রুপোর কয়েন কিনলেন বধূ রিঙ্কু দত্ত। বললেন, “এই মুহূর্তটা শুভ, তাই গত কয়েক বছর ধরেই ধনতেরস উপলক্ষে কিছু না কিছু কিনি।” বোলপুরে একটি অলঙ্কারের দোকানে নিজের পছন্দের অলঙ্কার পছন্দ করে গিয়েছেন গীতশ্রী মজুমদার। নেবেন আজ মঙ্গলবারই। তাঁর কথায়, “এই বিশেষ দিনে গয়না কিনলে সম্পদের দ্বিগুণ বৃদ্ধি হবে। এই বিশ্বাস থেকেই ধনতেরসের দিন অলঙ্কার কেনা।” সোমবার বিকালে সোনার গয়না কিনতে সিউড়ির একটি গয়না দোকানে এসেছিলেন তরুণী বধূ অর্পিতা পাল মিত্র। যুক্তি সেই একই। এঁদের কাউকেই জিএসটি নিয়ে চিন্তিত হতে বা আলোচনা করতে শোনা যায়নি।
তবে জিএসটি নিয়ে ধন্দে রয়েছেন জেলার অধিকাংশ ছোট খাটো অলঙ্কার ব্যবসায়ী।
কী ভাবে পরিকাঠামো গড়ে তুলবেন। কী ভাবে খদ্দের সামলাবেন। এমন নানা চিন্তায় সিংহভাগই এখনও নিজেদের জিএসটি নম্বর নেননি। কাঁচা হিসা বেই চলছে কারবার। জেলার এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, সকলে যা করবে আমাদেরও তাই করতে হবে। এ বার অন্তত এভাবেই চলবে। ব্যতিক্রম প্রতিষ্ঠিত ও বড় দোকানগুলি।
কলকাতার একটি স্বর্ণবিপণির মণীশ খাণ্ডেলওয়াল বলছেন, ‘‘আগে গহনার উপর ১ শতাংশ এক্সসাইজ ডিউটি, ১ শতাংশ ভ্যাট মিলে ২ শতাংশ ছিল। সে সব বদলে জিএসটি হয়েছে ৩ শতাংশ। প্রথমদিকে খদ্দের এসে নানা প্রশ্ন করতেন। এখন সেসব নেই। এ বার ধনতেরসের বাজারও বেশ ভাল।’’
জানালেন, স্বর্ণ অলঙ্কার যেমন, বালা, গালার চেন বা নেকলেস, কানের বিভিন্ন গয়না। অবাঙালিদের মধ্যে রুপোর কিছু কেনার চল আছে। অনেকে ধনতেরসের দিন ভিড় এড়াতে আগেই অ্যাডভান্স দিয়ে নিজের পছন্দ মত গয়না বুক করে গিয়েছেন। তবে সোনা ছাড়াও রুপোর গয়না, বা কয়েনও রীতিমত চাহিদা রয়েছে। মণীশের মতো একই সুর রামপুরহাটে আরেক ফ্রাঞ্চাইজি ববি সিংহানিয়ার গলায়। তিনি ও বলেছেন, কেনাকাটার বহর আগের থেকে আরও বেড়েছে। অনেকেই কেনাকাটা শুরু করেছেন দিন দুই আগে থেকেই।
যদিও কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করছেন, দুবারাজপুরে কলকাতার আরেক স্বর্ণবিপণির মুজিবর রহমান। মুজিবরের দাবি, এ বার বাজার সেভাবে জমেনি। তবে জিএসটি এ জন্য দায়ী নয়। মাস খানেক আগে হলে অসুবিধা হতো।
ব্যবসায়ীদের কথায়, মাত্র ৫০ হাজার টাকার কেনাকাটার উপরে খদ্দেরদের কেওয়াইসি জমা রাখার নিয়ম ছিল। সম্প্রতি সেটা শিথিল হওয়ায় খদ্দেররা কম বিরক্ত হচ্ছেন। এখন নিয়ম, ২ লক্ষ টাকার উপর কেনা কাটা চেকে ও প্যান নম্বর দিতে হবে। বড় অঙ্ক কেনাকাটা যাঁরা করেন তাঁদের এই পদ্ধতি মানতে অসুবিধা নেই। ধনতেরাসে তাই জিএসটি সমস্যাই নয়। ধনতেরসের কেনাকাটায় শুধু যে অলঙ্কার ব্যবসায়ীরাই উপকৃত হচ্ছেন তাই নয়। বিয়ের মরসুমের আগে মুখে হাসি ফোটে কাঁসা-পিতলের দ্রব্য বিক্রেতারাও।
প্রতিষ্ঠিত কাঁসা-পিতল ব্যবসায়ী সিউড়ির শান্তনু ঘোষ এবং দুবরাজপুরের দীপক দত্তদের কথায়, “গত কয়েক বছরে ধনতেরসের দিন পিতলের তৈরি লক্ষ্মী, লক্ষ্মী-গণেশ বা লক্ষ্মী-নারায়ণের ছোটছোট মূর্তি, পুজোর বাসন, তামার তৈরি ঘটি, সাজি চাহিদা বেড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy