পুরসভা নয়, উন্নয়ন পর্ষদ হচ্ছে বক্রেশ্বর।
শুক্রবার নবান্নে এই খবর জানিয়েছেন রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সচিব মনোজ পন্থ। তিনি জানান, গত ১ জুনই এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নগরোন্নয়ন দফতর। দুবরাজপুর ব্লক ও পুরসভা এলাকা মিলিয়ে মোট ৪৫টি মৌজা নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ’। পর্ষদের আওতায় থাকবে মোট ৫৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। পর্যটনকে কেন্দ্রে করে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধনই এই পর্ষদের মূল লক্ষ্য হবে। রাজ্যের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।
ঘটনা হল, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্রেশ্বরকে পুরসভা করার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটের ঠিক মুখেই এই ঘোষণাকে যদিও ‘গিমিক’ বলেই দাবি করেছিল বিরোধীরা। বক্রেশ্বরে পুরসভা হওয়ার মতো আদৌ পরিস্থিতি রয়েছে কিনা, তা যাচাই না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেছিল। ভোটের পরে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুরসভা নয়, বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের ঘোষণা করে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসা তৃণমূল সরকার বিরোধীদের সেই অভিযোগকেই চাপা দেওয়ার চেষ্টা করল বলে মত জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তারাপীঠের মতো বক্রেশ্বরেরও পুরসভায় উন্নীত হতে বাধা নেই বলে আগে দাবি করেছিলেন জেলার সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। সেই তিনিই এ দিন বলছেন, ‘‘পুরসভা নয়, পরে ঠিক হয়েছে বক্রেশ্বরকে ঘিরে উন্নয়ন পর্ষদই হবে। আগেই এই বিষয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। তবে, পর্ষদের রূপরেখা কী হবে, সেই নির্দেশ এখনও আসেনি।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উমাশঙ্কর এস অবশ্য জানিয়েছেন, অনেক দিন আগেই জেলার নতুন এই পর্ষদের নোটিফিকেশন হয়েছে। এখন কেবল বোর্ড গঠনই বাকি।
বক্রেশ্বরকে পুরসভা ঘোষণার সিদ্ধান্তের পরে পুরপ্রধানদের একাংশের বক্তব্য ছিল, পুরআইন মোতাবেক কমপক্ষে ২০-৩৫ হাজার জনসংখ্যা বিশিষ্ট এলাকায় ‘ই-ক্যাটেগরি’ পুরসভা তৈরি করা যায়। যার জনসংখ্যা হতে হবে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৭৫৫ জন। শুধু তাই নয়, প্রাপ্তবয়ষ্ক বাসিন্দাদের ৫০ শতাংশ হতে হবে অ-কৃষিকাজে যুক্ত। যাঁদের করের টাকায় পুরসভার কাজ চলতে পারে। দুবরাজপুরের গোহালিয়াড়া অঞ্চলের গোহালিয়াড়া গ্রাম, যেখানে বক্রেশ্বর শিবমন্দির, উষ্ণ প্রস্রবণ এবং সতীপীঠ নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, সেখানকার জনসংখ্যা খুব বেশি হলে হাজার তিনেক। কাছাকাছি বড় জনবসতিপূর্ণ গ্রাম রাজনগরের তাঁতিপাড়া, দুবরাজপুরের মেটেলা। বাহাদুরগঞ্জ, দেদোহার ঝাপরতলার মতো ছোট ছোট কিছু গ্রাম রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেখানে অর্ধেকেরও বেশি চাষের সঙ্গে যুক্ত। সেই বাস্তব পরিস্থিতিই বোধ হয় বুঝেছেন রাজ্য সরকার, মত জেলা প্রশাসনের এক কর্তার।
দেরিতে বুঝলেও সমালোচনার সুযোগ ছাড়েননি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরসভা ও উন্নয়ন পর্ষদের তফাত বোঝানো তাৎক্ষণিক ভাবে সম্ভব নয়। তবে, এটা মানুষকে বোকা বানানোর সামিল। কারণ, উন্নয়ন পর্ষদ মানে হচ্ছে প্রশাসনিক একটি বোর্ড। আর পুরসভা মানে মানুষের দ্বারা নির্বাচিত একটি স্থানীয় সরকার। দুটোর বিস্তর তফাত। পর্ষদে মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ কোথায়?’’ সেই বিতর্কে না গিয়ে রাজ্যের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানিয়েছেন দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই বক্রেশ্বর ধাম, দুবরাজপুর শহর, মামা-ভাগ্নে পাহাড়, বক্রেশ্বর শিল্পাঞ্চল ও পাথরচাপুরি মাজার নিয়ে মিলিত ভাবে একটি উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের কথা শুনছিলাম। সেটা হয়ে থাকলে অত্যন্ত খুশির খবর। এলাকার মানুষের উন্নতি হবে। সব মিলিয়ে পর্যটন একটা ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছবে।’’
রাজনৈতিক তরজায় যেতে চাইছেন না এলাকার মানুষও। বক্রেশ্বর সেবাইত সমিতির সম্পাদক রাজীব চৌধুরীর মত, ‘‘পুরসভাই হোক বা উন্নয়ন পর্ষদ এলাকা ও এলাকাবাসীর উন্নয়ন এবং পর্যটন মানচিত্রে বক্রেশ্বরকে তুলে ধরাই আসল। সেটা যে ভাবেই ঘটুক।’’ অন্য দিকে, এলাকার এক ব্যবসায়ী সমীর দে আবার মনে করছেন, বক্রেশ্বর পর্যটনকেন্দ্র হলেও সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার মান বেশ খারাপ। তার উন্নতি ঘটাতে পারে, এমন যে কোনও উদ্যোগই স্বাগত। পঞ্চায়েত কর্মী তথা জেলার বিশিষ্ট ছড়াকার আশিস মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘চিরকালই অবহেলিত বক্রেশ্বর। সেই অবহেলা কাটিয়ে আলোয় আসুক। সেটা যে তকমায় হোক, কিছু যায় আসে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy