n পরীক্ষাকেন্দ্রে কৃষ্ণা। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যমিক চলছে মেয়েটির। ভালয় ভালয় চারটি বিষয় মিটে গিয়েছে। শনিবার জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিল সে। কিন্তু, পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই জীবন আরও কঠিন পরীক্ষায় ফেলল তাকে। সকালে উঠেই সে দেখল বাবার নিথর দেহ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। শোকে পাথর হয়েও চোখের জল মুছে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল সিউড়ি ২ ব্লকের কোমা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী কৃষ্ণা বাউরি।
কৃষ্ণার বাড়ি স্থানীয় কাসপাই গ্রামে। তার বাবা, বছর আটচল্লিশের সুবোধ বাউরি ছয় কন্যা সন্তানে নিয়ে অভাবের সংসার টেনে যাচ্ছিলেন। দিনমজুর স্বামীকে যথাযথ সাহায্য করছিলেন স্ত্রী নমিতা। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয় সন্তান কৃষ্ণা এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে। দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকলেও মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাক, চাইছিলেন বাবা। কিন্তু, মেয়ের পরীক্ষা আর দেখে যেতে পারলেন না। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুবোধ আগে অসুস্থ হয়েছিলেন। দীর্ঘ চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছিলেন।
বৃহস্পতিবার মাথা ঘুরে পড়ে যান। ফের ডাক্তার দেখিয়ে কিছুটা সুস্থ বোধ করছিলেন। কিন্তু, শনিবার ভোরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি
মারা যান।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমে কৃষ্ণাদের বাড়ির উঠোনে। শোকে বিহ্বল গোটা পরিবার। তখনই স্কুলের শিক্ষক থেকে পড়শিরা সান্ত্বনা দেয় ওই পরীক্ষার্থীকে। বাবার দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার আগে পরীক্ষাকেন্দ্র, সিউড়ির হাটজনবাজার রামপ্রসাদ রায় স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে পৌঁছে যায় ওই কিশোরী।
কৃষ্ণার কথায় ‘‘কী যে কষ্ট হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না। কিন্তু বাবা আর ফিরবে না, কেন একটা বছর নষ্ট করবে, সকলে বোঝাতেই আমি কষ্ট চেপে পরীক্ষা দিলাম। সকলেই আমার পাশে থেকেছেন।’’
বোর্ড মনোনীত সদস্য সন্দীপ মিশ্রের কথায়, ‘‘বাবার মৃতদেহ উঠোনে রেখে এসে মেয়েটি যে-ভাবে পরীক্ষা শেষ করল, সেটা খুব কম জন করতে পারে। তবে ওর যাতে অসুবিধা না-হয়, খেয়াল রাখা হয়েছে।’’
কোমা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন মণ্ডল বলেন, ‘‘খবর পাওয়া মাত্রই আমরা ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। ও যাতে পরীক্ষায় বসতে পারে, তার জন্য সর্বতো ভাবে চেষ্টা করেছি।’’ খবর দেওয়া হয়েছিল কৃষ্ণার পরীক্ষাকেন্দ্রেও। হাটজনবাজার রামপ্রসাদ রায় স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রবীরকুমার দাস বলেন, ‘‘খুব কঠিন ছিল ওই ছাত্রীর পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া। কান্নাকাটি করছিল। তাই অন্য ঘরে বসার ব্যবস্থা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পেরেছে, এটাই বড় কথা।’’
মেয়ে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পরে কান্নাভেজা গলায় মা নমিতা বলছেন, ‘‘ওর বাবা চলে গেলেন। মেয়েটা পাশ করলে সান্ত্বনা পাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy