বাঁকুড়ার দম্পতি।—নিজস্ব চিত্র।
বড় নোট বাতিলের ধাক্কায় নাকানি চোবানি খাচ্ছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষজন। কারও কাজ গিয়েছে। কারও বা ব্যবসা তলানিতে। বাঁকুড়া শহরের গোপীনাথপুর এলাকার এমনই এক দম্পতি নোট বাতিলে ধাক্কায় গত একমাস ধরে যুঝতে যুঝতে কাবু হয়ে পড়েছেন।
বাড়ির কর্তা লালমোহন দাসকে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বকুলতলায় ঠেলাগাড়িতে ঘুঘনি, আলুরদম বিক্রি করতে দেখা যায়। তাঁর স্ত্রী নূপুরদেবী একটি দোকান থেকে কাপড় এনে সায়া সেলাই করতেন। দু’জনে সারাদিন খেটেখুটে যা আয় করতেন, তাতে নবম শ্রেণির পড়ুয়া একমাত্র সন্তান অভিজিৎকে নিয়ে এক কামরার ঘরে মোটের উপর সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন।
কিন্তু তাল কেটে দিয়েছে ৮ নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের ঘোষণা।
এর কয়েকদিন পরে কাপড় আনতে গিয়ে নূপুরদেবী শোনেন, রেডিমেড দোকানের ব্যবসা মার খাচ্ছে। সে জন্য তাঁর সায়া সেলাইয়ের কাজ আপাতত বন্ধ। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সংসারের কাজ সামলে দিনে ঘণ্টা চারেক মেশিনে বসে ২৪টা সায়া সেলাই করতাম। সুতোর দাম বাদে আয় হতো কমবেশি ৫০ টাকা। এখন হাত বিলকুল খালি।’’
ভাল নেই লালমোহনবাবুও। দুপুরে স্বামী-স্ত্রীতে তাঁরা বাড়িতে চারহাতে ঘুঘুনি, আলুরদম তৈরি করতেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঘণ্টা চারেকে তাঁর ঠেলাগাড়ির সমস্ত খাবারই উঠে যেত। মশলাপাতি, আলু, কলাই, পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতির দাম বাদ দিয়েও দিনে ১০০ টাকার কম তাঁর আয় হতো না। এখন খুচরোর অভাবে তাঁর বেচাকেনা বেশ কমে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘খুব কম লোকে খাবার কিনছেন। অনেকে আবার খুচরো নেই বলে ধারে কিনছেন। চেনা খদ্দেরদের আবার না-ও বলা যাচ্ছে না। খুব ফ্যাঁসাদে পড়ে গিয়েছি।’’
লালমোহনবাবু জানাচ্ছেন, এমনই সমস্যায় পড়েছেন যে ছেলের তিনটি টিউশনের ৬০০ টাকাও গত মাসে দিতে পারেননি। পাড়ার যে মুদিখানা দোকান থেকে সংসারের মাল ও ঠেলাগাড়ির খাবারের মালপত্র কেনেন, সেখানেও প্রায় হাজার তিনেক টাকা ধার পড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মুদিখানা দোকানদার দেখলেই টাকা চাইছেন। চারটি পুরনো পাঁচশো টাকার নোট ছিল। তা ভাঙিয়ে দু’হাজার টাকা পেয়েছিলাম। তাও খরচ হয়ে গিয়েছে। এ মাসটা যে কী ভাবে টানব ভগবান জানেন।’’
নূপুরদেবী বলেন, ‘‘সব যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। আগে সপ্তাহে বাড়িতে একদিন মাছ, মাংস, ডিম ঢুকত। এখন সে সব কমে গিয়েছে। অধিকাংশ দিন একতরকারি দিয়ে ভাত বেড়ে দিচ্ছি। নিজেরই লজ্জা লাগছে।’’ পাশে থাকা লালমোহনবাবু স্বান্ত্বনার দেওয়ার সুরে স্ত্রীকে বলেন, ‘‘কী করব বলো? খুব মেপে খরচ করতে হচ্ছে। আগের সে দিন এখন যে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy