পুরুলিয়া শহরে। নিজস্ব চিত্র
কালবৈশাখীর পরে ২৪ ঘণ্টা পার করেও পুরুলিয়ার সর্বত্র বিদ্যুৎ ফিরল না। অন্ধকারে থাকল অনেক এলাকা। পুরুলিয়া শহরের একাংশেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফেরেনি। ফলে, পাম্পে জল তুলতে না পেরে অনেকেই ক্ষোভ জানিয়েছেন।
অবিলম্বে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার দাবিতে এ দিন সন্ধ্যায় পুরুলিয়া শহরের ভাটবাঁধ এলাকায় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ডিপোর সামনে, শিমুলিয়া-ভাটবাঁধ বাইপাসে বাসিন্দাদের একাংশ অবরোধ শুরু করেন। খবর পেয়ে এলাকায় যান তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস। তাঁরা দাবি করেন, বিদ্যুৎ না ফিরলে, অবরোধ থেকে সরবেন না। পুলিশ গেলে, তাদের ঘেরাও করেন বাসিন্দারা। পরে পুলিশ গিয়ে বোঝানোর পরে অবরোধ ওঠে।
নতুন করে অবরোধ শুরু হয় মিশন রোডের নিউকলোনির কাছে। সেখানেও বিদ্যুৎ ফেরানোর দাবি তুলে মহিলারা রাস্তায় বসে পড়েন। সেখানেও অবরোধ তোলার চেষ্টা চলে।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অবশ্য দাবি, পুরুলিয়া শহরের ৭৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা গিয়েছে। গ্রামাঞ্চলেও কর্মীরা রাত-দিন এক করে কাজ করছেন। পুরসভার দাবি, অধিকাংশ রাস্তায় ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছ কেটে সরানো হয়েছে।
জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘ঝড়ে পুরুলিয়া শহর ছাড়াও জেলার ৬৭টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫০০ বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ১৪ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মোট ৩,২৮০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২১৬টি বিদ্যুতের খুঁটি পড়েছে। ২০টি ট্রান্সফর্মার পুড়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, প্রশাসন সর্বশক্তি দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে।
বুধবার বিকেলে সওয়া এক ঘণ্টার ঝড়ে পুরুলিয়া শহর ও লাগোয়া কিছু ব্লকে ব্যাপক ক্ষতি হয়। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তার উপরে গাছ উপড়ে পড়ে। ছিঁড়ে যায় বিদ্যুতের তার, ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, ঝড়ের দাপটে পুরুলিয়া শহরেই প্রায় একশো বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া, কেন্দা, মানবাজার ও পুঞ্চা ব্লকে আরও খুঁটি ভেঙে পড়ে। শহরের বিদ্যুতের তিনটি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎহীন থেকে যায় পুরুলিয়া শহর ও বহু গ্রাম। গভীর রাতে শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ফেরে।
তবে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরুলিয়া শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ ফেরেনি। ব্যাহত হয় জনজীবন। পুরুলিয়া শহরের হুচুকপাড়ার বাসিন্দা প্রবীর ভট্টাচার্য ও ইন্দ্রজিৎ দাসেরা জানান, এলাকায় একটি বড় গাছ পড়ায় তাঁরা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘জল এলেও বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্পে জল তুলতে পারছি না। কোনও রকমে জলের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।’’ মুন্সেফডাঙার বাসিন্দা প্রিয়গোপাল মল্লিক বলেন, ‘‘ট্যাঙ্কে যেটুকু জল ছিল, শেষ। বিদ্যুৎ নেই। জলের অভাবে খুব কষ্ট পাচ্ছি।’’
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পুরুলিয়ার রিজিওনাল ম্যানেজার সন্দীপ সাহানা বলেন, ‘‘ঝড়ের পর থেকেই গ্রাম ও শহরের কর্মীরা বিদ্যুতের মেরামতিতে নেমে পড়েছেন। বহু জায়গায় বিদ্যুতের তার, খুঁটি পড়ে গিয়েছে। পুরুলিয়া শহরের প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা গিয়েছে। গ্রামাঞ্চলেও ধীরে ধীরে পরিষেবা ফিরছে।’’
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঠিকাদার সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পার্থ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘পুরুলিয়া শহর ও লাগোয়া এলাকায় প্রায় ২০০ জন কর্মী বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার জন্য বুধবার ঝড় থামার পর থেকেই কাজে নেমেছেন।’’ তিনি জানান, মাইকে শহরবাসীকে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তাঁদের সহযোগিতা চেয়ে অনুরোধ জানানো হয়।
শহরবাসী জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালে এ রকম ঝড়ে পুরুলিয়া শহরের প্রচুর গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছিল। পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসক সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘২০১৬ সালের ঝড়ে প্রচুর ক্ষতি হলেও, এ বারের ভয়াবহতা অনেক বেশি। শহরের কত রাস্তায় যে গাছ পড়েছে, তার হিসেব নেই। পুরসভার ১৭টি দল রাস্তা থেকে গাছ কেটে সরাতে নেমেছে বুধবার রাত থেকেই। তবে শহরবাসী এ দিন সকালে বেরিয়ে দেখেছেন, অনেক রাস্তাই মুক্ত।’’ তিনি জানান, শহরের সর্বত্র এ দিন সকাল থেকে জল দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজেও অনেক রাত পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে কাজের তদারকি করেন।
অনেক রাতে কাশীপুর, হুড়া ও আদ্রা এলাকায় তুমুল বজ্রপাতের সঙ্গে বৃষ্টি নামে। রাত আটটা নাগাদ বোরো থানার কদগোড়া গ্রামে শান্তিবালা সিং (৬০) নামের এক বৃদ্ধার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় বলে তাঁর পরিবারের দাবি। বৃদ্ধার ছেলে বিজয় সিং দাবি করেন, ‘‘মা একটি ঘরে একা ছিলেন। হঠাৎ বাড়ির বাইরে একটি গাছে বাজ পড়ে। ঘরে মা লুটিয়ে পড়ে। বজ্রাঘাত, না কি অন্য কোনও কারণে মায়ের মৃত্যু হয়েছে, আমরা নিশ্চিত নই।’’ পুলিশ এ দিন সকালে দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, মৃত্যুর কারণ জানতে দেহটির ময়না-তদন্ত করানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy