Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪
বিরোধী শূন্য খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতি

সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ হিড়বাঁধ সভাপতির

জেলার একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতি ধরে রেখেছিল সিপিএম। কিন্তু সেই হিড়বাঁধ পঞ্চায়েত সমিতিরই সভাপতি এ বার সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। হিড়বাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোনালি মহান্তি ও খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য অনাদি গোস্বামী শুক্রবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিড়বাঁধ শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

জেলার একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতি ধরে রেখেছিল সিপিএম। কিন্তু সেই হিড়বাঁধ পঞ্চায়েত সমিতিরই সভাপতি এ বার সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। হিড়বাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোনালি মহান্তি ও খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য অনাদি গোস্বামী শুক্রবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর এই দলবদলে অস্বস্তিতে পড়ল বাঁকুড়া জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। মোনালিদেবী বলেছেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজকর্মে রাজ্যজুড়ে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞে সামিল হওয়ার জন্যই সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, শুক্রবার হিড়বাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের মোনালি মহান্তি, খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অনাদি গোস্বামী-সহ জঙ্গলমহলের বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় গিয়েছিলেন বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন খাতড়া মহকুমার তৃণমূল নেতা তথা খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জয়ন্ত মিত্র। তৃণমূল ভবনে রাজ্য যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের এই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির হাতে দলের পতাকা তুলে দেন। অরূপবাবু শনিবার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জঙ্গলমহলে বিরোধী সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস, ঝাড়খণ্ড পার্টির বহু নেতা-কর্মী আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। শুক্রবার হিড়বাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোনালি মহান্তি, খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অনাদি গোস্বামী সহ সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস ও ঝাড়খন্ড পার্টির প্রায় ১৫০ জন আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন।”

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২১টিই শাসকদলের দখলে আসে। একমাত্র হিড়বাঁধ পঞ্চায়েত সমিতিতে জয়ী হয় সিপিএম। জীবনে প্রথমবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে একেবারে সভাপতি হয়ে যান মোনালিদেবী। দল সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সমিতির কাজকর্ম নিয়ে তাঁর সঙ্গে ইদানীং স্থানীয় সিপিএম নেতাদের মন কষাকষি শুরু হয়েছিল। মোনালিদেবী গোপনে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। মাসখানেক আগে রাইপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চের আশেপাশে তাঁকে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা গিয়েছিল। তা থেকেই তাঁর তৃণমূলে যোগদানের আঁচ মেলে। যদিও আগে প্রকাশ্যে কোনওদিন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দেননি তিনি।

আনুষ্ঠানিক ভাবে দলবদল করলেও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেননি মোনালিদেবী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দল ছেড়েছি। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ তো ছাড়িনি। তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।” তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, সিপিএম ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে সংখ্যাগুরু থাকায় অনাস্থা এনে সভাপতিকে সরাতে পারে। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরই কেউ কেউ বলছেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএমের ৯ সদস্য ও তৃণমূলের ৫ সদস্য ছিল। কিন্তু মোনালিদেবী চলে আসায় সিপিএম কমে ৮ আর আমাদের সদস্য বেড়ে ৬ হয়েছে। বোর্ড উল্টে দিতে সিপিএমের আর দু’জনকে টানলেই হবে।’’ এ দিকে, খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির একমাত্র বিরোধী সদস্য ছিলেন সিপিএমের অনাদি গোস্বামী। তাঁর এই দলত্যাগের ফলে খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতি বর্তমানে বিরোধী শূন্য হয়ে পড়ল। এ দিন অবশ্য চেষ্টা করেও অনাদিবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

সামনেই বিধানসভা ভোট। জঙ্গলমহলে নিজেদের সংগঠন ফের নতুন করে তৈরির জন্য সিপিএম নেতৃত্ব এখন থেকেই কোমর বেঁধে নামার তোড়জোড় শুরু করেছে। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সদস্যের দলবদল সিপিএমের কাছে বড় ধাক্কা বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত। যদিও সিপিএম নেতৃত্ব বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি খাতড়ার বাসিন্দা। তাঁর এলাকাতেই এই দলবদলে যথেষ্ট অস্বস্তিত্বে দলীয় নেতৃত্ব। এ দিন চেষ্টা করেও অজিতবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা বলা যায়নি। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা খাতড়া জোনাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক সুশীল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “টাকার লোভেই ওঁরা দলবদল করেছেন। নৈতিক আদর্শ থাকলে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পদ থেকে ওঁদের আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। লোভে পড়েই এটা করেছেন ওঁরা। তবে এতে দলের সংগঠনের বিশেষ ক্ষতি হবে না।”

বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরাতে সচেষ্ট হয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রের খবর, রাইপুর, সিমলাপাল, হিড়বাঁধ, খাতড়া ও রানিবাঁধ ব্লকে সিপিএম, বিজেপি ও ঝাড়খণ্ড পার্টির কিছু নেতা দলবদলের জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছেন। এই তালিকায় রাইপুরের এক দাপুটে সিপিএম নেতার নামও রয়েছে। শীঘ্রই তাঁরা তৃণমূলের যোগ দিতে পারেন বলে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Trinamool congress BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE