Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

তিন পুলিশের নামে মামলা আদালতেরই

আইনজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, ২৩ অগস্ট সাঁইথিয়ার ভ্রমরকোল পঞ্চায়েতের কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ জসিমউদ্দিন ও শেখ করিম ওরফে বাপন নামে দুই যুবককে আমোদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ওসি রণজিৎ বাউড়ি তুলে নিয়ে যান।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

দুই অভিযুক্তকে ‘অন্যায় ভাবে আটকে রাখা’ এবং পুলিশ লক-আপে তাদের ‘অত্যাচার’ করার অভিযোগ উঠেছিল জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় কড়া অবস্থান নিল বীরভূমের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালত। সাঁইথিয়া থানার ওসি, আমোদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ওসি এবং সাঁইথিয়া থানারই আর এক সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে মামলা করল আদালত। একই সঙ্গে গোটা ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপারের ভূমিকা ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত।

শুক্রবার জেলার মুখ্য বিচার বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী এ ব্যাপারে একটি নির্দেশে দিয়েছেন। আদালতের অর্ডারের কপি অনুযায়ী, ২৩ থেকে ২৬ অগস্ট— যে সময় অভিযুক্তেরা পুলিশ হেফাজতে ছিলেন, সেই সময়কার চন্দ্রপুর ও রামপুরহাট পুলিশ লক-আপের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ধৃতদের ‘ডিটেনশন রিপোর্ট’ আজ, সোমবার সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ পুলিশ সুপারকে দিয়েছেন সিজেএম।

পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ রবিবার বলেন, ‘‘বিচারক কী অর্ডার দিয়েছেন, এখনও জানি না। নির্দেশ হাতে পেলে বলতে পারব। তবে আইন আইনের পথেই চলবে।’’

আইনজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, ২৩ অগস্ট সাঁইথিয়ার ভ্রমরকোল পঞ্চায়েতের কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ জসিমউদ্দিন ও শেখ করিম ওরফে বাপন নামে দুই যুবককে আমোদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ওসি রণজিৎ বাউড়ি তুলে নিয়ে যান। তার পরেই ধৃতদের সাঁইথিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দুই যুবকের পরিবারের আইনজীবী

সুব্রত দে ও বসির আহমেদ জানান, কেন কী কারণে পুলিশ ওই দু’জনকে ধরেছে, সেটা জানতে ধৃতদের পরিবারের লোকেরা সাঁইথিয়া থানায় গেলে কিছু না জানিয়ে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। পরিবারের লোকেরা আরও দাবি, জসিমউদ্দিন ও করিমকে মারধর করার পাশাপাশি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। ওই দু’জনকে সাঁইথিয়া থানা থেকে মহম্মদবাজার, সেখান থেকে চন্দ্রপুর এবং শেষে রামপুরহাট

থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলেও পরিবারের অভিযোগ।

সুব্রতবাবুর দাবি, এ ভাবে বেশ কয়েক দিন ধরে জেলার বিভিন্ন থানায় ঘোরানো ও মারধর করায় পুলিশের বিরুদ্ধে ২৬ অগস্ট সিজেএমের এজলাসে মামলা দায়ের করেন ধৃতদের বাড়ির সদস্যেরা। অভিযোগে নজরে আসতেই ২৭ তারিখ ওই দুই যুবককে সিউড়ি আদালতে আনার নির্দেশ দেন বিচারক। অন্য দিকে, পুলিশ ২৭ তারিখ রামপুরহাট এসিজেএম আদালতে ধৃতদের হাজির করিয়ে দাবি করে, তাঁদের রামপুরহাট স্টেশন থেকে জাল নোট-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

২৮ তারিখ ধৃতদের সিজেএমের এজলাসে আনা হয়। ধৃতদের কাছে পুলিশি অত্যাচার ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ হন বিচারক। তাঁদের জবানবন্দি নেওয়া হয়। সিউড়ি জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক এসে ধৃতদের পরীক্ষা করে তাঁদের শরীরে আঘাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর পরেই শুরু হয় বিচারবিভাগীয় তদন্ত বা জুডিশিয়াল এনকোয়ারি। যে যে থানায় অভিযুক্তদের রাখা হয়েছিল, সেই সব থানার সিসি ফুটেজ ২৯ তারিখের মধ্যেই পুলিশের কাছ থেকে তলব করেন সিজেএম। চাওয়া হয় ডিটেনশন রিপোর্টও।

আইনজীবীরা জানান, ২৯ তারিখ পুলিশ আদালতকে জানায়, সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজার থানার সিসি ক্যামেরা খারাপ। চন্দ্রপুর ও রামপুরহাট থানারও কোনও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আদালতে দেওয়া হয়নি। কৌশিকী অমাবস্যায় ব্যস্ত থাকায় ডিটেনশন রিপোর্টও তৈরি হয়নি বলে দাবি করে জেলা পুলিশ। এতেই ক্ষুব্ধ হন বিচারক। পুলিশ হেফাজতে হিংসা কমাতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর যে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে, সেই নির্দেশ মানা হয়নি, তা উল্লেখ করে ৩০ তারিখের অর্ডারশিটে সিজেএমের পর্যবেক্ষণ, এটাই কোথাও অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার জায়গা তৈরি করেছে। তার পরেই জেলা পুলিশ সুপারকে ওই নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি সাঁইথিয়ার ওসি নীলোৎপল মিশ্র, এস-আই শামিম খান এবং আমোদপুর ফাঁড়ির রণজিৎ বাউড়ির বিরুদ্ধে লক-আপে নির্যাতন, অন্যায় ভাবে আটকে রাখা-সহ একাধিক ধারায় ওই তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালত।

পুলিশ আধিকারিকদের একাংশ আড়ালে দাবি করছেন, ধৃতেরা দাগি আসামি। তাঁদের বিরুদ্ধে জাল টাকার করবার, ভুয়ো প্রাচীন কয়েনের নাম করে লোক ঠকানোর অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু টাকা উদ্ধারও হয়েছে তাঁদের থেকে। আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে বলে ওই পুলিশ আধিকারিকদের অভিযোগ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy