করম পুজোয় খুদেরা। শুক্রবার রাতে বান্দোয়ানে। নিজস্ব চিত্র
ক্রমেই বাড়ছে আলুর দাম। সঙ্গী পেঁয়াজও। এ দিকে আনাজের দামও কম নেই। তার উপরে রয়েছে দফায় দফায় লকডাউন। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্তের হেঁশেলের বড় ভরসা আলু-পেঁয়াজের দাম চড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে দুই জেলার মানুষের মধ্যে। প্রশাসন কেন দাম নিয়ন্ত্রণে কড়া হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের চকবাজারে শুক্রবার ‘নাসিকের পেঁয়াজ’ ২৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছিল। ক্রেতাদের একাংশের দাবি, এক সপ্তাহ আগে এই পেঁয়াজেরই দাম ছিল ২৪ টাকা প্রতি কেজি। জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা প্রতি কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে যার দাম ছিল ২৮ টাকা প্রতি কেজি। আবার এ দিন পুরুলিয়ায় জ্যোতি আলুর দাম পড়েছে ৩২ টাকা প্রতি কেজি। ক্রেতাদের দাবি, এক সপ্তাহ আগেও জ্যোতি আলু ২৬-২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। পেঁয়াজের দাম অবশ্য কেজি প্রতি ২৪ টাকা।
পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা বাদল দে, রবীন মাহাতোদের প্রশ্ন, ‘‘টানা লকডাউনের সময়েও আলুর দাম ছিল কেজি ২০ টাকা। তখন যানবাহন কার্যত বন্ধই ছিল। এখন পরিস্থিতি প্রায় পুরোটাই স্বাভাবিক। তাহলে কেন কেজিতে ১০ টাকা দাম বাড়ল?”
পুরুলিয়া শহরের বড় পাইকারি ব্যবসায়ী অভিজিৎ সেনের মতে, আলুর দাম বাড়ার পিছনে রয়েছে ভিন্ রাজ্যগুলিতে হঠাৎ করে আলুর চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যাওয়া। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আনাজের উৎপাদন মার খাওয়ায় এ রাজ্যে আলুর চাহিদাও অনেকেখানি বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। আবার আদ্রা, রঘুনাথপুরের কিছু পাইকারি বিক্রেতার দাবি, পুরুলিয়াতে আলু আসে মূলত বাঁকুড়ার কোতুলপুর, বিষ্ণুপুরর থেকে। সেখান থেকে বেশি দামে আলু মেলায় এই অবস্থা। বাঁকুড়া জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্রি মার্কেটিং ডিরেক্টর আকবর আলি বলেন, ‘‘এ বার নাসিকেও পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে যথেষ্ট পরিমাণ আলু জেলায় রয়েছে। তাই আলুর দাম এত বাড়া উচিত নয়। নবান্নে এ নিয়ে বৈঠক রয়েছে।’’
পুরুলিয়া শহরের খুচরো আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা শেখ আলম, মহম্মদ শামিম, রঘুনাথপুরের অরূপ রজকেরা বলছেন, ‘‘এ দিন পুরুলিয়ায় ৪৭ কেজি বস্তার আলুর দাম ছিল ১,২৯০ টাকা। তার মধ্যে অন্তত তিন-চার কেজি আলু খারাপ থাকে। তা বিক্রি হয় না। তাই কেজিতে এক-দেড় টাকা লাভ রেখে আলু বিক্রি করছি। কিন্তু ক্রেতারা তা মানছেন না।’’
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কী কারণ? বিষ্ণুপুরের খুচরো বিক্রেতা শেখ আব্দুল মহিম, পার্থ সেনদের দাবি, ‘‘দেশি পেঁয়াজ ২০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে বেশির ভাগ নষ্ট হয়েছে। তাই জোগান নেই বললেই চলে।’’ পুরুলিয়ার পাইকারি বিক্রেতাদের একাংশের মতে, বিহার থেকেও পেঁয়াজ আসে। বন্যায় বিহারে পেঁয়াজের ফলন মার খেয়েছে বলেই দাম বাড়ছে।
পুরুলিয়ার বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী শেখর বসুর অভিযোগ, ‘‘আলু পেঁয়াজের দাম বাড়লেও বাড়তি টাকা কিন্তু পাচ্ছেন না চাষিরা। মুনাফা লুটছে মধ্যসত্ত্বভোগীরা। প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” একই দাবি করছেন বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা মঞ্জু কর্মকার, পাত্রসায়রের গৌতম দত্ত, ইন্দাসের প্রণবকুমার দাঁ-ও।
সূত্রের খবর, লকডাউন পর্বে পুরুলিয়া জেলা দুর্নীতি দমন শাখা ও কৃষি বিপণন দফতরকে নিয়ে কালোবাজারি রুখতে ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করেছিল প্রশাসন। এখন অবশ্য সেই ‘টাস্ক ফোর্স’ ততটা সক্রিয় নয় বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি।
পুরুলিয়া জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক অসিত বর বলেন, ‘‘আলু-পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়লেও কোথাও কালোবাজারির অভিযোগ নেই। আমাদের কর্মীরা বাজারে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy