বিষ্ণুপুর থানার সামনে। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’ চলছে। কাজ বন্ধ ইটভাটায়। এই পরিস্থিতিতেও শ্রমিকদের খোরাকির টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের এক ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ওই ইটভাটার ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা বিষ্ণুপুর থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। ইটভাটার মালিককে ডেকে পাঠায় পুলিশ। থানা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, দু'পক্ষকে বৈঠকে বসিয়ে বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। ইটভাটার মালিককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই সঙ্কটের সময়ে শ্রমিকদের দেখাশোনার দায়িত্ব তাঁকে নিতে হবে।
এ দিন সকালে থানায় আসেন বিষ্ণুপুরের গোপালপুর এলাকার ওই ইটভাটায় কর্মরত ১২টি পরিবারের প্রায় ৫০ শ্রমিক। তাঁরা সকলেই পুরুলিয়ার বাসিন্দা। কার্তিকের শেষে রঘুনাথপুর, পাড়া, আদ্রা, ঝালদা, বলরামপুর থেকে বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করতে আসেন বহু শ্রমিক। এ বছরেও এসেছিলেন। কিন্তু ‘লকডাউন’-এর জেরে বাড়ি ফিরতে পারেননি।
গোপালপুরের ওই ইটভাটার শ্রমিকদের অভিযোগ, থাকার জায়গা মিললেও, মিলছে না খোরাকির টাকা। প্রত্যেক শনিবার তাঁরা খোরাকির টাকা পান। চলতি সপ্তাহে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও গত সপ্তাহের খোরাকির টাকা তাঁরা পাননি। ললিত বাউরি নামে এক শ্রমিকের কথায়, “এখন কাজ বন্ধ। জমা টাকাও শেষ হওয়ার মুখে। খোরাকির টাকা না পেলে না খেয়ে মরতে হবে।” শিশুদের নিয়েই থানায় হাজির হয়েছিলেন কলাবতী বাউরি, অতিকা বাউরির মতো মহিলা শ্রমিকেরাও। তাঁদের দাবি, ‘‘হয় খোরাকির টাকা দেওয়া হোক, না হয় বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।" শীলা বাউরি নামে এক শ্রমিকের অভিযোগ, “মঙ্গলবার হয়ে গেলেও ইটভাটার ম্যানেজার খোরাকির ব্যবস্থা করেননি। আমরা বাড়ি যেতে চাই। আর যা-ই হোক না কেন, বাড়িতে না খেয়ে মরতে হবে না।”
শ্রমিকদের সব অভিযোগ উড়িয়ে ইটভাটার মালিক দুলাল ভট্টাচার্যের দাবি , “আমি সপ্তাহে ১২টি পরিবারের জন্য ১২ হাজার টাকা দিতে বলেছি ম্যানেজারকে। শুনেছি, ওঁরা আরও বেশি চান। ইটভাটা বন্ধ। তাই ওঁদের বুঝেশুনে খরচ করতে বলেছি।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘ম্যানেজার ওঁদের হয়ত বোঝাতে পারেননি। আমি থানায় গিয়ে মিটমাট করে নিয়েছি।”
বিষ্ণুপুর থানার আইসি শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, “টাকা-পয়সা নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে ইটভাটার শ্রমিকদের একটা ঝামেলা হয়। শ্রমিকেরা থানায় এসে মালিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান। ওই ইটভাটার মালিক ও ম্যানেজারকে ডেকে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলিয়ে সমাধান করা হয়। মালিকপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়, লকডাউন চলাকালীন খোরাকিতে কাটছাঁট করা যাবে না।" তাঁর বক্তব্য, ‘‘কোনও ইটভাটার মালিক তাঁর শ্রমিকদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা না করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসনের দাবি, বিষ্ণুপুরে একাধিক ইটভাটা থাকলেও, শ্রমিকদের কোনও অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি। ইটভাটার দু’টি সংগঠনের কোনটিতেই দুলালবাবু নেই বলে জানিয়েছেন দুই সংগঠনের কর্মকর্তারা। ‘মল্লভূম ইটভাটা সমিতি’র সম্পাদক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের সংগঠনের কোনও ইটভাটার শ্রমিকদের এই অবস্থা হয়নি। যে ইটভাটার কথা বলা হচ্ছে, তার মালিক আমাদের সংগঠনের মধ্যে নেই।”
‘বিষ্ণুপুর মহকুমা ইটভাটা মালিক সমিতি’র সম্পাদক বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাঁদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যে ইটভাটার কথা উঠছে, সেটি আমাদের সংগঠনভুক্ত নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy