Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

কখন আসবে ফোন, অপেক্ষায় ঢাকিরা

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মাটি কেটে সবে ফিরেছেন বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের রুইদাসপাড়ার পিন্টু রুইদাস। ঢাকি হিসাবে বেশ নামডাক  রয়েছে তাঁর।

চিন্তায় পিন্টু রুইদাস। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের রুইদাসপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

চিন্তায় পিন্টু রুইদাস। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের রুইদাসপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০২:১৬
Share: Save:

অন্য বছর অক্ষয় তৃতীয়ার পরেই গ্রামে খুশির হাওয়া বয়। ঢাকের দুই কাঠিতে বোল তোলেন ঢাকিরা। ফোন আসা শুরু হয় কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে ঢাক বাজানোর বরাত দেন পুজো উদ্যোক্তারা। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ঢাকিদের গ্রাম রুইদাসপাড়ায় এ বারের চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টো। ফোনের অপেক্ষায় বসে আছেন কম-বেশি ৬০ জন ঢাকি। কিন্তু আসছে না ফোন। সব হিসাব গুলিয়ে দিয়েছে করোনা। এ বার দুর্গাপুজোয় আদৌ তাঁদের কেউ ভাড়া করবেন কি না, তা জানেন না ঢাকিরা।

সোমবারের দুপুর। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মাটি কেটে সবে ফিরেছেন বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের রুইদাসপাড়ার পিন্টু রুইদাস। ঢাকি হিসাবে বেশ নামডাক রয়েছে তাঁর। দাওয়ায় বসে ঢাকের কাঠি দু’টোর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘এ বার যা অবস্থা, তাতে দুর্গাপুজোয় আদৌ ঢাকে কাঠি পড়বে কি না, সেটাই বুঝতে পারছি না। মন একদম ভাল নেই। জানি না, আবার কবে ঢাকে বোল উঠবে।’’ তিনি জানান, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকেই তাঁদের কাছে ফোন আসা শুরু হয়। চন্দননগর, টালিগঞ্জ-সহ কলকাতার নামকরা সব পুজো কমিটি তাঁদের ভাড়া করে। ‘‘এ বার এখনও কোনও ফোন আসেনি,’’ আক্ষেপ পিন্টুবাবুর।

সব ঢাকিই যে ফোনে বরাত পান তা নয়। তবে পুজোর মরসুমে কেউই বসে থাকেন না। বরাত পান না যাঁরা, তাঁরা পঞ্চমীর দিন বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছে যান। সেখানেই তাঁদের ভাড়া করে নেয় কোনও না কোনও পুজো কমিটি। ‘‘কিন্তু এ বার কি তা হবে?’’ প্রশ্নটা যেন নিজেকেই করলেন ঢাকি প্রশান্ত রুইদাস।

ঢাকিরা জানান, দুর্গাপুজো, কালীপুজো আর জগদ্ধাত্রী পুজোর রোজগারে সারা বছর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা আর জামা-কাপড়ের খরচ উঠে আসে। পুজোর সময় ঢাকিরা দিনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা রোজগার করেন। উপরি হিসেবে পান, অনেক জামাকাপড়, যা দিয়ে পরিবারের গোটা বছর চলে যায়। দুর্গাপুজো থেকে কার্তিক পুজো পর্যন্ত ১২-১৫ হাজার টাকা আয় করেন তাঁরা। গাজনের সময়ও অল্প কিছু রোজগার হয়। বছরের বাকি সময় দিনমজুরি করেই সংসার চালান তাঁরা।

এ বার কি আদৌ ঢাক বাজিয়ে রোজগার কিছু হবে? করোনা-সঙ্কট যত গভীর হচ্ছে, প্রশ্নটাও তত প্রাসঙ্গিক হচ্ছে ঢাকিপাড়ায়। প্রশান্ত জানান, করোনা-পরিস্থিতির জেরে এ বার গোটা গাজনের মরসুমে নয়া পয়সাও ঘরে আসেনি। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন গ্রামে গাজনে বাজাতে যেতাম। শিবের গাজন, ভগবতীর গাজন, ধর্মরাজের গাজন, সব চলে গেল। বাড়িতে বসেই কেটে গেল গোটা মরসুম। দু’টো পয়সার মুখ দেখলাম না। টানাটানির সংসারে পুজো আর গাজনই ভরসা। কবে আবার সব স্বাভাবিক হবে কে জানে!’’

ঢাকিদের একাংশ জানাচ্ছেন, একশো দিনের কাজ শুরু হয়েছে বলে তাঁদের সংসার চলছে। ঢাক বাজিয়ে পয়সা রোজগারের আশা এ বার কম।

গ্রামের আর এক ঢাকি সুকুমার রুইদাস বলেন, ‘‘ঢাক বাজানো একটা নেশা। শুধু পয়সা রোজগারই সব নয়। জৈষ্ঠ্যে গাজন শেষ হয়। আষাঢ় এলেই প্রতি সন্ধ্যায় সবাই এক জায়গায় জড়ো হন। তালিম দেওয়া হয় নবীনদের। নতুন বোল তৈরি হয় পুজোর কথা ভেবে। এ বার কী হবে জানি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Durga Puja 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy