Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ঝড়ে উড়ে গেল ছাউনি

শিলার আঘাতে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি ভেঙে গিয়েছে পাত্রসায়রের ময়রাপুকুর, ধগড়িয়া, নারায়ণপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায়।

ঝড়ে ভেঙেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। বান্দোয়ানের মাংলায়। পাত্রসায়রের ময়রাপুকুরে শিলায় ভেঙেছে ছাউনি। নিজস্ব চিত্র

ঝড়ে ভেঙেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। বান্দোয়ানের মাংলায়। পাত্রসায়রের ময়রাপুকুরে শিলায় ভেঙেছে ছাউনি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫৪
Share: Save:

শিলা বৃষ্টিতে ভাঙল ঘরের চালা। বাজ পড়ে মৃত্যু হল এক চাষির। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকল অনেক এলাকা। সোমবারের বৃষ্টিতে পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া—দুই জেলার অনেক এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।

সোমবার বিকেলে নিজের আনাজের খেতের কাছে সদ্য তৈরি আবাস যোজনার বাড়ির বারান্দায় বসেছিলেন বাঁকুড়ার বড়জোড়ার মানগ্রামের হারু বাগদি (৫০)। হঠাৎ সেখানে বাজ পড়ে। মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন হারুবাবু। ঘরের ভিতরে থাকা তাঁর স্ত্রী ও এক ছেলে জ্ঞান হারান। শব্দ শুনে এলাকার লোকজন ছুটে আসেন। তাঁদের উদ্ধার করে পড়শিরা বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে হারুবাবুকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার হারুবাবুর দেহ ময়না-তদন্তের জন্য বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর তিন পুত্র ও স্ত্রী বর্তমান। বড়জোড়ার সিপিএম নেতা সুজয় চৌধুরী জানান, হারুবাবু তাঁদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন।

শিলার আঘাতে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি ভেঙে গিয়েছে পাত্রসায়রের ময়রাপুকুর, ধগড়িয়া, নারায়ণপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায়। ময়রাপুকুরের শেখ আসগর জানান, সন্ধ্যে ৬টা থেকে দেড় ঘণ্টায় বার বার শিলা বৃষ্টি নামে। ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে অ্যাসবেস্টসের চালা।

এলাকার সুনীল লোহার-সহ তিন-চারটি পরিবার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। শেখ ইদ্রিস, শেখ আলমগির জানান, তাংদের বাড়িতে সেই সময়ে রান্না হচ্ছিল। শিলার আঘাতে চালা ভেঙে কড়াইয়ে পড়ে। বাড়ির মহিলা, শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে দেন। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রহমত বলেন, ‘‘কোনও রকমে ঘরের এক কোণে মাথায় থালা চাপা দিয়ে সবাই বসেছিলাম।’’

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, শিলাবৃষ্টিতে ২৯৬টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১,১৭৬টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ১৭টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সংগ্রহ করে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

পুরুলিয়া জেলার মানবাজার মহকুমা এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। সেখানে ঝড় শুরু হয় মঙ্গলবার ভোর ৩টে নাগাদ। বান্দোয়ানের ধাদকা গ্রামের কানাই রজক বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে সদ্য বাড়ি নির্মাণ শেষ করেছেন। ইটের গাঁথনিতে এখনও প্লাস্টার করে উঠতে পারেননি। তিনি জানাচ্ছেন, ঝড়ে বাড়ির অ্যাসবেস্টসের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে ঘরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ তুমুল বেগে ঝড় শুরু হয়। কিছু সময় পরেই ঘরের ছাউনি উড়ে গেল!’’ রাতটা স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পুরনো ভেঙে পড়া বাড়িতে কাটিয়ে সকালে ত্রাণ নিতে ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন ত্রিপলের খোঁজে। ছাউনি উড়েছে বান্দোয়ানের কুচিয়া পঞ্চায়েতের মৃগীচামি গ্রামের বাসিন্দা ত্রিলোচন তন্তুবায়েরও। টিনের চালা উড়েছে বরাবাজারের হেড়বনা গ্রামের কয়েকটি বাড়ির।

ঝড়ের তীব্রতায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে বান্দোয়ানের মাংলা গ্রামে। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের পাশে বিদ্যুতের তারে বড় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে বান্দোয়ানের গঙ্গামান্না গ্রামেও। বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে পড়ায় বান্দোয়ানের চিরুডি, কুইলাপাল, কুচিয়া রাত থেকেই অন্ধকারে ডুবে যায়। মঙ্গলবার বেলার দিকেও পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

এসডিও (মানবাজার) বিষ্ণুপ্রভ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল-সহ অন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ দেওয়া হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy