সমাজ মাধ্যমে ঘুরছে এমনই ছবি। ছবি সৌজন্য সোশ্যাল মিডিয়া।
কোভিড আক্রান্ত ভাই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, কিছুতেই জোগাড় করতে পারছিলেন না সিউড়ি সমন্বয় পল্লির বাসিন্দা তথা স্কুল শিক্ষক মহেন্দ্রনাথ পাল। নম্বর জোগাড় করে তিনি রেড ভলান্টিয়ার্সের এক সদস্যকে ফোন করেছিলেন। শুধু অক্সিজেন জোগান দেওয়াই নয়, মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তির জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন রেড ভলান্টিয়ার্সের সদস্যরা।
দিন কয়েক আগে প্রবল সমস্যায় পড়েছিলেন সিউড়ির বধূ অপর্ণা অধিকারী। কারণ, তিনি শুধু নিজে নন, কোভিড আক্রান্ত ছিলেন ওঁর বাবা-মাও। প্রয়োজনীয় ওষুধ আনার কেউ ছিল না। সামাজিক মাধ্যম থেকে রেড ভলান্টিয়ার্সের নম্বর জোগাড় করে ফোন করতেই মুশকিল আসান।
মাঝ রাতে কোভিড আক্রান্তদের জন্য অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া, অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে হাসপাতালে ভর্তি করা, আক্রান্তদের পরিবারের জন্য ওষুধ পথ্য পৌঁছে থেকে অক্সিমিটার দিয়ে আক্রান্তের অক্সিজেন মাপা থেকে কোভিডে মৃতের ডেথ সার্টিফিকেট— জোগাড় করে দেওয়া। গত এক মাস ধরে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভরসা জোগাতে এ ভাবেই পথে ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’। শুধু সিউড়ি শহর নয়, গোটা জেলা জুড়েই এমন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন সিপিএমের মূলত যুব এবং ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা।
ভোটের ময়দানে মুখ থুবড়ে পড়ার পরেও মানুষের পাশে থেকে বাহবা কুড়িয়েছেন বামেদের তরুণ ব্রিগেডের সদস্য শতদল চট্টোপাধ্যায়, রূদ্রদেব বর্মণ, শৌভিক দাস, আনাস আখতার, উন্মেষা গড়াই, কুঠুরি দাসের মতো বহু সদস্য। অপর্ণা বলছেন, ‘‘কী যে উপকার করেছন ওঁরা, ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কে যে ওষুধ এনে দিতে।’’ অন্য দিকে, মহেন্দ্রনাথ পাল বলছেন, ‘‘যে ভাবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ওঁরা সকলের জন্য ছুটছেন তাতে ওঁদের স্যালুট। ব্যক্তিগত ভাবে ভীষণ ভাবে উপকৃত হয়েছি।’’
অভিজ্ঞতা আলাদা কিছু নয় বধূ সায়নী দে-রও। আদতে সিউড়ির মেয়ে সায়নী বিবাহ সূত্রে দুর্গাপুরে থাকেন। দিন কয়েক আগে তিনি খবর পান নিউমুনিয়ায় ভুগতে থাকা তাঁর আত্মীয় সিউড়ির বাড়িতে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছেন। দুর্গাপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে অ্যাম্বুল্যাল্সে তোলার লোক নেই। স্মরণ নিয়েছিলেন রেড ভলান্টিয়ার্সের। ১০ মিনিটে হাজির হয়ে দায়িত্ব পালন করেন রেড ভলান্টিয়ার্সের সদস্যরা।
শতদল, রুদ্রদেবরা বলছেন, ‘‘এক মাস ধরে সর্বতো ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে গিয়েছি। গোটা জেলায় আমাদের এমন ২৫০ জন সদস্য বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথম দিকে নিজেরা পকেটের টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন কাজ দেখে আমাদের সংগঠনকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে এগিয়ে আসছেন বহু মানুষ।’’ রেড ভলান্টিয়ার্সের মহিলা সদস্য উন্মেষা গড়াই বলছেন, ‘‘সামাজিক মাধ্যমে আমাদের নম্বর ছড়ানো। জেলা কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকি বিদেশ থেকেও ফোন এসেছে সাহায্য চেয়ে।’’
কোভিড আক্রান্ত ও তাঁদের পরিজনদের সাহায্য করতে গিয়ে নিজেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। এমনই এক জন আনাস আখতার। ছ’দিন ধরে কোভিড আক্রান্ত। আনাস জানাচ্ছেন, ইদের দিনে সিউড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ ছিল। কিন্ত, ফোন আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় আক্রান্তের। তারপর থেকে ডেথ সার্টিফিটেট বের করা পর্যন্ত পরিবাবের পাশে ছিলাম আমরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy