ত্রাণ নিয়ে কন্টেনমেন্ট জ়োনে বিডিও সুদেষ্ণা দে মৈত্র। নিজস্ব চিত্র
এত দিন করোনা আক্রান্তদের পাশে থাকার কাজ করেছেন। সংক্রমিত হওয়ার পরে বুঝেছিলেন, করোনা আক্রান্তদের মানসিক যন্ত্রণার কথা। তাই সুস্থ হয়েই বিডিও (কাশীপুর) সুদেষ্ণা দে মৈত্র তৈরি করেছেন ‘কোভিড কাউন্সেলিং ক্লাব’। সঙ্গে নিয়েছেন করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্লকের কর্মীদের। আক্রান্তদের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে তাঁরা এখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানসিক জোর ধরে রাখা কতটা জরুরি, তা বোঝাচ্ছেন।
বছর চৌত্রিশের সুদেষ্ণাদেবীর কথায়, ‘‘করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে বুঝেছিলাম, ওই সময়ে মানুষ বড় একা হয়ে পড়েন। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে, আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করা যায় না। সে মানসিক যন্ত্রণাই আখেরে দুর্বল করে তোলে। করোনার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে মানসিক ভাবেও সবল থাকা অত্যন্ত দরকার। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কাউন্সেলিং ক্লাব গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
লকডাউন শুরুর পর থেকেই প্রশাসনের অন্য আধিকারিকদের মতো সুদেষ্ণাদেবীরও কাজের চাপ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। মার্চ-এপ্রিল মাসে যখন করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে, সেই সময়ে ট্রেন থেকে আদ্রা স্টেশনে নামা পরিযায়ী শ্রমিকদের জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর কাজ সামলাতে হয়েছে তাঁকে।
প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি, করোনা ঠেকানোর কাজও সমান তালে করে যেতে হচ্ছে প্রশাসনের আধিকারিকদের। কখনও সখনও আক্রান্তদের কাছাকাছিও যেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া জেলার কয়েকজন বিডিও, জয়েন্ট বিডিও থেকে ব্লকের কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর রিপোর্ট আসে সুদেষ্ণাদেবী করোনায় আক্রান্ত।
ব্লক অফিসের সরকারি আবাসন থেকে চলে যান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেফ হোমে। সেখানে বেশি দিন থাকেননি। হাওড়ার রামরাজাতলার বাসিন্দা সুদেষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘আবাসনে আমার সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়ে আর ডায়াবিটিসে আক্রান্ত বৃদ্ধা মা থাকেন। আমি অন্যত্র থাকলে তাদের দেখভাল করা সম্ভব হত না। ক্ষতি হবে ব্লকের প্রশাসনিক কাজকর্মেও। তাই আবাসনে ফিরি।’’
কিন্তু ফিরেও স্বস্তি পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আবাসনের দোতলার একটি ঘরে নিভৃতবাসে দিন দশেক ছিলাম। খুব কঠিন সময় গিয়েছে। মেয়ে ডাকলেও তাকে কাছে টানতে পারতাম না। দোতলা থেকে নীচে ঝুঁকে মেয়ের সঙ্গে গল্প করতাম।’’
বর্তমানে পুরুলিয়া জেলার মধ্যে ব্লকের নিরিখে বেশি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কাশীপুরে। ফলে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা এখানে বেশি চ্যালেঞ্জের। তাই দুর্বলতা কিছুটা কাটতেই বেরিয়ে পড়েছেন সুদেষ্ণাদেবী। ‘কোভিড কাউন্সেলিং ক্লাব’ গড়ে করোনা-মুক্ত সহকর্মীদের নিয়ে পালা করে যাচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার সংক্রমিতদের কাছে। সুদেষ্ণাদেবী জানাচ্ছেন, প্রশাসন যে করোনা আক্রান্ত ও তাঁদের পরিবারের পাশে সর্বতো ভাবে রয়েছে, এই বার্তা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ওই পরিবারগুলিকে শুকনো খাবার, পানীয় জল পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা।
ওই ক্লাবে রয়েছেন ব্লকের করোনা-মুক্ত আধিকারিক অরিন্দম ঘোষাল, আকাশ সিংহেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘সুস্থ হয়ে ফেরার পরে বিডিও আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর সঙ্গে এখন আক্রান্তদের কাছে গিয়ে নিজেদের করোনা জয়ের কথা বলে সাহস জোগাতে ভাল লাগছে।’’ সুদেষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘কন্টেনমেন্ট জ়োনে গিয়ে করোনা আক্রান্তদের শুধু সাহায্য করাই নয়, নিজে যে সংক্রমিত হয়েছিলাম এবং করোনা জয় করেছি— সেই অভিজ্ঞতার কথা ওদের শুনিয়ে মানসিক ভাবে উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করছি আমরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy